• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

ব্যাটারি তৈরিতে চিনাবাদামের খোসা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২২, ১০:১৫ এএম

ব্যাটারি তৈরিতে চিনাবাদামের খোসা

সিটি নিউজ ডেস্ক

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগালে এক প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ব্যাটারি তৈরির উদ্যোগ চলছে। পরিবেশবান্ধব জ্বালানির বিপুল চাহিদা মেটাতে সারা বিশ্বে ব্যাটারির চাহিদা বেড়েই চলেছে। তবে প্রচলিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি নিয়ে রয়েছে তুমুল বিতর্ক।

পদার্থবিদ বালা ডিয়প এনগম বলেন, ‘‍‍`এই ধরনের বায়োমাসকে উন্নত উপাদানে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া গবেষণার নতুন এক ক্ষেত্র। গত দুই-তিন বছর ধরে বিজ্ঞানীরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। আফ্রিকায় আমরাই প্রথম এমন কাজ করছি।‍‍`

সেনেগালে চিনাবাদামের খোসার অভাব নেই। চিনাবাদামই সে দেশের চারটি প্রধান রফতানিযোগ্য পণ্যের একটি। গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৬০% মানুষ পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় এই খাদ্যপণ্য চাষ করে। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে চলতি বছর ফসলের পরিমাণ কমে ১৬ লাখ টন হতে যাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত খোসা ফেলা দেওয়া অথবা পুড়িয়ে ফেলা হতো। প্রোফেসর এনগমের মতে, বর্জ্য হিসেবে সেটি একেবারে খাঁটি।

দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বালা ডিয়প এনগম ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে বায়োমাস জ্বালানিতে রূপান্তর করার বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। সেটি একটি জটিল ইলেকট্রোকেমিক্যাল প্রক্রিয়া। সবার আগে খোসাগুলো গুঁড়া করে পানির সঙ্গে মেশানো হয়।

বালা ডিয়প এনগম বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‍‍`গোটা মিশ্রণটি নির্দিষ্ট সময় ধরে এভাবে ভেজানো হয়। তবে সেটাই অন্যতম জরুরি বিষয় হওয়ায় আপনাকে সময়কাল সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারবো না। তারপর সেই মিশ্রণ ছেঁকে এই তরল পাই। আরো কিছু উপাদান যোগ করলে ব্যাটারির পজিটিভ চার্জ সৃষ্টি করতে পারি।‍‍`

গবেষকরা চিনাবাদামের খোসার মধ্যে উচ্চ মাত্রার কার্বন কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে নির্যাস হিসেবে জিংক অক্সাইড বের করে নেন। সূর্যের আলোর বিকিরণের মুখে উচ্চ তাপমাত্রায় সেই তরল থেকে জিংক অক্সাইড উবে গিয়ে ধাতব দস্তায় পরিণত হয়। সেটি শক্তি ধারণ করতে পারে।

পরিবেশবান্ধব এসব ব্যাটারির সম্ভাবনা প্রচলিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো হলেও সেটির খারাপ দিকগুলো এর মধ্যে নেই। কারণ, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মধ্যে কোবাল্টের মতো উপাদান রয়েছে। আফ্রিকার কংগোয় বিপজ্জনক খনিতে প্রায়ই শিশুদের দিয়ে সেই ধাতু উত্তোলন করা হয়।

এমন পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি সেনেগালে চালু করা সম্ভব হলে খুবই সুবিধা হবে। কারণ প্রায় ৪০% বাড়িঘর সরকারের পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত নয়। সেখানে ব্যাটারি বা সৌরশক্তির ওপর নির্ভর করতে হয়। অনেকে কোনো রকম জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পায় না।

গ্লোবাল গ্রিন গ্রোথ ইনিশিয়েটিভের পরিবেশ বিশ্লেষক মোদু ফাল বলেন, ‍‍`আমার মতে, সেই ঘাটতি পূরণ করতে হলে বায়োমাসের মতো জ্বালানির উৎসের আরো বিকাশের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক উন্নতির অবকাশ রয়েছে। জ্বালানি হিসেবে বায়োমাস আজকের সমস্যার সমাধান হতে পারে, কারণ চিনাবাদাম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে সেনেগালে চিনাবাদামের খোসার বিশাল জোগান রয়েছে। বিশাল পরিমাণ বায়োমাসের দৌলতে সেনেগালে কাসামঁসের মতো অঞ্চলে জ্বালানির এই উৎস বর্তমান ঘাটতি অনেকটাই কাটাতে পারবে।‍‍`

 

এসএএস

আর্কাইভ