• ঢাকা শুক্রবার
    ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

বাংলাদেশের ফেরার দরজায় খিল মেরে ভারতকে জেতালেন গিল

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম

বাংলাদেশের ফেরার দরজায় খিল মেরে ভারতকে জেতালেন গিল

ক্রীড়া ডেস্ক

লক্ষ্য যখন ২২৯, পিচ যখন অনেকটাই ব্যাটিং সহায়ক, ভারতের মতো ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটা – তা নিয়ে ইনিংস বিরতিতেই সম্ভবত প্রশ্ন তেমন ছিল না। মাঝের ওভারগুলোতে বাংলাদেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আর দ্রুত তিন উইকেট নিয়ে একটা প্রশ্ন দাঁড় করাতে পেরেছে বটে, কিন্তু ওই পর্যন্তই।

দুবাইয়ে আজ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জঘন্য শুরুর পরও তাওহীদ হৃদয়ের সেঞ্চুরি আর জাকের আলীর ফিফটিতে বাংলাদেশ ২২৮ রানের একটা মান বাঁচানো স্কোর দাঁড় করাতে পেরেছিল। কিন্তু সেটা হার বাঁচানোর মতো আর হতে পারল না। কদিন ধরে প্রায় প্রতি ম্যাচেই খিলখিল করে হাসতে থাকা শুবমান গিলের ব্যাট আজ দেখেছে ওয়ানডেতে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, তাঁর ৯ চার ২ ছক্কায় ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভারত হেসেখেলেই জিতে গেছে ২১ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে।

সেঞ্চুরি করায় গিলই ভারতের সব প্রশংসার কেন্দ্রে থাকবেন, তবে আজ ভারতের জয়ের পথে আর অন্য কোনো ব্যাপারকে যদি সামনে আনতে হয়, সেটি অধিনায়ক রোহিত শর্মার ঝোড়ো শুরু। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাই যেখানে ছিল দুঃস্বপ্নের মতো, ভারতের ইনিংসের শুরুটাই তাদের গলি-ঘুপচি পেরিয়ে মহাসড়কে তুলে দেওয়ার কাজটা করেছে। মাঝের ওভারগুলোতে ফিল্ডাররা যখন ছড়িয়ে পড়েছেন, বল যখন কিছুটা পুরোনো হয়ে এসেছে, তখন যেভাবে ভারতের অনায়াস রানের গতিতে বাঁধ দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা, সেটি ভারতের উড়ন্ত শুরুর গুরুত্বটা আরও বাড়িয়ে দেয়।

প্রথম পাওয়ার প্লে-র এক বল বাকি থাকার সময়ে রোহিত শর্মা (৩৬ বলে ৪১) আউট হয়েছেন, তবে ততক্ষণেই ভারতের রান হয়ে গেছে ৬৯! লক্ষ্য যখন ২৩০-এর নিচে, এমন শুরুর পর ভারতকে আর ঠিক অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি। বা রান নিতে মাঝের ওভারগুলোতে – বিশেষ করে ২০ থেকে ৩০তম ওভারের সময়ে – অস্বস্তিতে পড়লেও সেটা আর মাথাব্যথা বা প্যানিকের কারণ হয়ে ওঠেনি ভারতের জন্য।

রোহিতের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে সঙ্গী শুবমান গিল তো ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছন্দেই আছেন। একপ্রান্তে ওপেনিংয়ে রোহিত যখন উড়ছেন, গিল শুধু অন্যপ্রান্ত থেকে তাঁকে উইকেট টিকিয়ে রাখার নিশ্চয়তা দিয়ে গেছেন। রোহিত আউট হওয়ার সময়ে ২৩ বলে ২৬ রানে ব্যাট করতে থাকা গিল শেষ পর্যন্ত ভারতকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন।

তার আগে অন্য প্রান্তে ভিরাট কোহলিকে আরেকবার লেগ স্পিনে পরাস্ত হতে দেখলেন। ইংল্যান্ড সিরিজে আদিল রশিদের বোলিংয়ে ভোগা কোহলি আজ রিশাদের লেগ স্পিনে ধরা পড়ার আগে ৩৮ বলে ২২ রান করতে পেরেছেন। শ্রেয়াস আইয়ার শুরুতেই একবার রানআউট থেকে বেঁচে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ১৭ বলে ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি। পাঁচে উন্নতি পাওয়া আকশার প্যাটেলও ৮ রান করেই ক্ষান্ত হয়েছেন। ২০ থেকে ৩১তম ওভারের মধ্যে এই তিন উইকেট হারিয়ে দ্রুতই ১১২/১ থেকে ১৪৪/৪ হয়ে যায় ভারত, বাংলাদেশ তখন ফিরে আসার আশা দেখছে।

কিন্তু দুটি বাধায় তা হওয়ার সম্ভাবনাও আর ডানা মেলতে পারল না। একদিকে ছয়ে নামা লোকেশ রাহুলের ক্যাচ মিস করে নিজে ব্যাটিংয়ের সময় দুবার জীবন পাওয়ার ‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ’ করলেন জাকের আলী – রাহুলের রান তখন ছিল ৯, ভারতের ১৭২। আর গিলের ব্যাট তো ইনিংসের শুরু থেকেই খিলখিল করে হেসেছে।

ফিফটিতে পৌঁছাতে সময় লেগেছে তাঁর, ৬৯ বলে পাওয়া ফিফটিটা গিলের এ পর্যন্ত ওয়ানডে ক্যারিয়ারেরই সবচেয়ে ধীরগতির। তবে একে লক্ষ্য যখন এত অল্প রানের, তারওপর রোহিত যেমন ঝোড়ো শুরুর গল্প লিখে দিয়েছেন, তাতে গিলের আর ইনিংসের গতি নিয়ে ভাবার দরকারই পড়েনি।

মাঝে ভিরাট-আকশারদের বিদায়ে টানা তিন উইকেট পড়ায় একটু দেখেশুনে খেলতে হতো, সেটা রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে শেষ পর্যন্ত ৮৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বেশ ভালোভাবেই করেছেন গিল। ৪৩তম ওভারে ভারত দেখতে দেখতে ২০০ পেরিয়ে গেল, কিছুক্ষণ পর গিলের সেঞ্চুরি হয়ে গেল ১২৫ বলে। তখন আর বাকি থাকে কী? শুধু ভারত কত বল আর উইকেট হাতে রেখে জেতে, সেটিই দেখার অপেক্ষা ছিল আর কী! লাইন-লেংথ নিয়ে পুরোটা ইনিংসই ভুগতে থাকা তানজিম হাসান সাকিবের করা ৪৭তম ওভারের তৃতীয় বলটা গ্যালারিতে পাঠিয়ে রাহুল (৪৭ বলে ৪১) সব উত্তর মিলিয়ে দিলেন।  
 

আর্কাইভ