ক্রীড়া ডেস্ক
পেনাল্টি শ্যুট আউটে ৩-২ গোলে স্বাগতিক ইংল্যান্ড কে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত ইউরোর শিরোপা জয় ইটালির।
কোপার আমেজ না কাটতেই মাঠে গড়ায় আরেক মহারণ। ইউরোর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মাঠে নামে দুই পরাশক্তি ইটালি ও ইংল্যান্ড। ৫৫ বছরের খরা কাটিয়ে শিরোপা জয়ের দারপ্রান্তে থাকা ইংল্যান্ড । অন্যদিকে দ্বিতীয়বারের মত ইউরো শিরোপা নিজেদের করে নিতে চায় ইটালি।
বাংলাদেশ সময় সোমবার ( ১২ জুলাই) রাত একটায় লন্ডনের ওয়েম্বলিতে মাঠে গড়ায় এই মহারণ।
ম্যাচের দুই মিনিটের মাথায় ইংলিশ মিডফিল্ডার কিয়েরান ট্রিপিয়ার বাড়ানো বলে গোল আদায় করে নেন আরেক মিডফিল্ডার লিউক শ । এতে করে ম্যাচে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে স্বাগতিকরা।
ম্যাচে পিছিয়ে যাওয়া ইটালি গোল পরিশোধ করে ম্যাচে সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে । অপরদিকে ব্যবধান বাড়াতে থেমে নেই স্বাগতিকরা। আক্রমণ - প্রতি আক্রমণে চলতে থাকে ম্যাচ।
ম্যাচের ৩০ মিনিটের মধ্যেই ডেঞ্জারাস অ্যাটাক হয়েছে ২০টি। যেখানে স্বাগতিক ইংল্যান্ড করেছে ১২টি আর ইটালির ৮টি।
৩৪ মিনিটে সমতা ফেরানোর লক্ষ্যে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ইংলিশ গোল পোস্টে বল বাড়ান চিয়েসা। গোল পাওয়ার সুযোগ থাকলেও অল্পের জন্য মিস হয়ে যায় তা।
প্রতি আক্রমণে ইংল্যান্ড সুযোগ পায় ব্যবধ্যান বাড়ানোর। কিন্তু হার মানতে হয় ইটালির রক্ষণভাগের নিকট।
ম্যাচের ৪০ মিনিটে আবারো আক্রমণে যায় ইটালি। কিন্তু এবারো ইংলিশ রক্ষণভাগের অবৈধ বাধায় থামতে হয় । তবে ফ্রি কিক পেয়েও গোল আদায় করতে পারেনি ভেরাত্তিরা।
প্রথমার্ধের শেষের দিকে ইংলিশ গোলবারের দিকেই বল গড়ায় বেশি। বল দখলে রেখে বারবারই আক্রমণে যেতে চেয়েছে ইটালি।
তবে ইংল্যান্ডও থেমে ছিল না। বল দখলে আসলেই প্রতি আক্রমণে গোল ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্ঠা অব্যাহত থাকে।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে আবারো আক্রমনে যায় ইটালি। কিন্তু ভেদ করতে পারেনি তখনও ইংলিশ রক্ষণদেয়াল।
খেলায় যুক্ত হয় অতিরিক্ত চার মিনিট। সে সময়েও গোল পেতে মরিয়া ইটালি। অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটের মাথায় পুনরায় ইংলিশ শিবিরে হানা দেয়ার চেষ্টা চালায়। তখনও ব্যর্থ হয় ইটালি।
এর মাঝেই বেজে উঠে রেপারির বাঁশি। ফলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে ইংল্যান্ড।
বিরতির পর শিরোপার লড়াইয়ে আবারো মাঠে নামে দুই দল।
এগিয়ে থেকেই ম্যাচ শেষ করার লক্ষ্য থাকে ইংলিশদের। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েই খেলোয়ারদের মাঠে পাঠান ইতালির কোচ মানচিনি।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার পে থেকেই আক্রমণে যেতে থাকে ইতালি। ৫০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় ইতালি। কিন্তু ফরোয়ার্ড ইনসিনগনের নেয়া ফ্রি কিকেও গোলের দেখা মিলে না ইতালির।
ম্যাচের ৫৪ মিনিটে ইতালিয়ান শিবিরে প্রথম পরিবর্তন আনে কোচ মানচিনি। ইমোবিলের পরিবর্তে মাঠে নামেন বেরারদি।
আক্রমণ - প্রতি আক্রমণে জমে উঠে ম্যাচ । তবে বলের দখলটা থাকে ইতালির।
৫৬ মিনিটে আবারো আক্রমণে যায় ইতালি। গোল বারের দিকে বাড়ানো ইনসিগনের বল থামিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড।
উত্তেজনাকর ম্যাচটিতে প্রায় প্রতিটি মিনিটেই আক্রমণ প্রতি আক্রমণ দেখা যায়।
৬১ মিনিটে আবারো আক্রমণে যায় ইতালি। কিন্তু এবারও রোম ফরওয়ার্ডের শট ঠেকিয়ে দেন পিকেফার্ড। এ যাত্রায় রক্ষা পায় ইংলিশরা।
প্রতি আক্রমণে ইতালি শিবিরে কর্ণায় আদায় করে নেয় ইংল্যান্ড । তবে ব্যবধান বাড়েনি তাতে।
খেলা চলতে থাকে আক্রমণ - প্রতি আক্রমণে। ৬৬ মিনিটের মাথায় কর্ণার থেকে গোলের সুযোগ পায় ইটালি। তবে এবার সুযোগ মিস করেনি ইতালি। ফরোয়ার্ড বোনুচ্চি ইংলিশ জালে বল গড়িয়ে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনেন।
এরপর দুদলের মাঝেই চলতে থাকে লিড নেয়ার লড়াই। আক্রমণ প্রতি আক্রমণে ম্যাচ গড়াতে থাকলেও দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় না কোনো দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শেষ সময়টাতেও মাঠে বল দখলে রাখে ইতালি । ইংলিশ গোলবারে বারবার আক্রমণ করেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদায় করতে পারেনি কোনো গোল।
অপরদিকে ইটালির আক্রমণের জবাবে প্রতি আক্রমণে যায় ইটালি। কিন্তু গোল না পাওয়াতেই শেষ হয় নির্দিষ্ট সময়।
ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯৬ মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ করে নিয়েছির ইংল্যান্ড কিন্তু রোম রক্ষণ দেয়ালে ব্যর্থ হয় ইংলিশরা।
ইটালিও আক্রমণ করে বেশ কয়েকবার। কিন্তু তারাও ব্যর্থ ইংলিশ রক্ষণদেয়াল ভেদে। মধ্য মাঠে বেশির ভাগসময়ই ইতালি বল দখলে রাখে। সেখান থেকেই দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যায় শিরোপার লড়াইয়ে।
ইংল্যান্ড ও ছেড়ে কথা বলার মত নয়। ইটালিকে এক বিন্দু ছাড় দিতে রাজী নয়। আক্রমণের প্রতিউত্তরে বারবার আক্রমণ চালায় তারাও।
১০২ মিনিটের মাথায় পিকফোর্ডের অসাধারণ সেভে ম্যাচে টিকে থাকে ইংল্যান্ড। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ফ্রি কিক পায় ইংল্যান্ড । কিন্তু এবারও গোল না পাওয়ায় ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে আবারো মাঠে নামে দু-দল। কার হাতে উঠবে শিরোপা, কে হাসবে শেষ হাসিটা? সময় মাত্র বাকী ১৫ মিনিট। এর মাঝেও ফলাফল নির্ধারণ না হলে ম্যাচ গড়াবে পেনাল্টি শ্যুট আউটে।
জয় পেতে মরিয়া দু-দল। ১০৬ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিক আদায় করে নেয় ইটালি। ডি বক্সের কয়েকগজ দূর থেকে বেরারদির নেয়া শট ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। ফলে গোল সংখ্যা থাকে সমতায়।
প্রতিআক্রমণে ইংলিশ কাপ্তানের বাড়ানো বল ঠেকিয়ে দেন রোম গোলরক্ষক ডোনারুমা । বল দখলের লড়াই চলতে থাকে মাঝমাঠে।
দু-দলই চেষ্টায় থাকে আক্রমণে যেতে। তবে বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগ করে ইংল্যান্ড কিন্তু ইটালির রক্ষণভাগে বারবারই পরাস্ত হয় ইংলিশ সেনারা।
নানা নাটকীয়তায় চলতে থাকে ম্যাচ। আক্রমণ চলতে থাকে দু-প্রান্তেই। কখনো এই প্রান্তে আবার কখনো ওই প্রান্তে । কেউ কাউকে ছেড়ে দেয়ার মত নয়।
শেষ পাঁচ মিনিটে গোলের আশায় দু-দলই মরিয়া হয়ে উঠে। ১১৯ মিনিটে আক্রমণে যায় ইটালি। তবে এবারও ব্যর্থ হয়। তবে কর্ণার আদায় করে নেয় দলটি। কিন্তু কর্ণার থেকেও ম্যাচে লিড নিতে ব্যর্থ হয় ইতালি।
এ সময় স্কোয়াডে বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন ইংলিশ কোচ সাউথগেট। হয়তো পেনাল্টি শ্যুটআউটের পরিকল্পনায় তার এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া।
১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ও ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টিতে। শিরোপা জয়ের মহারণের শেষ ধাপেই দু-দল। কিন্তু কার ভাগ্যে রয়েছে শিরোপা তার জন্য আরেকটু সময় অপেক্ষা।
পেনাল্টি শ্যুট আউটে ইটালিয়ান ফরোয়ার্ড বেলোত্তি শট নেয়া বল ঠেকিয়ে দেন ইংলিশ গোলকিপার ফিকপোর্ড। এতে লিড পায় ইংল্যান্ড।
তবে ইংলিশ ফরোয়ার্ড রাশফোর্ডের ভুল নিশানার শটে সমতায় ফিরে ইটালি।
স্কোর দাড়ায় ২-২ গোলে।
বার্নারদেসচির নেওয়া কিক পরাস্ত করে ইংলিশ গোলরক্ষককে। ফলে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় ইটালি।
চর্তুথ কিক নিতে আসেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড সাঞ্চো, কিন্তু তার বল ফিরিয়ে দেন ডোনারুমা। এতে এক গোলে এগিয়ে থাকে ইটালি।
ইটালির হয়ে সর্বশেষ কিক নিতে আসেন সিরিগু কিন্তু এবার তাল শট ফিরিয়ে দেন ইংলিশ গোল রক্ষক। ফলে সমতায় ফিরতে প্রয়োজন ইংলিশ ফরোয়ার্ড সাকার নেয়া শটে গোল পাওয়া। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হন সাকা। তার শট নেয়া বল ফিরিয়ে দেন ইটালিয়ান গোলরক্ষক। আর ৩-২ গোলে এগিয়ে থেকে ইউরোর শিরোপা জয় করে নেয় ইটালি।
ইফাত
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন