প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২১, ০৫:৫৮ পিএম
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা
ও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টাইগারদের অনেক ম্যাচ জয়ে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। মাঝে মধ্যে বল
হাতেও কারিশমা দেখিয়েছেন এই মিনি অলরাউন্ডার।
সর্বশেষ হারারে টেস্টে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন
মাহমুদউল্লাহ। দেড় শতাধিক রানের
দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংস খেলে ড্রেসিংরুমে ফিরেই
সতীর্থদের তিনি জানিয়ে দেন,
এটাই তার শেষ টেস্ট
ম্যাচ। তারপর থেকেই শুরু হয় নানা
আলোচনা-সমালোচনা।
জিম্বাবুয়ের
বিপক্ষে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই
বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। একপর্যায়ে
১৩২ রানে ৬ উইকেট
হারায় টাইগাররা। অস্টম পজিশনে ব্যাট করতে নামেন মাহমুদউল্লাহ।
তার সঙ্গে ব্যাট করতে থাকা লিটন
দাস ৯৫ রান করে
নার্ভাস নাইনটিনের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন।
এরপর তাসকিন আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে সেঞ্চুরি তুলে
নেন মাহমুদউল্লাহ। তাসকিন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট অর্ধশতক (৭৫) করে বিদায়
নিলেও ১৫০ রানে অপরাজিত
থাকেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
তাতে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৬৮ রান।
এক
বছর চার মাস পর
টেস্ট দলে জায়গা পেয়ে
মাহমুদুল্লাহ বুঝিয়ে দেন তিনি এখনও
ফুরিয়ে যাননি। কিন্তু ড্রেসিংরুমে ফিরে আচমকা সতীর্থদের
জানিয়ে দেন আর টেস্ট
খেলবেন না তিনি।
তার
মানে অবসর! ম্যাচের তৃতীয় দিন শুরু না
হতেই কেন এমন সিদ্ধান্ত?
বলার অপেক্ষা রাখে না অবহেলার
কারণেই জমে থাকা অভিমানে
তিনি এমনটি ভাবছেন। আর তার ভাবনার
খোরাকগুলোও তাকে দিয়েছে টিম
ম্যানেজমেন্ট। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে
ঘোষণা দেননি। কিন্তু ড্রেসিংরুমে বলা তার কথা
পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট
বোর্ডের (বিসিবি) কর্তাদের কানে। শুরু হয়েছে তীব্র
প্রতিক্রিয়া। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো সংবাদমাধ্যমকে
বলেই দিয়েছেন, ‘আমাকে অফিসিয়ালি কেউ কিছু বলেনি।
তবে একজন ফোন করে
জানিয়েছে, এই টেস্টের পর
আর সে (মাহমুদুল্লাহ) টেস্ট
খেলতে চায় না। ড্রেসিংরুমে
নাকি সবাইকে সে এটা বলেছে।
কিন্তু আমার কাছে এটা
খুবই অস্বাভাবিক লেগেছে। খেলা তো এখনও
শেষ হয়নি!’
জিম্বাবুয়ের
বিপক্ষে সফরের একমাত্র টেস্ট শেষ না হতেই
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের এমন বক্তব্যে নারাজ
সবাই। যেমনটা জানালেন বিসিবির মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। তিনি বলেন, ‘এখন
টেস্ট চলছে। আমরা সংবাদমাধ্যমে শুনেছি
মাহমুদুল্লাহ নাকি টেস্ট খেলতে
চান না। এটি তার
ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর আমি মনে
করি, আমাদের ম্যাচ শেষ না হওয়া
পর্যন্ত এমন কোনো কিছু
বলা উচিত হবে না।’
রিয়াদ
হঠাৎ কেন এমন বললেন
তা নিয়ে নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক এক ক্রিকেটার বলেন,
‘তিনি (মাহমুদুল্লাহ) কিন্তু জানেন নির্বাচকেরা তাকে বিপদে পড়ে
স্কোয়াডে ডেকেছেন। যখন জানা গেল
তামিম ইকবাল ইনজুরির দোহাই দিয়ে টেস্ট খেলবেন
না। মুশফিকের ইনজুরি আছে, তাই টেস্ট
দলের ঝুঁকি কমাতেই অভিজ্ঞ রিয়াদকে দলে টানা। এমনকি
একাদশে থাকা নিয়েও ছিল
দারুণ সংশয়। ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক
মুমিনুলও ছিলেন দ্বিধায়। তামিম খেললেও হয়তো তার জায়গা
পাওয়া হতো না। এসব
সবকিছু ছিল রিয়াদের জন্য
বার্তা। তিনি ধরেই নিয়েছেন
হয়তো আবারও তিনি হতে পারেন
অবহেলার শিকার। তাই অভিমান থেকেই
ম্যাচের তৃতীয় দিন ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের
জানিয়ে দিলেন আর টেস্ট খেলবেন
না! মূলত তার অভিমানটা
নির্বাচকদের অবিবেচকের মতো আচরণের ওপর।
কারণ বারবার বলতে শোনা গেছে
তিনি টেস্টে চলেন না।’
অন্যদিকে
নাম না প্রকাশে এক
নির্বাচক মাহমুদুল্লাহর এমন কাণ্ডে দারুণ
আহত। নাম প্রকাশ না
করার শর্তে তিনি বলেন, ‘কাউকে
নেয়া বা না নেয়ার
কাজটা তো আমাদের হাতে।
কিন্তু বলতে হয় যে,
তা আমরা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ
করি না। আমাদের কোচ,
অধিনায়কের পরামর্শ শুনতে হয়। এ ছাড়াও
বোর্ডেরও মতামত থাকে। আর শেষ পর্যন্ত
কী হয় সব দোষ
নির্বাচকদের। আমরা তো তাকে
ফিরিয়েছি। তার অভিজ্ঞতার মূল্যায়নও
করেছি। এখন সে খেলার
মাঝে এমনটা কেন করল আমরা
বুঝতে পারছি না। স্বাভাবিকভাবেই এখন
আমাদের দোষ দেয়া হবে!’
রোববার
(১১ জুলাই) টেস্টের পঞ্চম দিনে মাঠে নামার
সময় সতীর্থরা মাহমুদউল্লাহকে বিদায়ী গার্ড অব অনার দিয়েছেন।
তাতে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে আর
সাদা পোশাকে খেলবেন না তিনি। তবে
মাহমুদউল্লাহর অবসরের সিদ্ধান্ত ঠিক থাকবে না
বিসিবির অনুরোধে তিনি আবারও ফিরে
আসবেন তা জানতে অপেক্ষা
করতে হবে আরও কয়েক
দিন।
জেডআই/এম. জামান