প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩, ১২:০১ পিএম
সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্বে ওলটপালট দেশের ক্রিকেট কিংবা ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা। যুবাদের প্রথম মহাদেশীয় সেরা হওয়ার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে নারীদের দাপট। কেবল কি ক্রিকেট, বয়সভিত্তিক সাফ ফুটবলেও লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছে নারীরা। এছাড়া মেসি-রোনালদোর ইউরোপ ত্যাগ, জোকোভিচের রেকর্ড শিরোপা, সিটির ট্রেবল আর শ্রীলঙ্কার নিষেধাজ্ঞা- সব মিলিয়ে গোটা বছর জুড়েই ব্যস্ততা ছিল ক্রীড়াঙ্গনে।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের টাইমড আউট কিংবা মুশফিকের অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড। বছর জুড়ে এমন সব অদ্ভূত আউটের সাক্ষী হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২০২৩ কেবল মাঠের খেলায় নয়, মাঠের বাইরের সব আলোচনাতে ব্যস্ত ছিল ক্রিকেটাররা। হাসি-কান্না, সাফল্য-ব্যর্থতায়, ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্যেও যা কিনা অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা।
দেশের ক্রিকেটে অর্জন, সাফল্যের ছিঁটেফোটা না থাকলেও, নেতিবাচক আর ব্যর্থতার গল্পে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিলেন সাকিব-তামিমরা। সিরিজের মাঝপথে অবসরের ঘোষণা কিংবা অবসর ভেঙে তামিমের মাঠে ফেরা, দেশসেরা ওপেনারের সঙ্গে সাকিবের অন্তর্কোন্দল প্রকাশ্যে আসাটাও ছিল টাইগার ভক্তদের জন্য বড় ধাক্কা। সে সব ধাক্কার প্রভাব স্পষ্ট হয় মাঠের হতশ্রী পারফরম্যান্সে। ব্যর্থ এশিয়া কাপ মিশন, এরপর স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ যেন রীতিমতো দুঃস্বপ্ন ছিল টাইগার ভক্তদের জন্য।
জাতীয় দলের এই যখন অবস্থা, সেখানে অন্য পথে হেঁটেছেন যুবারা। এতসব ব্যর্থতার ভিড়ে একটুখানি স্বস্তি এসেছে ১৯ না পেরোনো তরুণ ক্রিকেটারদের মাধ্যমে। প্রথমবারের মতো যুব এশিয়া কাপ জয়ের মাইলফলকটা স্থাপিত হয়েছে এই বছরেই।
অনুজদের মতো সাফল্যমণ্ডিত বছর পার করেছে নারীরাও। ঘরের মাঠে ভারতের সঙ্গে সিরিজ ড্র করা ছিল নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। দুই দলের শক্তিমত্তা বিবেচনায় এমন হার মেনে নিতে পারেননি খোদ ভারত অধিনায়ক। হারমনপ্রীতের স্ট্যাম্প ভাঙা ছিল বছরের অন্যতম আলোচিত বিষয়। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের নজিরটাও গড়ে বাংলার মেয়েরা। ঘর থেকে বেরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও, লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও সাফল্য এসেছে নারীদের হাত ধরে। নেপালকে উড়িয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ শিরোপা তৃতীয়বারের মতো জয় করেছে বাংলাদেশ। খুব বড় অর্জন না থাকলেও, লেবাননকে রুখে দেয়া, সাফে ইতিবাচক পারফরম্যান্সে, র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি ছেলেদের ফুটবলেও। তবে, ছেলেদের ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি শেখ মোরছালিন।
এদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার একক আধিপত্য। জুনে প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয় দিয়ে শুরু, এরপর ভারতের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের করে নেয়া। মাইটি অজি`স আরও একবার প্রমাণ করলো, কেন তারা এই ইভেন্টে সেরা। অন্যদিকে, সে উৎসবের ভিড়ে, ঘরের মাঠে ফাইনাল হারার শোক এখনো পোড়াচ্ছে ভারতীয়দের।
২০২৩ সাল ভারতীয়দের জন্যে কান্না হলেও, ঠিক উল্টো চিত্র ম্যান সিটি শিবিরে। পেপ গার্দিওলার দল জিতেছে সম্ভাব্য যা কিছু জেতা যায়। প্রথমবারের মতো ট্রেবল জয়ের পর প্রথমবারের মতো ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপাও এবছরেই শোকেসে উঠেছে। এতসব অর্জনে উদযাপনের ক্লান্তিও হয়তো কিছুটা ছুঁয়ে গেছে সিটি সমর্থকদের।
ক্লান্তি তো মেসি-রোনালদোকেও ছুঁয়েছে। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এবছরেই বিদায় জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলকে। একজন সৌদি অন্যজন মার্কিন মুলুক, দুজনের নতুন ঠিকানা নতুন করে বিপ্লব ঘটিয়েছে দুই দেশেই। অন্যদিকে, এই দুই গ্রেটের বিদায়ে কিছুটা হলেও রং হারায় ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল। বিশেষ করে টাকার ঝনঝনানির সামনে ইউরোপিয়ানদের অসহায়ত্ব, স্পষ্ট হয়েছে বিশ্ব ফুটবলে।
তবে বুড়িয়ে গেলেও, গেল দেড় দশকের মতো এবছরেও নতুন নতুন সব রেকর্ড ছাপ দুজনের ঝুলিতে। লিওনেল মেসির রেকর্ড অষ্টম ব্যালন কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রেকর্ড ১২০০ ম্যাচ। ২০২৩ পঞ্জিকা এই দুজনকে আরো একবার অমরত্ব উপহার দিয়েছে। পাশাপাশি ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছেন রোনালদো।
অমরত্ব তো নোভাক জোকোভিচের জন্যেও। বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, মাঝে ফ্রেঞ্চ ওপেনের পর সেপ্টেম্বরে ইউএস ওপেন জিতে আরও একবার ট্রেবল পূরণ। ২০২৩-এ আরও ৩ গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতে, নিজেকে বসিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়। ৩৫ বছর বয়সে তার ৩৪তম গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ে তাকে নিয়ে গেছে ধরাঁছোয়ার বাইরে।
তবে জোকোভিচের মতো সব চুমু যে স্বস্তির নয় তাও শিখিয়েছে ২০২৩ সাল। কখনো কখনো একটা চুমুই হতে পারে সব হারানোর কারণ। এই যেমন স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস। মেয়েদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর হারমোসাকে চুমু দিয়ে পদ হারিয়েছেন, খেয়েছেন মামলাও। বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা তো এটাও।
এছাড়াও সরকারি হস্তক্ষেপে লঙ্কান ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা কিংবা ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো আগ্রাসন নিয়ে উসমান খাজার প্রতিবাদে বাঁধা, আলোচনার বাড়তি যোগানে আইসিসিও কম যায় না। উয়েফাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইউরোপিয়ান সুপার লিগের জন্মটাও তো হলো এবছরেই। বছর জুড়ে এমন ব্যস্ত সময় শেষ কবে বিশ্ব দেখেছে?
জেকেএস/