• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

এমন প্রত্যাবর্তন সারা জীবন মনে রাখবেন সৌম্য

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩, ০৭:৪৯ পিএম

এমন প্রত্যাবর্তন সারা জীবন মনে রাখবেন সৌম্য

ছবি: সংগৃহীত

ক্রীড়া ডেস্ক

তাকে স্কোয়াডে যুক্ত করার পর থেকে চারদিকে চলতে থাকে আলোচনা-সমালোচনা, তার পারফরম্যান্স ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সবশেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগে। তবে ষষ্ঠ ম্যাচে এমন একটি ইনিংসই খেললেন তাতে শুধু দেশের ক্রিকেটের সমর্থক না প্রতিপক্ষ দলও তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে। বলছিলাম সৌম্য সরকারের কথা।

বুধবার ওয়ানডে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টাইগার ব্যাটাররা যখন ব্যস্ত ছিলন উইকেটে আসা-যাওয়ার মধ্যে সে সময় একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন সৌম্য। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ অবদি করেছেন ব্যাটিং। একাই করেছেন দলীয় রানের অর্ধেকেরও বেশি রান। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হয়ে সৌম্য যখন সাজঘরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন নেলসনের স্যাক্সটন ওভাল স্টেডিয়ামের উপস্থিত থাকা দর্শকরা দাঁড়িয়ে হাততালির মাধ্যমে তাকে সাধুবাদ জানায় এই টাইগার ব্যাটারকে। জানাবেন না-ই-বা কেন।

গতকাল সৌম্য ১৫১ বল খেলে ২২ চার এবং দুটি ছয়ে করেন ১৬৯ রান। পাঁচ বছর পর তিন অঙ্কের ইনিংস খেলেছেন সৌম্য আর এমন প্রত্যার্বতনের দিয়ে গড়েছেন একাধিক রেকর্ড। এই ইনিংসের মধ্যে দিয়ে পেছনে ফেলেছেল আরেক টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল খানকে। কেননা একদিনের ক্রিকেটে তামিমের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল ১৫৮ রান। যা ছিল টাইগার ব্যাটাদের মধ্যে দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। এখন এই তালিকা সৌম্যের ওপরে আছেন কেবল আরেক ওপেনার লিটন দাস। এক দিনের ক্রিকেটে লিটনের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ১৭৬।

এদিকে শুধু তামিম ইকবাল না এই ইনিংসের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ডও ভেঙে দেন তিনি। এর আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ার কোনো ব্যাটারের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৬৩ রানের রেকর্ড শচীনের। গতকাল ১৬৯ করে তা নিজের দখলে নিয়ে নেন এই টাইগার ওপেনার। এর আগে চলতি সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেন এই ব্যাটার।

যদিও গেল চার-পাঁচ বছরে সৌম্যর জন্য এই সব নতুন কিছু ছিল না। গেল পাঁচ বছর ধরেই তার ব্যাটে রান খরা চলছে। এতে করে দলের মধ্যে আসা যাওয়ার মধ্যেই থাকতে হয়েছে তাকে। সবশেষ ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন এরপর এক দিনের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে মাঠে নেমেছেন ২৬ বার। সেইসব ম্যাচে মাত্র ৪টি অর্ধশতকের দেখা পেলেও ছিল না কোনো সেঞ্চুরি। এমনকি সর্বশেষ তিন ওয়ানডেতে করেছেন মাত্র এক রান। বাকি দুটি ম্যাচে ফিরেছেন শূন্য হাতে।

তবুও সৌম্যে এমন অফ ফর্মের মধ্যেও তার পাশে ছিলেন টাইগার হেড কোচ হাথুরুসিংহে ও তার সতীর্থরা। হাথুরু দ্বিতীয় মেয়াদে আসার পর থেকেই সৌম্যর ওপর বিশেষ নজর দেন। কারণ তার হাত ধরেই তো এই মারকুটে ব্যাটারের উত্থান হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ড সিরিজে সুযোগ দেওয়া হয় তাকে। তবে সেবার ভালো করতে না পারায় জায়গা হয়নি বিশ্বকাপ দলে।

তবে নিউজিল্যান্ড সফরে আবার দলে সুযোগ পান তিনি। যদিও প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর গত পরশু ম্যাচের আগের দিন সৌম্যকে নিয়ে হাথুরু বলেছিলেন ‘ওর সমস্যা আসলে কোন জাগায় সেটা বুজতে পারছি না’। সেই সঙ্গে হাথুরু সৌম্যকে দলে রাখার বিষয়ে দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের না থাকার কারণ উল্লেখ করেন। আর তার পরদিনই সৌম্য নিজের বিধ্বংসী রূপ দেখালেন। যদিও সৌম্যর এমন ইনিংস খেলার পরও বাংলাদেশ হারেনি। তবে সবার নজর কেড়েছেন সৌম্য হয়েছেন ম্যাচ-সেরা।

পরে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজের ইনিংস নিয়ে সৌম্য বলেন, ‘আমি আমার সেঞ্চুরি নিয়ে খুশি কিন্তু খারাপ লাগছে যে আমরা হেরে গেছি। আমরা যদি জিততে পারতাম, তাহলে এই ইনিংসটা আরও স্পেশাল হতো। যদি আমরা  পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট না হারাতাম, তাহলে হয়তো পার্থক্য তৈরি হতো। আমরা মাঝখানে দুটি পার্টনারশিপ পেয়েছিলাম কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উইকেট হারিয়েছি। যদি এমনটি না হতো, তাহলে আমরা ভালো সংগ্রহ করতে পারতাম।

আমরা নেটে কঠোর অনুশীলন করছি। অনেকদিন পর দলে ফিরেছি। খুব বেশি ভাবছি না, শুধু বল দেখছি এবং নিজের খেলাটা খেলার চেষ্টা করছি।’

 

জেকেএস/

আর্কাইভ