প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৩, ০৩:৪১ এএম
ঘরের মাঠে লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যাট সাড়ে তিনশোর বেশি রান করেছিল ভারত। পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শামি-সিরাজদের তোপে বিধ্বস্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কা। ৩০২ রানের রেকর্ড গড়া জয়ে সবার আগে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে রোহিত শর্মার দল।
বিশ্বকাপে রান ব্যাবধানে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড গড়লো রোহিত। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৫৭ রানে বারমুডাকে হারিয়েছিল ভারত। এছাড়া বিশ্বমঞ্চে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় এটি। সর্বোচ্চ রানের জয়টির মালিক অস্ট্রেলিয়া। চলতি আসরে নেদারল্যান্ডসকে ৩০৯ রানে হারিয়ে রেকর্ডটি নিজেদের করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
একদিনে ক্রিকেটে রান ব্যাবধানে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় এটি। গত জানুয়ারিতে লঙ্কানদের ৩১৭ রানে হারিয়ে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়ের পাশাপাশি ওয়ানডেতে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড গড়েছিল ভারত। কয়েক মাস পর সেই লঙ্কানদেরই তিনশতাধিক রানে হারালো তারা। বড় জয়ের তালিকায় চুতর্থ সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি।
বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টসে জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটের আমন্ত্রণ জানান লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। শুভমন গিল, বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আয়ারের দুর্দান্ত ইনিংসে নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেটে ৩৫৭ রানের সংগ্রহ গড়ে ভারত। জবাবে নেমে মোহাম্মদ শামির ফাইফার ও মোহাম্মদ সিরাজের তিন উইকেটে ১৯.৪ ওভারে ৫৫ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
পাহাড়সম রান তাড়ায় নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারায় লঙ্কানরা। বুমরাহ তুলে নেন পাথুম নিশাঙ্কার উইকেট। পরের ওভারে জোড়া আঘাত হানেন মোহাম্মদ সিরাজ। দিমুথ করুণারত্নে ও সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফেরান। চতুর্থ ওভারে দলীয় ৩ রানে কুশল মেন্ডিসকেও ফেরান সিরাজ।
চাপে পড়া লঙ্কান আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়নি। দশম ওভারে দলীয় ১৪ রানে পরপর দুই ব্যাটারকে ফেরান মোহাম্মদ শামি। চারিথ আশালঙ্কা ও দুশন হেমন্তকে ফেরান। ১২তম ওভারে নিজের তৃতীয় শিকারের দেখা পান শামি। ফেরান দুশমন্ত চামিরাকে। ২২ রানে ৭ ব্যাটারকে হারায় লঙ্কানরা।
দলীয় ২৯ রানে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকেও ফেরান শামি। ২৫ বলে ১২ রান করেন লঙ্কান অলরাউন্ডার। নবম উইকেট জুটিতে ২০ রান যোগ করেন কাসুন রাজিথা ও মাহেশ থিকসানা। ১৮তম ওভারের শেষ বলে শামির পঞ্চম শিকার হন রাজিথা। লঙ্কান ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ রান করেন তিনি।
২০তম ওভারের চতুর্থ বলে দিলশান মাদুশঙ্কাকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের ইনিংস গুটিয়ে দেন রবীন্দ্র জাদেজা।
ভারতের হয়ে ৫ ওভার বল করে ১৮ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি। চতুর্থবারের মত ফাইফারের দেখা মিললেও শামির ক্যারিয়ারসেরা বোলিং এটি। এর আগে ৫১ রানে ৫ উইকেট শিকার ছিল তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার।
মোহাম্মদ সিরাজ নেন তিন উইকেট। এছাড়া জাসপ্রীত বুমরাহ ও রবীন্দ্র জাদেজা একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ভারতকে আগে ব্যাটে পাঠিয়ে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে উইকেট তুলে নেন মাদুশঙ্কা। ৪ রান করে ফিরে যান রোহিত শর্মা। পরে কোহলিকে নিয়ে ১৮৯ রানের জুটি গড়েন শুভমন গিল। ৩০তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৯৩ রানে গিলকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান মাদুশঙ্কা। ১১ চার ও ২ ছক্কায় ৯২ বলে ৯২ রান করেন গিল।
এক ওভার পর আবার বলে আসেন মাদুশঙ্কা। ওভারের তৃতীয় বলে বিরাটকেও ফেরান। তার বলে শর্ট কাভার অঞ্চলে কোহলি ক্যাচ দেন পাথুম নিশাঙ্কার হাতে। ১১ চারে ৯৪ বলে ৮৮ রান করে যান ভারত তারকা।
সেইসঙ্গে কোহলি বাড়ান শচীনের রেকর্ড ৪৯ ওয়ানডে শতক ছোঁয়ার অপেক্ষা। আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরি শচীনের। কোহলির ৪৮টি। চলতি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ৯৫ রানে আউট হয়েছিলেন, সুযোগ হাতছাড়া করলেন এদিনও।
৪০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লোকেশ রাহুলকে ফেরান দুশমন্থ চামিরা। শর্ট এক্সট্রা কাভার অঞ্চলে দুশন হেমন্তের হাতে ক্যাচ দিয়ে রাহুল ফেরেন ১৯ বলে ২১ রান করে। ৪২তম ওভারের তৃতীয় বলে সূর্যকুমার যাদবকে চতুর্থ শিকার বানান মাদুশঙ্কা। ৯ বলে ১২ রান করে যান সূর্যকুমার।
৪৮তম ওভারের তৃতীয় বলে শ্রেয়াস আয়ারকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবার পঞ্চম উইকেট শিকার করেন মাদুশঙ্কা। ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ৫৬ বলে ৮২ রান করেছেন আয়ার।
ইনিংসের তিন বল বাকি থাকতে রানআউট হন ৪ বলে ২ রান করা মোহম্মদ শামি। জাসপ্রীত বুমরাহকে নিয়ে ইনিংস শেষ করেন রবীন্দ্র জাদেজা। ২৪ বলে ৩৫ রান করে শেষ বলে রানআউট হন জাদেজা।
লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন দিলশান মাদুশঙ্কা। ১০ ওভার বল করে ৮০ রান খরচ করেন তিনি। লঙ্কান পেসারের আগের সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৪৯ রান খরচায় চার উইকেট।