প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৩, ০২:২১ এএম
রফিকুল ইসলাম টিপুর জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই। এবার সেই স্টেডিয়ামে শেষবারের মতো নিথর দেহে এলেন তিনি। ক্রীড়াঙ্গনের সবার প্রিয় টিপুকে একনজর দেখতে সবাই ছুটে এসেছিলেন।
ক্রীড়াঙ্গনে অনেকের নামাজে জানাজা আয়োজনের ব্যবস্থা করেছিলেন টিপু। স্টেডিয়ামস্থ মসজিদের ইমামকে ডাকার কাজটি তিনিই করতেন। টিপুর জানাজা পড়াতে এসে তাই ইমামও আবেগাক্রান্ত, ‘কত দিন তার মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে অনেক মিলাদ ও জানাজা পড়িয়েছি। আজ জানাজা পড়াতে এসেছি তার। দুদিন আগেও তিনি মসজিদে নামাজ পড়েছেন।’
গত রোববার রাতেও সুস্থ শরীরে বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন থেকে বাসায় গিয়েছিলেন টিপু। গতকাল (সোমবার) সকালে তিনি আকস্মিকভাবে মাথা ঘুরে পড়ে যান। পরে মস্তিষ্কে অত্যধিক রক্তক্ষরণ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। আজ বিকেল ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আরচ্যারি ফেডারেশনের এই নির্বাহী সদস্য। মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের রোলার স্কেটিংয়ে জানাজার আয়োজন করেন। ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন ফেডারেশনের কর্মকর্তা ও ক্রীড়া সাংবাদিকসহ সবার ভালোবাসায় সিক্ত টিপুকে চিরবিদায় জানানো হয়।
১৯৭৭-৭৮ সালে স্বামীবাগ টেবিল টেনিস ক্লাব থেকে ক্রীড়াঙ্গনে টিপুর পথচলা শুরু। এরপর টানা তিন দশক টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। এক মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন। টিপু অন্য সব কর্মকর্তাদের চেয়ে যে আলাদা সেটা অকপটে স্বীকার করলেন টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সহ-সভাপতি খোন্দকার হাসান মুনীর, ‘টিপু ভাই যখন সাধারণ সম্পাদক, খালি পায়ে সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে টিটি টেবিল ঠিক করেছেন। এটা শুধু টিপু ভাইয়ের পক্ষেই সম্ভব ছিল।’
টেবিল টেনিসের টিপু হিসেবেই ক্রীড়াঙ্গনে তার পরিচিতি থাকলেও গত কয়েক বছর তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের কর্মকর্তা। আরচ্যারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল টিপুর প্রয়াণকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন, ‘টিপু ভাইয়ের কাছে আরচ্যারি ফেডারেশন আজীবন ঋণী। তার শূন্যস্থান অপূরণীয়।’
বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু ক্রীড়াঙ্গনের অনন্য ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করলেন টিপুকে, ‘টিপু ভাই শুধু টেবিল টেনিস ও আরচ্যারির নন, পুরো ক্রীড়াঙ্গনের। প্রতিটি ফেডারেশন, অলিম্পিক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, সাংবাদিক সবার সঙ্গে তার অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক। তার কোনো শত্রু নেই।’
টিপু ক্রীড়া সংগঠক হলেও এখানকার সাংবাদিকদের সঙ্গেও ছিল তার অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক। অগ্রজ-অনুজ সকল সাংবাদিকদের সঙ্গে তার ছিল সমান সম্পর্ক। বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের একাধিকবারের সভাপতি ও রফিকুল ইসলাম টিপুর দীর্ঘদিনের বন্ধু মঞ্জুরুল হক যারপরনাই ব্যথিত, ‘টিপু শুধু ক্রীড়া সংগঠকই নন, ক্রীড়া সাংবাদিকদের অকৃত্রিম বন্ধু। টিপুর বিদায় ক্রীড়া সাংবাদিকরা আজীবন মনে রাখবে।’
টিপুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অনেক ক্রীড়া সাংবাদিক নানা ব্যস্ততার মধ্যেও ছুটে এসেছেন। ক্রীড়াঙ্গনে টিপুর আরেক ঘনিষ্ঠজন বাস্কেটবলের কামরান হায়দার (মীরা)। সুদূর আমেরিকা থেকে কান্নাজড়িত কন্ঠে মীরা বলেন, ‘আমার জীবনের এক অভিভাবককে হারালাম।’
৬৫ বছর বয়সী টিপু মা, স্ত্রী ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। টিপুর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনে সবার বিপদের সাথী সাবেক ফুটবলার আব্দুল গাফফার, ‘টিপু ভাই ক্রীড়াঙ্গনের অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি। আমরা সবাই মিলে তার পরিবারের পাশে থাকব।’
একইসঙ্গে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল আজ তাৎক্ষণিকভাবে টিপুর স্ত্রীর হাতে দুই লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন।
টিপুর বিদায়যাত্রায় বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন, টেবিল টেনিস, আরচ্যারি, অ্যাথলেটিক্স, হ্যান্ডবল, সাঁতার, ভলিবল ও তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন, মেরিনার ইয়াংস ক্লাব, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন, ক্রীড়া লেখক সমিতিসহ আরও অনেক সংস্থা শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
বিএস/