প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৩, ০২:৩৪ এএম
রান্নাঘর থেকে শোয়ার ঘর আর শোয়ার ঘর থেকে রান্নাঘরে ছোটাছুটি করছেন মর্জিনা আকতার। এমন ছোটাছুটিতেও পঞ্চাশোর্ধ বয়সী মহিলার মাঝে নেই কোনো ক্লান্তি। হাসিমুখে আপন গতিতে ছুটে চলা মর্জিনা আকতার আর কেউ নন, তিনি বাংলাদেশ নারী দলের পেসার মারুফা আকতারের মা।
নীলফামারী জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের কাদিখোল গ্রামের মাস্টার পাড়ায় মারুফার বাড়ি। শনিবার (২২ জুলাই) ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচ চলাকালে মারুফার বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্যেরই দেখা মেলে। মর্জিনা আমন ধানের ক্ষেতে কাজ করা মজুরের জন্য ভাত রান্না করছিলেন, কিন্তু মন তার পড়ে আছে শোয়ার ঘরে। যেখানে টেলিভিশনে চলছে বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি। সেই ম্যাচে খেলছেন আদরের মেয়ে মারুফা।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মারুফার মা মর্জিনা তড়িঘড়ি করে শোয়ার ঘরের সেই টেলিভিশনের সামনে চেয়ার টেনে বসতে দেন। এরপর তিনি ছুটে যান রান্নাঘরে। টেলিভিশনের স্ক্রিনে তখন প্রথম ইনিংসে ব্যাট করছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার শামীমা সুলতানা ও ফারজানা হক। এরই ফাঁকে মারুফার মায়ের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট খেলা আগে বুঝতাম না। মারুফা যখন রেললাইনের পাশে তার ভাইদের সঙ্গে খেলতো, তা দেখে খারাপ মন্তব্য করত গ্রামের মানুষজন। যা সহ্য করতে না পেয়ে আমিও মারুফাকে গালমন্দ করতাম। তবু মেয়েটি হাল ছাড়েনি।’
এরপর মারুফার অবদানে পরিবারের আর্থিক অবস্থা বদলে যাওয়ার কাহিনী শোনালেন মা মর্জিনা, ‘বাবার দেওয়া জমিতে বাড়ি করেছি। বর্গা নিয়ে জমি চাষাবাদ করে মানুষ করছি ৪ ছেলে-মেয়েকে। একসময় মারুফা তার বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করতো। কিন্তু সে আজ বিশ্বে পরিচিত। তার কারণে সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তার বাবা (মোহাম্মদ আইমুল্লাহ) এখন গরুর ব্যবসা করছেন।’ আজকের ম্যাচেও বাংলাদেশের জয়ে মারুফা অংশীদার হতে পারেন, সবার কাছে সেই দোয়া চান তিনি।
অনুর্ধ্ব-১৯ নারী দলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে জাতীয় দলে জায়গা পান মারুফা। চলমান সিরিজেও তার বলের তোপ দেখেছে ভারতীয়রা। প্রথম ওয়ানডেতে চার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে এই পেসার বড় ভূমিকা রাখেন। তাই তো ভারতীয় ব্যাটার স্মৃতি মান্দানার কণ্ঠেও মারুফাকে নিয়ে স্তুতি। এমনকি মারুফার মোক্ষম প্রতিভা তাদের দলকেও অনুপ্রেরণা দিচ্ছে বলে জানান মান্দানা।
বাংলাদেশ-ভারতের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচেও দুই উইকেট নিয়েছেন এই তরুণী। অবশ্য ভারতীয় ব্যাটাররা মারুফার ওপর এদিন বেশ চড়াও হয়েছিলেন। তবে শেষ ওভারে যখন ভারতের জয়ের জন্য মাত্র ৩ রান দরকার, তখন নিজের জাত ভালোভাবেই বুঝিয়েছেন তিনি। দুই রান দেওয়ার পর তৃতীয় বলে ভারতীয় ইনিংসের সর্বশেষ উইকেট তুলে নেন তিনি। এর মাধ্যমে ড্র নিয়ে সমাপ্ত হয়। সিরিজটিও শেষ হয়েছে সমতায়।
বিএস/