প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৩, ০৪:১৭ এএম
সময়টা সত্যিকারভাবেই ভালো যাচ্ছিল না তামিম ইকবালের। শারীরিকভাবে তো বটেই, মানসিকভাবেও। ইনজুরিতে ছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে উঠছিলেন, তবে ম্যাচ খেলার মতো শতভাগ ফিট হয়তো ছিলেন না। আর মানসিক অস্বস্তির বিষয়টা পারফরম্যান্স ঘিরে। পারফরম্যান্সটা ঠিক তামিম ইকবালের সঙ্গে যাচ্ছিল না। ২০২২ সাল থেকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচসহ এ পর্যন্ত তিনি ২২টি ওয়ানডে খেলেছেন। এর মধ্যে ২২ সালে ১২টি, চলতি বছরে ১০টি। ২২ ম্যাচে কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৫টি। এই পাঁচ হাফ সেঞ্চুরির চারটিই এসেছে খর্ব শক্তির দলগুলোর বিপক্ষে। এসব দলের মধ্যে রয়েছে জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটি ম্যাচ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
একদিকে ইনজুরি সমস্যা, অন্যদিকে রান খরা। আবার বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে। অথচ তিনি অধিনায়ক। স্বাভাবিকভাবেই তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে সবাই। দলের তারকা এবং নির্ভরযোগ্য ব্যাটারের রান খরায় সবাই উদ্বিগ্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। তেমন স্বাভাবিক এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বড় যে সহযোগিতা সেটা হচ্ছে মানসিক। এই একটাই সহযোগিতা পারতো তামিম ইকবালকে তার বাজে পরিস্থিতিকে পেছনে ফেলে স্বাভাবিক ফর্মে ফিরে আসতে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো তার উল্টো। তাকে সহযোগিতার পরিবর্তে হেনস্থা করা হলো। অথচ ক্রিকেটে এমন বাজে সময় পার করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যে কোনো ব্যাটার বা বোলারের জন্য এমন বাজে সময় আসতেই পারে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড ম্যাচের দিকে দেখা যেতে পারে। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি এ ম্যাচে পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই নিজের জন্য তো বটেই দলের জন্যও হতাশার। কিন্তু ব্যর্থতা সত্ত্বেও সতীর্থরা তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সামনে ভালো কিছু পাওয়ার আশায় তামিম ইকবালেরও পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল আমাদের। কিন্তু আমাদের কর্তারা করলেন ঠিক উল্টোটা। তামিমের পাশে না দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হলো। যাচ্ছেতাই বলা হলো।
ইনজুরির কারণে অনুশীলেন তামিম ইকবাল বেশ অস্বস্তিতে ছিলেন। ফলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তামিম ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তামিমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সেখানে তিনি জানান পুরো ফিট না হলেও খেলবেন। তামিমের ভাষায় `শরীর এখন ভালো আছে। আমি বলবো না শতভাগ ঠিক আছে। প্রথম ওয়ানডে খেলবো। খেলার পর আরও বুঝতে পারবো।`
তামিমের এমন মন্তব্য পছন্দ হয়নি হেড কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের। প্রচণ্ড রকম ক্ষেপে যান তিনি। ক্ষোভটা শুধু নিজের মধ্যে রেখেছেন তা নয়। আকাশে বাতাসে এবং সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে ফোন দিয়ে ‘চিল্লাচিল্লি’ও করেন তিনি। দেশের একটি দৈনিক পত্রিকা পাপনের উদ্ধৃতি দিয়ে এই সংবাদও প্রকাশ করে।
সেই পত্রিকাকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, `আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না কোন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তামিম এমন কথা বলল। আমি কোচের সঙ্গে কথা বলেছি, কোচও এমন কিছুর সঙ্গে অভ্যস্ত নয়। সেও ক্ষুব্ধ। তামিমকে আসলে পরিষ্কার করে জানাতে হবে সে কী চায়। কোন পর্যায়ে আছে সে।’
তিনি আরও বলেন `তামিমের এমন কথা আমার মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে। হাতু (হাথুরুসিংহে) আমাকে ফোন করে আধঘন্টা চিল্লাচিল্লি করেছে। এটা কি সে পাড়ার খেলা পেয়ে গেছে নাকি! যে আমি ফিট আছি কি না, তা খেলে দেখব। হয় আপনি ফিট, নয়তো ফিট না।`
এমনিতেই রান পাচ্ছিলেন না তামিম, তার ওপর বোর্ড কর্তাদের এমন আচরণ। চাপটা হয়তো তামিম ইকবাল নিতে পারেননি। তাছাড়া আরো দু একটা ম্যাচে ব্যর্থ হলেও অধিনায়কত্ব হয়তো ছাড়তে হতো তাকে। সে সঙ্গে হয়তো দল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কাও তৈরি হতো। সে সব বিবেচনায় চাপ থেকে মুক্তি পেতেই কি তামিম হঠাৎ করে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন।