প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৩, ০৮:৫৯ পিএম
পিএসজি অধ্যায় শেষ লিওনেল মেসির। সবশেষ গুঞ্জন অনুযায়ী, সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলাল তাকে পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছে। টাকার বস্তা নিয়ে মাঠে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিও। অন্যদিকে অর্থের জোর না থাকলেও প্রতিযোগিতায় নেমেছে আর্জেন্টাইন তারকার সাবেক ক্লাব বার্সেলোনা। তবে বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে ক্যাম্প ন্যুতে ফিরিয়ে আনা মোটেও সহজ হবে না কাতালানদের জন্য।
২০২১ সালে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বার্সেলোনা ছাড়তে হয়েছিল মেসিকে। যে কারণে ক্লাবের মধ্যমণিকে ছাড়তে হয়েছিল, এখনও সে আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বার্সা। আর্জেন্টাইন তারকাকে ক্লাবে ফিরিয়ে আনতে হলে আগে লা লিগার ফিন্যান্সিয়াল নীতির মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনতে হবে তাদের।
গত মাসে দ্য অ্যাথলেটিকের দেয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী দলবদল ও খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের পেছনে কাতালানদের খরচ ছিল ৬৫০ মিলিয়ন ইউরো। গ্রীষ্মের দলবদলে নতুন খেলোয়াড় দলে নিতে হলে তাদের এ খরচটা কমিয়ে ৪৫০ মিলিয়ন ইউরোতে আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে একাধিক খেলোয়াড় বিক্রির পাশাপাশি ক্যাম্প ন্যুতে থাকা খেলোয়াড়দের বেতন কমিয়ে আনতে হবে ক্লাবটিকে।
সবকিছু ঠিকঠাক করে আনলেও মেসিকে ক্যাম্প ন্যুতে নিয়ে আসা কঠি হবে বার্সেলোনার জন্য। কারণ, সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলাল যেখানে তাকে বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে, সেখানে বার্সার প্রস্তাব থাকবে মাত্র ২৫ মিলিয়ন। যা তার বর্তমান পারিশ্রমিকের তুলনায়ও অনেক কম। লা লিগার নীতির মধ্যে থাকতে হলে এর বেশি প্রস্তাব দেয়া সম্ভবও না ক্লাবটির জন্য। মায়ামি কিংবা আল-হিলালের বড় প্রস্তাব এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত মেসি বার্সাকে বেছে নেবেন কি না, সেটা নিয়েও সংশয় আছে।
তবে বার্সার বর্তমান পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। ১.৩ বিলিয়ন ইউরো দেনায় থাকা ক্লাবটি নতুন করে স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ১.৪ বিলিয়ন ইউরো ধার করেছে। ক্যাম্প ন্যু মেরামতের কাজ শেষ হতে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। এ সময় তারা খেলবে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। কিন্তু এখানে দর্শক ধারণক্ষমতা ক্যাম্প ন্যু থেকে এত কম যে, এ সময়ে ক্লাবটির টিকিট থেকে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ইউরো লোকসান হতে পারে বলে জানাচ্ছে, গোল ডট কম।
তার ওপর গাভি, আরাহো, মার্কোস অ্যালোনসোদের তো চুক্তি নবায়ন করাও বাকি। বার্সার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্প্যানিশ ফুটবল লেখক গিলেম বালাগ সম্প্রতি বলেছেন, ‘মেসির কথা ভুলে যান বার্সেলোনার হয়ে এখন যারা খেলছেন যেমন: গাভি, আরাহো, মার্কোস অ্যালোনসো, সার্জি রবার্টোদের নতুন চুক্তিপত্রে সই করানোর মতো অবস্থানেও নেই এখন বার্সেলোনা।’
কিন্তু বার্সেলোনার বর্তমান কোচ জাভি হার্নান্দেজ এক সময়ের সঙ্গীকে শিষ্য হিসেবে পেতে গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তার আশা, ক্যাম্প ন্যুতে দীর্ঘ দুই যুগ কাটানো মেসি আবারও ফিরে আসবেন বার্সায়। জাভি বলেন, ‘আমি মনে করি ওর উচ্চ স্তরে খেলা চালিয়ে যাওয়া উচিত। ও যদি বার্সায় আসে, বেশির ভাগ কাতালান যা চায়, বিশেষ করে কোচ হিসেবে আমাদের দরজা খোলাই আছে। আমি নিশ্চিত যে, ও সেরা সিদ্ধান্তটাই নিতে চলেছে।’
বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ৭৭৮টি ম্যাচ খেলে ৬৭২ গোল করেছেন মেসি। জিতেছেন ৩৫টি শিরোপা। সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী, ছয়বারই ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ক্লাবটিতে থাকাকালীন। রোজারিও থেকে কিশোর বয়সে পাড়ি দিয়ে এখানে হয়েছেন ফুটবল কিংবদন্তি।
বালাগও মনে করেন মেসি ফিরতে চান তার পুরোনো ডেরায়। তিনি বলেন, ‘মেসি ফিরতে চান। কারণ, ১৮টি বছর বার্সেলোনা ছিল মেসির ঘর। ঘরকুনো এক বালক থেকে স্বামী, বাবা ও ফুটবল কিংবদন্তি হয়েছেন মেসি এখানেই।’
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’ গত ৩ জুন তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী ৬ জুন মেসির সঙ্গে চুক্তির খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে চায় আল-হিলাল। যদি খবর সত্যি হয়, তাহলে বার্সার আশা মঙ্গলবারই শেষ হয়ে যাবে। অন্যথায় শেষ পর্যন্ত ক্লাব কিংবদন্তিকে দলে টানতে মাঠে থাকবে কাতালানরা।
এডিএস/