প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৩, ০২:৩৫ এএম
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে লাল সবুজের পতাকা উঁচু করে ধরেছিল। ঢাকার ব্যস্ত নগরী সাক্ষী হয়েছিল নতুন ইতিহাসের। রাজপথে সাবিনা, সানজিদা কৃষ্ণাদের বরণ করতে ছিল দেশের মানুষের নানা আয়োজন। বিআরটিসির দোতলা বাস কেটে ছাদখোলা বাস বানিয়ে সানজিদার আক্ষেপ মিটিয়েছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। কথা দিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দেবেন নারী ফুটবলারদের।
কিন্তু দেয়া কথা রাখা এখন আকাশের চাঁদ। অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়ে গেছে বাফুফের। পেরিয়ে গেছে সাফ জয়ের ৮ মাস, এখনও কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচের দেখা পায়নি সাফজয়ীরা। এপ্রিল মাসের বেতন পায়নি নারী ফুটবলাররা। প্রতিশ্রুতি দিলেও বাড়েনি বেতন।
বছর যায় বছর আসে, আলোচনায় থাকেন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ কিংবা সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী। কিন্তু আলোচনার খোরাক হয় না দেশের ইতিবাচক ফুটবল। এই দেশ, এই মাটির প্রতিনিধিত্ব করে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। ফুটবল অন্যতম প্রতিনিধিত্বের মাধ্যম কিন্তু বারবার মুখ থুবড়ে পড়ে যায় ছেলেরা। মাথা উঁচু করে মেয়েরা দাঁড়ালেও টাকার অভাবে যেতে পারে না ম্যাচ খেলতে। শুধু কী তাই, কে স্পোর্টস ও বাফুফের আয়োজনে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। অনুষ্ঠানিকতাও হয়, কিন্তু বারবার পিছিয়ে যায় তারিখ। অনেক নাটকীয়তার পর ১০ জুন মাঠে গড়াচ্ছে দেশের ইতিহাসে নারীদের প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
এর আগে অনিশ্চয়তা আর হতাশা থেকে ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন নারী ফুটবলার। এখনও উত্তপ্ত বাফুফে, পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সফল কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন।
গত জানুয়ারিতে অলিম্পিক বাছাইয়ের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে অভিমান নিয়ে ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন সাফজয়ী দুই নারী ফুটবলার আনাই মগিনি এবং সাজেদা খাতুন। ২৫ মে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাফজয়ী দলের আরেক ফুটবলার সিরাত জাহান স্বপ্না। সাফজয়ী ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন দেশের ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন চীনে। তিনি মায়ের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছেড়েছেন বাফুফের ক্যাম্প। পরে স্বীকার করেছেন আঁখি, পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন চীনে। তাই বাংলাদেশ আরও এক স্বর্ণজয়ী ফুটবলার হারাচ্ছেন, এটাই সত্য।
পারিবারিক অজুহাত দেখিয়ে কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন দায়িত্ব ছাড়লেও বাফুফের সাথে যে তার বনিবনা হচ্ছে না, এসব উঠে আসে তার বক্তব্যেই।
উত্তপ্ত বাফুফে এখন ঠান্ডা হবে কীভাবে? ভেঙে পড়া ফুটবল পাড়ায় বাজছে বিদায়ের সুর। এক নারী ফুটবলার ইঙ্গিত দিয়েছেন, আরও অনেকেই ছাড়বে পেশাদার ফুটবল।
দেশের ফুটবল বাঁচাতে করণীয় সম্পর্কে কাজী সালাউদ্দিন বরাবরই গণমাধ্যমে একটি কথা বলেন; বাফুফের টাকা নেই। টাকা লাগবে।
ভেঙে পড়া ফুটবলকে টেনে তুলতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এই বরাদ্দ পেলে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশের ফুটবল, এমনটাই বিশ্বাস বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের।
৪৫০ কোটি টাকা অনেক বড় প্রকল্প। চলতি বাজেটে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই বরাদ্দ নেই। এরপরও এই অর্থবছর থেকেই সমন্বয় করে কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
মোবাইল ফোনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহিউদ্দীন আহমেদের কাছে ৪৫০ কোটি টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য না করে এড়িয়ে যান। অবসরপ্রাপ্ত সচিব মেজবাহ উদ্দিনের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
দেশের ফুটবলে নেই সাফল্যের ছোঁয়া, আগ্রহী হচ্ছে না কোনো স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। ভেঙে পড়া কাঠামোটার মাঝেই বসে থাকা সভাপতি এখনও ব্যর্থতা স্বীকার করতে নারাজ।
এডিএস/