প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩, ০১:১৪ এএম
টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির জায়গাটা নিয়ে টিম সাউদির সঙ্গে ইঁদুরদৌড়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছিলেন সাকিব আল হাসান। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিকেই বেছে নিলেন রেকর্ড পুনরুদ্ধাররের জন্য। সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি বাকিরাও জ্বলে ওঠায় বড় জয় পেল বাংলাদেশও। তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ বাংলাদেশের।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ৭৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বৃষ্টির কারণে ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে নির্ধারিত ১৭ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান করে আয়ারল্যান্ড। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।
প্রথম ম্যাচের পর এদিনও লিটন-রনির ব্যাটে ঝোড়ো সূচনা পায় বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৮১ রান তোলা বাংলাদেশ এদিন ৫ ওভারের পাওয়ারপ্লেতে তোলে বিনা উইকেটে ৭৩ রান।
আগের ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় দ্রুততম অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন রনি তালুকদার। আর এদিন টাইগারদের হয়ে দ্রুততম অর্ধশতকের ষোলো বছরের পুরনো রেকর্ডই ভেঙে দেন লিটন। ১৮ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এই ড্যাশিং উইকেটকিপার।
এদিন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পক্ষে উদ্বোধনী উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন লিটন-রনি। ১২৪ রানের জুটিতে তারা ভেঙে দেন ২০২১ সালে নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার গড়া ১০২ রানের ওপেনিং জুটির রেকর্ড। ২৩ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ে ৪৪ রান করে বেন হোয়াইটের বলে বিদায় নেন আগের ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকানো রনি।
রনি ব্যর্থ হলেও লিটন অর্ধশতক তুলে নেন। সেখানেই থামেননি তিনি। এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেও। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জার্সিতে এদিন তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার সুযোগ ছিল লিটনের হাতে। কিন্তু ব্যক্তিগত ৮৩ রানে বেন হোয়াইটের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। ৪১ বলে খেলা তার এই অসাধারণ ইনিংসটিতে ছিল ১০ টি চার ও ৩টি ছয়ের মার।
লিটন-রনির বিদায়ের পর সাকিব আল হাসান ও তাওহীদ হৃদয় এগিয়ে নিতে থাকেন বাংলাদেশের ইনিংস। ১৯ ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ১৯৯ রানবে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে বিদায় নেন তাওহীদ। ১৩ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৪ রান করেন তিনি।
পরের বলটি মার্ক আডায়ার হোয়াইড বল দিলে ২০০ পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। শেষ বলে ডাবল নেন নাজমুল হাসান শান্ত। তাতে নির্ধারিত ১৭ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ২০২। এ নিয়ে প্রথমবারের মতো টানা দুই ম্যাচে ২০০ এর বেশি রান করল টাইগাররা। সাকিব ৩ চার ও ২ ছয়ে ২৪ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
২০৩ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নামা আয়ারল্যান্ড প্রথম বলেই হারায় অধিনায়ক পল স্টার্লিংয়ের উইকেট। তাসকিন আহমেদের বল ব্যাটের কোনায় লেগে পেছনে গেলে দুর্দান্ত ডাইভে তা গ্লাভসবন্দী করেন উইকেটকিপার লিটন দাস।
দ্বিতীয় ওভারেই বল হাতে নেন সাকিব। প্রথম বলেই রনি তালুকদারের ক্যাচে পরিণত করেন লারকান টাকারকে। টাইগারদের অধিনায়ক পরের ওভারে এসে আরও দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন আয়ারল্যান্ডকে। এ ওভারে তিনি ফেরান রস আডায়ার ও গ্যারেথ ডেলানিকে।
সাকিব শো চলতে থাকে এরপরও। লাগাতার স্পেলে পরের ওভার করতে এসে ফের জোড়া উইকেট শিকার করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তৃতীয় বলে জর্জ ডকরেলকে এলবিডব্লুয়ের ফাঁদে ফেলার পর ওভারের শেষ বলে বোল্ড করেন ১৬ বলে ২২ রান করা হ্যারি ট্যাকটরকে। এই নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট শিকার করলেন সাকিব। পাঁচ উইকেট শিকারের পথে টিম সাউদিকে ছাড়িয়ে ফের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিতে পরিণত হন তিনি।
এরপর বল হাতে নিয়ে মার্ক আডায়ারকে ফেরান হাসান মাহমুদ। উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন প্রথম বলে উইকেট নেওয়া তাসকিনও। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে টানা দুই ওভারে নেন দুই উইকেট।
১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে ফিন হ্যান্ডকে এলবিডব্লুয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। এরপর পঞ্চদশ ওভারে বোল্ড করেন আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কার্টিস ক্যামফারকে। ৩০ বলে ৩ চার ও ৩ ছয়ে ৫০ রান করেন এই অলরাউন্ডার।
শেষ পর্যন্ত গ্রাহাম হিউম ১৭ বলে ২০ রান করে হারের ব্যবধান কমান। নির্ধারিত ১৭ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান করতে পারে আইরিশরা।
এই জয়ে ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ডকেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারাল বাংলাদেশ। এখন টাইগারদের সামএন টানা দ্বিতীয় সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ।