• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

বর্গাচাষি বাবার কন্যা মারুফা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০২:০৭ এএম

বর্গাচাষি বাবার কন্যা মারুফা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে

ক্রীড়া ডেস্ক

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চলমান নারীদের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে গ্রুপ সেরা হয়ে সুপার সিক্সে পা দিয়ে দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ দল। নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ খ্যাতি পাওয়া দলটি অন্যতম সদস্য প্রেসার মারুফা আক্তার। বল হাতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন প্রতিটি জয়ে। দরিদ্র পরিবারে আহার যোগাতে এক সময় বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরেছিল মারুফা। এখন সেই মারুফা বল হাতে ধরেছেন দেশের হাল, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে। এই পর্যায়ে আসার পিছনে মারুফার জীবনে রয়েছে এক সংগ্রাম মাখা ইতিহাস। 

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার এক দরিদ্র কৃষক আইমুল্লাহ’র ছোট মেয়ে মারুফা। বর্গাচাষি বাবা আর গৃহিনী মায়ের সংসারে তারা চার ভাইবোন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ভালো ফুটবল খেললেও ষষ্ট শ্রেণীতে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতে শুরু করেন ক্রিকেট। সেই থেকে ভালো লাগা, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিকেএসপিতে, খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলে। জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন অনেক আগেই। 

২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকায় বাবা আলিমুল্লার সঙ্গে বর্গা নেয়া জমিতে হালচাষ করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন মারুফা।

অভাব-অনটনের সংসারে দুবেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাই যেখানে সংগ্রামের মতো, সেখানে ক্রিকেট খেলা বিলাসিতা মনে হয়েছিল মারুফার। করোনাকালীন সময়ে পারিবারিক দূরবস্থায় ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার কথাও ভাবলেও এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯ বছর বয়সেই ডাক পান জাতীয় দলেও।

মারুফা এখন দক্ষিণ আফ্রিকাতে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারিয়ে সুপার সিক্সের মঞ্চে লাল-সবুজরা। আর সে তিন ম্যাচে দলের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী মারুফা।

দরিদ্রতা আর অভাব, মারুফা আখতার তার ছোট্ট জীবনে, এই শব্দগুলোর সঙ্গে বেশ পরিচিত। তবে মানুষ যে স্বপ্নের সমান বড়, তাইতো শত সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে মারুফাও নিজের স্বপ্নকে তাড়া করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।

মারুফা আক্তারের উৎসাহদাতা ও ক্রিকেট গুরু দুটোই বড় ভাই আলামিন। তার হাত ধরে ক্রিকেট খেলতে যেতো সে। খেলতো চাচাতো মামাতো ভাইদের সঙ্গে। মারুফা পেজ বোলিং মোকাবিলায় হিমসিম খেতো মাঠের ছেলেরাও।

ঢাকা পোস্টকে মারুফা বলেন, অভাব অনটনের কারনে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। তবে বিসিবির সহযোগিতায় আজ এতো দুরে আসতে পেরেছি। বিসিবির অনুদান না পেলে করোনার প্রথম ওয়েভের সময় থমকে যেত স্বপ্ন। 

ছোট বেলা থেকেই কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। করোনাকালে বাড়িতে অবস্থান করায় পুরো সময় বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেছিলাম। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই আল-আমিনের সাথে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত অনুশীলন করেছি। সবাই দোয়া করবেন দেশকে যেনো ভালো কিছু দিতে পারি।

একসময় মেয়েকে ক্রিকেট খেলতে বারণ করতেন, আর এখন সেই মেয়েকে দিয়েই নতুন করে স্বপ্ন দেখেন মারুফার বাবা-মা। তাদের প্রত্যাশা ব্যাট-বল দিয়েই নিজ গ্রামকে বিশ্বমঞ্চে চেনাবেন মারুফা। মারুফার বাবা আইমুল্লাহ বলেন, ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে আমার মেয়েটা বড় হয়েছে। আশা করি সে যেন দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। গ্রামবাসীর জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারে।

আর্কাইভ