প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩, ০৩:৩৯ এএম
কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনকে কেন্দ্র করে মানবেতর পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে ৪৫০ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাসুদ আর. সোবহান জনস্বার্থে গত ১৩ ডিসেম্বর এ রিট দায়ের করেন।
রিটে পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা), কাতারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কাতারের শ্রমমন্ত্রীকে বিবাদী করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাতার বিশ্বকাপে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন রিট আবেদনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনটির শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেন।
সোমবার ব্যারিস্টার মাসুদ আর. সোবহান রিট দায়ের করার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
ইংরেজি পত্রিকা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১০ বছর আগে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর এর প্রস্তুতিতে সেখানে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি দক্ষিণ এশিয়ান শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিশ্বকাপ আয়োজনের গৌরব অর্জনের পর থেকে কাতারে প্রতি সপ্তাহে গড়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার ১২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
পাকিস্তান বাদে ৪টি দেশে গার্ডিয়ানের নির্ভরযোগ্য সূত্র ও দেশগুলোর সরকারি হিসাব বলছে, ২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯২৭ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মৃত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ১৮ জন।
কাতারে পাকিস্তানের দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে ৮২৪ জন পাকিস্তানি শ্রমিক মারা গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে।
২০২০–এর শেষভাগের তথ্য এ হিসাবে নেই। কাতারে শ্রমিক সরবরাহে অনেক এগিয়ে থাকা ফিলিপাইন ও কেনিয়ার নাগরিকদের মৃতের সংখ্যা অবশ্য জানা যায়নি। এ কারণেই কাতারে প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর সঠিক সংখ্যাটি আরও অনেক বড় বলেই সন্দেহ গার্ডিয়ানের।
গত ১০ বছরে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য অভাবনীয় সব প্রকল্প হাতে নেয় কাতার। সাতটা নতুন স্টেডিয়াম বানানো হয়। এর সঙ্গে আরও অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে দেশটি। নতুন একটি বিমানবন্দরসহ নতুন রাস্তাঘাট ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এত বড় বড় সব স্থাপনা ও উন্নয়নকাজের জন্য অসংখ্য জনশক্তির দরকার হয় দেশটির।
মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে ফেয়ারস্কোয়ার প্রজেক্টস। এর পরিচালক নিক ম্যাকগিহান বিশ্বকাপের প্রকল্পের সঙ্গে প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়ে বলেন, ২০১১ সাল থেকে কাতারে যেসব প্রবাসী শ্রমিক মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর সেখানে গেছেন।
বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম বানানোর কাজ করছেন এমন অবস্থায়ই ৩৭ জন শ্রমিক মারা যান। যদিও বিশ্বকাপ আয়োজন কমিটি এর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যুকেই কাজের বাইরের ঘটনায় মৃত্যু বলে দাবি করেছে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা এসব দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্টেডিয়ামের জায়গায় কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন কিছু শ্রমিক, এমন ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। গত ১০ বছরে যত মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশই স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করেছে কাতার।
গার্ডিয়ান যে তথ্য পেয়েছে, সে অনুযায়ী বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের যতজন মারা গেছেন, তার ৬৯ ভাগকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলা হয়েছে। ১২ ভাগের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়। শুধু ৭ ভাগের মৃত্যুর সঙ্গে কাজের পরিবেশ জড়িত। আর ৭ ভাগ কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ৮০ ভাগই নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়াদের অধিকাংশই মানবেতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কাজ করেছেন। বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে আয়োজক দেশ কাতার।