প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২২, ০৭:৪৪ পিএম
পেনাল্টি শুট আউট জিততে হলে বেশ কিছু এক্স ফ্যাক্টর কাজ করে। অনেকে ভাবেন পেনাল্টি শুধুই ভাগ্য নির্ভর, কিন্তু এই ভাগ্যকে নিজের পক্ষে আনতে গেলেও প্রয়োজন স্কিল, কনফিডেন্স আর নার্ভকে কন্ট্রোলে রাখা।
২০২২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে আর্জেন্টিনা মোট দুটি পেনাল্টি শুটআউট জিতেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই টাইব্রেকারের নায়ক ছিলেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমি মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনার পেনাল্টি টেকাররা একদিকে ঠিকঠাক নিজেদের কাজ করেছে, এমির ঠেকানো নেদারল্যান্ডস ম্যাচে দুটি এবং ফ্রান্স ম্যাচে ১টি পেনাল্টি শটই তাই ম্যাচের পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে।
শুধু এই বিশ্বকাপ না, গত বছরের কোপা আমেরিকাতেও এমিলিয়ানো মার্টিনেজের পেনাল্টি সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। পেনাল্টি শুট আউটে এমির যে পাঁচটি কৌশল চোখে পড়ার মতো, সেগুলোই এখন লেখা হলো :
কথার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ভেবাচেকা :
গত কোপা আমেরিকায় কলম্বিয়ার বিপক্ষের প্রমাণ বেশ ভালোভাবে পাওয়া গিয়েছিল। যেহেতু সেই ম্যাচে পেনাল্টি শুট আউটের সময় কোনো দর্শক ছিল না, তাই এমি কিভাবে কলম্বিয়ার পেনাল্টি টেকার ইয়েরি মিনাকে উত্যক্ত করছিল, তা পরিষ্কারভাবে শোনা যাচ্ছিল। এমির এমন কথা বলা সে দিন কাজে লেগেছিল, ইয়েরি মিনা নিজের পেনাল্টি মিস করেছিলেন। ফাইনালেও দেখা যাচ্ছিল কথার মাধ্যমে ফ্রান্সের পেনাল্টি টেকার কালো মুয়ানিকে তিনি কনফিউজ করতে চাচ্ছিলেন। এ জন্য রেফারি তাকে হলুদ কার্ডও দেখান।
রেফারি, বল ঠিক জায়গায় নেই :
এমি যতবার পেনাল্টি শুট আউট ফেস করেছেন, প্রতিবারই শুট আউটের আগে রেফারিকে এমনটা বলেছেন। ফ্রান্স ম্যাচে এম্বাপ্পে এবং কোম্যানের পেনাল্টির পূর্বেও তাকে এমনটাই বলতে শোনা যায়। তার এমন দাবিতে রেফারি প্রতিবার একই উত্তর দেন, ‘না, বল ঠিক জায়গাতেই আছে।’ তবে বল সত্যিই ঠিক জায়গায় ছিল। হ্যাঁ, এমি নিজেও জানেন পেনাল্টি টেকার স্পটেই বল রেখেছেন, তবে পেনাল্টি টেকারকে চাপে ফেলার এটি আরও একটি কৌশল এমির।
পেনাল্টি ঠেকিয়েই সেলিব্রেশন :
একটি পেনাল্টি ঠেকানোই কিন্তু ম্যাচ জেতাতে যথেষ্ট নয়। এমনও হতে পারে নিজের দলের পেনাল্টি টেকাররা পরবর্তী পেনাল্টি কিকগুলো মিস করল, ফলে গোলকিপারের পেনাল্টি ঠেকানো বৃথা গেল। কিন্তু এমি মার্টিনেজ এমনটা ভাবেন না। টাইব্রেকারে শট ঠেকানোর পরই তাকে দেখা যায় উদযাপন করতে। এই উদযাপনের পেছনেও কারণ আছে। এমির এমন উদযাপন প্রকাশ ঘটায় তার আত্মবিশ্বাসের, আর এমির এমন আত্মবিশ্বাস নার্ভাস করে তোলে প্রতিপক্ষের পরবর্তী পেনাল্টি টেকারকে। এমনটাই হয়েছিল ফ্রান্স ম্যাচে। কিংসলে কোম্যানের পেনাল্টি এমি ঠেকানোর পর পরবর্তী পেনাল্টি টেকার শ্যুয়েমেনি পেনাল্টি মিস করে বসেন।
প্রতিপক্ষের চাপের পাহাড় বাড়ানো :
টাইব্রেকারে ফ্রান্সের তৃতীয় পেনাল্টি শটের কথা পুনরায় স্মরণ করলে দেখতে পারবেন, এমি মার্টিনেজ বলটি ছুঁড়ে পেনাল্টি টেকারের থেকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে নিজে হেঁটে গিয়ে বল নিয়ে আসতে হয় ফ্রান্সের পেনাল্টি টেকার শ্যুয়েমেনিকে। এতে করে কিছু সময় নষ্ট হয় তার, যা তাকে সাইকোলজিক্যালি অ্যাফেক্ট করে। যার ফলে তার নার্ভ বা প্রেসার বাড়িয়ে দেয়। এত চাপ বা এত নার্ভ, কোনোটাই নিতে পারেননি শ্যুয়েমেনি, মিস করে বসেন তার নিজের পেনাল্টি।
প্রতিপক্ষ গোলকিপারকে নিজের মতো হতে না দেয়া :
ওপরের পয়েন্টেই দেখলেন, কিভাবে প্রতিপক্ষের পেনাল্টি টেকারের কাছ থেকে বল সরিয়ে নিয়ে তাকে মানসিকভাবে দ্বিধায় ফেলেন এমি। তবে তা যাতে নিজের টিমমেটের সাঙ্গে না হয়, সে দিকেও লক্ষ্য রাখেন তিনি। প্রতিটি টাইব্রেকারেই প্রতিপক্ষের পেনাল্টি শট নেয়ার পর তাকে দেখা গিয়েছে বল নিজের টিমমেটের কাছে বুঝিয়ে দিতে, যাতে প্রতিপক্ষের গোলকিপার তার কৌশল অবলম্বন করে তার সতীর্থকে কনফিউজ না করতে পারে।
/এএল