প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ১০:৪৫ পিএম
তিন যুগ পর বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জেতার পর এর পেছনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। খুজে বের করা হয়েছে সাফল্যের কারণগুলোও। আর্জেন্টিনার সাফল্যের রহস্যের পেছনে এক ‘বিশেষ পানীয়’, এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছে!
বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পেছনে রহস্য কী, সেই আলোচনা কমবেশি সবখানেই হচ্ছে? খেলোয়াড়দের মাঝে ভালো বোঝাপড়া। ক্লাব পর্যায়ে সবাই সেরা ছন্দে ছিলেন। মেসি ইফেক্ট, কোচ লিওনেল স্কালোনির ট্যাকটিকস। এমন অনেক কিছুই বলা যায়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মেসিদের সাফল্যের পেছনে এক ‘বিশেষ পানীয়’র অবদান আছে। সকাল-বিকাল চায়ের বিকল্প হিসেবে তা পান করছেন মেসিরা। দারুণ উপকারী এই পানীয়ের নাম ‘ইয়েরবা মেট’।
দেখতে অনেকটা গ্রিন টি’র মতো হলেও এর কার্যকারিতা কয়েকগুণ বেশি। দক্ষিণ আমেরিকার বেশ সুপরিচিত পানীয় ইয়েরবা মেট। এটি হারবাল একটি উদ্ভিদ যা বৈজ্ঞানিকভাবে ‘আইলেক্স প্যারাগুয়েরিয়েনসিস’ নামে পরিচিত। ‘পবিত্র পানীয়’ হিসেবে এর ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে এবং এটি রন্ধনসম্পর্কীয় ঐতিহ্যেরও অংশ।
সামান্য তিক্ত স্বাদযুক্ত এই পানীয় মানসিক ক্লান্তি, অবসাদগ্রস্ততার মতো নির্দিষ্ট কিছু অসুস্থতার চিকিৎসায় ব্যবহার করে থাকেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা। প্রাচীনকালে অল্টো উরুগুয়ে অববাহিকার বাসিন্দারা ব্যাপকভাবে এটি ব্যবহার করতো।
পরবর্তীতে, বৃহৎ পরিসরে চাষ করা হয় এবং সাধারণ পানীয়ের প্রধান উপাদান হয়ে ওঠে। ‘ইয়েরবা মেট’কে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে, চিলির মতো দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় সংস্কৃতির প্রতীক মনে করা হয়। বর্তমানে আর্জেন্টিনা সবচেয়ে বেশি ইয়েরবা মেট উৎপাদন করছে।
নিউইয়র্ক টাইমস সাংবাদিক জেমস ওয়াগনার জানিয়েছেন, ব্রাজিল ১২ কেজি, উরুগুয়ে ২৪০ কেজি ইয়েরবা মেট নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে খেলতে যায়। তবে আর্জেন্টিনা নিয়েছে আরও বেশি। খেলোয়াড়, কোচ, স্টাফসহ ৭৫ জনের বহরের জন্য মোট ৫০০ কেজি (১১০০ পাউন্ড) ইয়েরবা মেট নেয় আলবিসেলেস্তেরা।
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের মুখপাত্র নিকোলাস নোভেলো জানান, কয়েকভাবে ইয়েরবা মেট পান করে থাকেন দলের খেলোয়াড়রা। কেউ হালকা স্বাদের জন্য স্টেমের সঙ্গে নেন। কেউবা কড়া স্বাদ পেতে স্টেম ছাড়াই পান করেন। অনেকে অন্যান্য হারবাল উপাদানের সাথে এই চা পান করেন। ঠান্ডা ও গরম উভয় অবস্থানে এটি পান করা যায়।
আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ছাড়াও ফ্রান্সের আঁতোয়ান গ্রিজম্যান ও পল পগবা এটির স্বাদ নিয়েছেন। বেনফিকার সাবেক আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো লোপেজ ইয়েরবা মেট নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।
লোপেজ বলেন, ‘আমি লিসবনে ৪ বছর কাটিয়েছি। ঘুরতে বের হওয়ার সময় প্রায়ই আমার হাতে ইয়েরবা মেট থাকতো। লোকজন আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে।’
বিশ্বকাপের আগে মেসিরা যে ইয়েরবা মেট নিয়ে গিয়েছেন তা উরুগুয়ের বাজারজাতকৃত। এ নিয়ে সমালোচনাও শুনতে হয়েছে আর্জেন্টিাইন ফুটবল ফেডারেশনকে (এএফএ)। আর্জেন্টিনার বিরোধী দলের কংগ্রেসম্যান লুই মারিও পাস্তোরি গত নভেম্বরে এএফএ’র সমালোচনা করে টুইট করেন।
তিনি বলেন, দেশে ১০-১২টি ভালো ব্র্যান্ড থাকা সত্ত্বেও আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন বেছে নিয়েছে উরুগুইয়ান প্রডাক্ট। এটা সত্যিই অগ্রহণযোগ্য। তবুও প্রতিনিয়িতই আলোচনার রসদ যুগিয়ে যাচ্ছে এসকল উপকরণ সমুহ।