প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২২, ০৬:৫৫ পিএম
আর মাত্র ১ দিন পর কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা নামবে। চূড়ান্তপর্বে লড়বে গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবং ফুটবল দুনিয়ার জনপ্রিয় মেসির দল আর্জেন্টিনা। এই বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ বলছেন এই বিশ্বকাপ ফুটবলে মেসি ২০ বছরের তরুণের মতো খেলছে । অপরদিকে নীরব এমবাপ্পে নীরবে তার সব প্রতিভা ফ্রান্সকে দিয়ে চলেছেন। দলকে টেনে এনেছেন ফাইনালে। নীরব একজন খেলোয়ার হিসেবে ইতোমধ্যে যার দলকে জরিমানা গুনতে হয়েছে, যদিও সে জরিমানা এমবাপ্পে নিজেই দিয়েছেন। এমবাপ্পে গত আসরে সেরা জুনিয়র ফুটবলার হয়েছিলেন। এবার কে হবেন সেটা ফাইনাল শেষে পরিষ্কার হবে। মেসি এবং এমবাপ্পে দু’জনের জাদুকরী খেলা দেখার জন্য গোটা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক-ভক্ত মুখিয়ে আছেন।
মেসি
লিওনেল মেসি কখনও প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে গেছেন, কখনও বা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার রেকর্ড ভেঙেছেন। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল করে বিশ্বকাপ–ইতিহাসে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতার আসন নিজের করে নিয়েছেন মেসি। পার করেছেন ১৯৯৪ থেকে ২০০২ তিন বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচ খেলে ১০ গোল করা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার রেকর্ড।
কাতার বিশ্বকাপে মেসির গোল পাঁচটি, এসিস্ট করেছেন তিনটি। আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে এখন মেসি। অনেকে সমালোচনা করে থাকেন মেসি ক্লাব ছাড়া তার দল আর্জেন্টিনার জন্য কিছুই করেন না। সেই সমালোচকদের মুখে চুনকালি দিয়েই মেসি নকআউট রাউন্ডের তিনটি ম্যাচেই পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। সব মিলিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন চারটিতে।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’–এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসিতে মুগ্ধ কিংবদন্তি বাতিস্তুতা বলেছেন, ‘আমার রেকর্ড মেসি ভেঙেছে, এতে আমি মোটেই কষ্ট পাইনি। এটা মেসির প্রাপ্য। যদি কোনো একজনের কাছে এই রেকর্ড হওয়া উচিত, সেটা মেসিই। মেসি এলিয়েন নয়, ও একজন মানুষ যে বিশ্বসেরা। যখন সেই মানুষটা আপনার রেকর্ড ভাঙবে, সেটা আপনাকে কষ্ট নয়, আনন্দ দেবে।’
মেসির লক্ষ্য কাপ ছুয়ে দেখা। ফাইনালে ফ্রান্সকে হারানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী মেসি। মেসি প্রসঙ্গে বাতিস্তুতার ‘আমি ভেবেছিলাম, ও আরও শান্ত থাকবে। কিন্তু মেসি তো ২০ বছরের তরুণের মতো খেলছে। মেসি বিশ্বকাপ জেতার জন্য মরিয়া। বিশ্বকাপ জিততেই ও কাতারে এসেছে। মেসি দলের মধ্যেই এর মনোভাব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফুটবলে এটাই দরকার। দলের মধ্যে বিশ্বকাপ জেতার মতো একটা ইতিবাচক শক্তি আছে। বিশ্বকাপ জেতার সব সামর্থ্যই আমাদের আছে।’
এমবাপ্পে
কাতার বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য রকম ‘মৌনব্রত’ পালন করে চলেছেন এমবাপ্পে। তার নীরবতা নিয়ে এরই মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। সেই কিলিয়ান এমবাপ্পে ফাইনালে উঠার পরও মুখ খুলেননি। কোনো কথাই নিজের থেকে বলেননি তিনি। সেমিফাইনালে মরক্কোকে হারিয়ে ফাইনালে উঠার পরপরই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা পোস্ট শুধু। এটিই হলো তার কাতার বিশ্বকাপ চলাকালে প্রথম পোস্ট।
পোস্টটিতে তিনি লেখেন, ‘পর পর দুটি বিশ্বকাপের ফাইনাল।’ এমবাপ্পের এই পোস্টের তাৎপর্য ফুটবলপ্রেমী মাত্রই জানেন। তবে কাতার বিশ্বকাপে তিনি যেভাবে ‘মৌনব্রত’ পালন করে চলেছেন, সেই নীরবতা ভেঙে তার এভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ হওয়াটা অবাক হওয়ার মতোই। কাতার বিশ্বকাপে মুখে কোনো কথাই বলছেন না এমবাপ্পে। যা বলার বলছেন মাঠে, পায়ের মাধ্যমে। এমবাপ্পের মুখে কুলুপ আঁটার কারণে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনকে এরই মধ্যে বিব্রত হতে হয়েছে ফিফার কাছে। এমনকি জরিমানাও গুনতে হয়েছে। তবে জরিমানার টাকাটা এমবাপ্পেই পরিশোধ করেছেন। কারণ, ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনকে জরিমানাটা করা হয়েছিল তার কারণেই। ম্যাচ-সেরা হয়েও রুটিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি না যাওয়ার কারণেই ফ্রান্সের ফুটবল ফেডারেশনকে জরিমানা করা হয়।
পরে অবশ্য ম্যাচ-সেরা হয়ে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন এমবাপ্পে। তবে সংবাদ সম্মেলনে বলা ঐ দু-চার কথা বাদে পুরো টুর্নামেন্টেই অবিশ্বাস্য নীরব এমবাপ্পে।
এনএমএম/এএল