প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২২, ০৫:৪১ পিএম
অশ্রুসিক্ত চোখে মাঠ ছাড়লেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বিদায়ের সময় তার সতীর্থরাও কাঁদলেন। সেই সঙ্গে কাঁদালেন সারা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তদের।
৩৭ বছর বয়সী এ কিংবদন্তি খেলোয়াড় সারা বিশ্বের খেলোড়দের প্রেরণা হয়ে থাকবেন। তার খেলার কৌশল, সাহস আগামী প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে।
গতকাল (১০ ডিসেম্বর) মাঠ ছাড়ার শেষ দিনে তিনি তার দলকে জেতাতে পারলেন না। তুখোর এই খেলোয়ার শেষ দিনে মনকষ্ট নিয়ে মাঠ ছাড়লেন। একই সঙ্গে কাতার বিশ্বকাপ বিদায় নিলেন তিনি, বিদায় নিলো পর্তুগাল। কে জানতো মরক্কো রোনালদোর শেষ খেলায় এমন বিচ্ছেদ ঘটাবে। পর্তুগালকে হারিয়ে মরক্কো ইতিহাস গড়লো।
বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, কানাডার গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় পা রাখলো মরক্কো। এর আগে স্পেনকেও হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে এবং সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য পর্তুগালকে হারায়। এটি বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
২০২২ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো হয়ত ভুলে যাবেন। কিন্তু তার মধ্যে ক্ষত তাড়িয়ে বেড়াবে। ইতিহাসের পাতায় তার শেষ খেলার শেষ পরাজয়ের কথা লেখা থাকবে। তিনি হয়ত এই স্মৃতি মনে রাখবেন কি না জানি না। কিন্তু তিনি পর্তুগালের বন্ধ্যা ফুটবলে দিয়েছেন উর্বরতা। বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন তার ক্রীড়া কৌশল। তিনি ২০১৬ ইউরোতে পর্তুগালকে এনে দিয়েছিলেন ইতিহাসের একমাত্র শিরোপা। কিন্তু সেই পর্তুগাল দলের একাদশেও জায়গা হারিয়েছেন। তার জীবনের শেষটা আরও সুন্দর হতে পারত কিন্তু তা হলো না।
রোনালদো কাতার বিশ্বকাপে পর্তুগাল এসেছিলেন সেরা দল নিয়ে। ব্রুনো ফার্নান্দেজ, বের্নার্দো সিলভা, রুবেন দিয়াস, জোয়াও ফেলিক্স, রাফায়েল লিয়াওদের উত্থানে পর্তুগাল অন্যতম ফেবারিট দল হিসেবেই কাতারে পা রেখেছিলেন। খেলছিলেনও ভালো কিন্তু শেষ পথে এসে ছিটকে পড়লেন, হারিয়ে গেল বিশ্বকাপ জয়ের মিশন। কোয়র্টার ফাইনালের শেষ ম্যাচের প্রথমার্ধে পর্তুগালের ব্যর্থ চেষ্টা দেখে বাধ্য হয়ে কোচ ফার্নান্দো সান্তোস নামিয়েছিলেন রোনালদোকেই। তবে পারলেন না তিনিও।
বিশ্বকাপ শিরোপাটা এনে দিতে না পারলেও পর্তুগালের জার্সিতে রোনালদোর অর্জন অমরত্ব! ২০০৩ সালে জাতীয় দলে রোনালদোর অভিষেক হয়। ২০০৪ সালে ইউরোতে ফাইনাল খেলেন পর্তুগালের হয়ে। সে খেলায় গ্রীসের কাছে হেরে যায় পর্তুগাল। ২০১৬ সালে ইউরো শিরোপা এনে দিয়েছিলেন রোনালদো পর্তুগালকে।
পর্তুগালের হয়ে রোনালদো ৫ বার বিশ্বকাপ খেলেছেন। রোনালদোর উত্থানের পর পর্তুগাল আর কখনোই বিশ্বকাপে অনুপস্থিত ছিল না। ফিগো, রুই কস্তা, ডেকোদের প্রজন্মের বিদায়ের পর তিনিই হয়েছিলেন সর্বেসর্বা। প্রতিটি বিশ্বকাপে তিনি পর্তুগালের পতাকা উড়িয়েছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ শিরোপা জেতা আর হয়নি, শেষবারেও হলো না।
তিনি পাঁচ বিশ্বকাপে ২০ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন। এবার তিনি শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই স্বপ্ন আর সফল হলো না। ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন তার অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। জীবনেরশেষ খেলায় রেফারির বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে কাঁদলেন, গায়ের জার্সি অশ্রুসিক্ত হলো। মাথা নিচু করে তিনি বেড়িয়ে গেলেন। এর আগে উপস্থিত দর্শকদের জানলেন বিদায়। পিছনে রেখে এলেন সবুজ মাঠ, ভক্তদের করতালি। বিদায় বন্ধু বিদায়।
কিউ/এএল