প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২২, ০৫:১৯ পিএম
এটাই যে মেসির শেষ বিশ্বকাপ। শিরোপা জেতার জন্য মরিয়া মেসিসহ আর্জেন্টিনা দলের সবাই। তবে শিরোপার দুই সিড়ি আগেই আলবিসেলেস্তাদের বড় বাধা। সেই বাধা আর কেউই নয়। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি ইউরোপিয়ান পরাশক্তি নেদারল্যান্ডস। যদিও ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে টাইব্রেকারে ডাচদের হারিয়েই ফাইনালে গেছিল মেসিরা। তবে এই ম্যাচে ভাগ্য কোন দিকে গড়াবে তা বুঝা যাবে মাঠের খেলায়।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব। দিনের প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। দিনের অপর ম্যাচে মাঠে নামবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাও। প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সাদা-আকাশী ডোরাকাটা এবং কমলা রঙের জার্সি পরিহিত দুই দলের লড়াই।
আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে দুইবার। অপরদিকে নেদারল্যান্ডস তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপা ছোঁয়ার সুযোগ হয়নি। আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের এই ম্যাচে সবার নজর থাকবে লিওনেল মেসি ও ভার্জিল ফন ডিকের দিকে।
হাইভোল্টেজ এই ম্যাচের একটা মজার দিক রয়েছে। চলমান কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে কম বয়সী কোচের বিপক্ষে সবচেয়ে বয়স্ক কোচের লড়াই। প্রথমবারের মতো বড় আসরে কোচের দায়িত্ব পালন করতে আসা ৪৪ বছর বয়সী আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি মুখোমুখি হবেন ৭১ বছর বয়সী ডাচ কোচ লুইস ফন গাল।
কাতার বিশ্বকাপের হট ফেভারিট দল হয়েই মিশন শুরু করে আর্জেন্টিনা। তবে আলবিসেলেস্তেদের যাত্রাটা মোটেও ভালো হয়নি। সৌদি আরবের কাছ পরাজয়ের পর পড়ে দারুণ বিপদে। গ্রুপ পর্বের পরের ম্যাচগুলোই আর্জেন্টিনার জন্য হয়ে উঠে নকআউটের ম্যাচ। হারলেই বাদ, এমন সমীকরণে মাঠে নামতে হয় মেসিদের।
তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গ্রুপ সেরা হিসেবেই শেষ ষোল নিশ্চিত করে লাতিন আমেরিকার দলটি। দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে মেসিরা। এবার তাদের নেদারল্যান্ডস বধ মিশন।
অপরদিকে ডাচদের বিশ্বকাপটা দারুণভাবেই শুরু হয়। গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলতে পৌঁছানো দলটি যুক্তরাষ্ট্রকে খুব সহজেই হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। সমালোচকরা দুর্বল বললেও ক্রমেই কার্যকরি হয়ে উঠছে ডাচদের আক্রমণ।
শঙ্কা রয়েছে আজকে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডের ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে তো? বিশ্বকাপ এবং প্রীতি ম্যাচ মিলিয়ে দুই দলের বিগত নয়বারের সাক্ষাতে আর্জেন্টিনা কখনো নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে হারাতে পারেনি নেদারল্যান্ডসকে। আর নয় দেখায় আর্জেন্টিনা থেকে এগিয়েই আছে ডাচরা।
১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে প্রথম সাক্ষাৎ হয় দেশ দুটির। যেখানে আর্জেন্টিনাকে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করে নেদারল্যান্ডস। একই বছর দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হয় ডাচ ও আর্জেন্টিনা। সেটি আবার বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রথমবার। সেখানেও আলবিসেলেস্তেদের বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ডাচরা।
মাঝে এরপর ১৯৭৮ ও ১৯৭৯ সালে পুনরায় দেখা হয়। তবে এবার আর পেরে উঠেনি ডাচরা। ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ মঞ্চে দেখা হয় তাদের, তাও সেটি ফাইনালে। যেখানে মারিও ক্যাম্পাসের জোড়া গোল ও ড্যানিয়েল বার্তোনির গোলে ৩-১ এ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। পরের বছর চতুর্থবারের মতো তাদের দেখা হয় ফিফা সেলিব্রেশন কাপে। যেখানে উভয় দলই মূল সময়ে গোল করতে ব্যর্থ হয়। অতিরিক্ত মিনিটে খেলা গড়ালেও সেখানে গোলশূন্য সমতা বিরাজ করায় খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে। যেখানে আর্জেন্টিনা ৮-৭ গোলে জয়লাভ করে।
এরপর ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ফের মুখোমুখি হয় দুই দেশ। সেবার অবশ্য ২-১ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নেদারল্যান্ডস। ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হয় তাদের মধ্যে। প্রথমটি ১-১ ফলাফল হয়। পরেরটি ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে ডাচরা।
২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপে পুনরায় গ্রুপ পর্বের ম্যাচে দেখা হয় দু’দলের। যেখানে গোলশূন্য ড্র হয় ম্যাচটি। ২০১৪ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে শেষ মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস। ১২০ মিনিট ম্যাচ ড্র থাকায় পেনাল্টি শুটআউট হয়। তাতে রোমেরোর কল্যাণে ৪-২ গোলে জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে গিয়েছিল তারা।
সব মিলিয়ে ৯টি ম্যাচে ডাচরা জয় পায় ৪টি ম্যাচে। অমীমাংসিতভাবে শেষ হয় ২টি ম্যাচ। আর্জেন্টিনার কাছে হারতে হয় ৩ বার। তবে বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানে দুই দেশই সমান। ৫টির মধ্যে আর্জেন্টিনা জিতেছে ২টি, হেরেছে ২টি আর ড্র একটি। ডাচরাও তাই ২টি জয়, ২টি হার ও একটি ড্র।
এআরআই/এএল