• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জয় দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২, ০৭:৪০ পিএম

জয় দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু বাংলাদেশের

প্রতীক ওমর

নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে জয় দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ। তাসকিনের চার শিকারে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৫ থামে নেদারল্যান্ডসের ইনিংস। ফলে ৯ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। এর আগে ৮ উইকেটে ১৪৪ রান করে সাকিব বাহিনী।

ব্যাটিংটা সন্তোষজনক না হলেও এদিন বোলিংয়ে দাপট দেখিয়েছেন সাকিব-তাসকিনরা। তাসকিন আহমেদ শুরুতেই দারুণ সূচনা এনে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। প্রথম দুই বলেই তুলে নিয়েছেন দুই উইকেট। এরপর সাকিবের ওভারে দুই রান আউট। সব মিলিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নেদারল্যান্ডস। পরে অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন কলিন অ্যাকারম্যান। তিনি একাই লড়াই করলেন বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে। ৪৮ বলে ৬২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দেন।

অ্যাকারম্যানের দৃঢ়তায় ১৫ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও ১৩৫ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছে নেদারল্যান্ডস। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। ২ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। ১টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান এবং সৌম্য সরকার। ইনিংসের একেবারে শেষ বলে এসে অলআউট হয়ে যায় ডাচরা।

এর আগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) হোবার্টে টসে জিতেই বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নেদ্যারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। টস হেরে ব্যাট করতে নামেন সৌম্য সকরকার ও নামজুল হোসেন শান্ত। সৌম্য ১০০ স্ট্রাইক রেটে রান তুললেও ওপরপ্রান্তে শান্ত হাত খুলেই খেলেন। তবে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে ভান মেকেরিনের বুক বরাবর করা বাউন্সের গতি বুঝতে না পেরে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য।

১৪ বলে ১৪ রানে তিনি ফিরলে পরের ওভারে পঞ্চম স্টাম্প থেকে টিম প্রিঙ্গেলকে স্লগ সুইপ করতে ক্যাচ আউট হন শান্তও। ২০ বলে ২৫ রান করে আউট হন এই ওপেনার। দুই ওপেনারকে হারিয়ে বসার ধাক্কা সামাল দিতে পারেননি সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস।

১১ বলে ৯ রান করে ভ্যান বিককে মারতে গিয়ে ৩০ গজের ভেতর তালুবন্দি হন লিটন। খানিক পর শালিজ আহমেদকে স্লগ করতে গিয়ে বাউন্ডারিতে তালুবন্দি হন সাকিবও। দশম ওভারে আফিফ হাঁকান ইনিংসের প্রথম ছক্কা। মেকেরিনের বলের লাইন বুঝতে না পেরে বোল্ড হন ইয়াসির। এরপর আফিফকে সঙ্গ দিতে নামে নুরুল হাসান। দুজন মিলে ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে নিয়ে যান শতরানের ওপর।

তাদের ব্যাটে বাংলাদেশ আরও যোগ করে ৪৪ রান। তবে ১৮তম ওভারে বাস ডি লিডকে পেছনে খেলতে গিয়ে আউট হন সোহান। দলীয় ১২০ রানে ক্রিজে নেমে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান মোসাদ্দেক। কিন্তু ওভারের শেষ বলে আফিফকেও উইকেটের পেছনে আউট করেন লিড। ২৭ বলে ৩৮ রান করে আউট হন এই ব্যাটার। শেষ ১২ বলে বাংলাদেশের সুযোগ ছিল দেড়শ‍‍`র ঘরে পা দেয়ার। কিন্তু লোয়ার অর্ডারে নেমে তাসকিন দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আউট হন ফ্রেড ক্লাসেনের বলে।

শুন্য রানে তিনি ফিরলে পরের ৩ বলে আসেনি কোনো রান। শেষ ওভারের শুরুর ২ বলে কোন রান নেননি মোসাদ্দেক। কিন্তু তৃতীয় বলে তার ছক্কায় বাংলাদেশ পৌছায় ১৪০‍‍`র ঘরে। শেষ ৩ বলে একবার জীবন পেয়ে এই ব্যাটার আরও যোগ করেন ৪ রান। বাংলাদেশ পায় ১৪৪ রানের পুঁজি। মোসাদ্দেক অপরাজিত থাকেন ২০ রানে।

জয়ের জন্য ১৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ২ উইকেট হারালো নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশের হয়ে বোলিং ওপেন করেন তাসকিন আহমেদ এবং বল করতে এসে প্রথম বলেই উইকেট নিলেন তিনি। ফিরিয়ে দেন ডাচ ওপেনার ভিক্রমজিত সিংকে।

পরের বলেই তিনি ফিরিয়ে দিলেন বাস ডি লিডিকে। টানা দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে ডাচরা যেমন বিপদে পড়েছে, তেমনি হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছেন তাসকিন আহমেদ। যদিও শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিকটি আর হলো না তার।

তাসকিনের প্রথম বলেই স্লিপে ক্যাচ দেন ভিক্রমজিত সিং। একেবারে নিচ দিয়ে যাওয়া বলটির নিচে হাত রেখে ক্যাচ তালুবন্দী করেন ইয়াসির আলী রাব্বি। টিভি রিপ্লে দেখে এরপর ক্যাচে আউটের সিদ্ধান্ত দিতে হয়েছে আম্পায়ারকে। পরের বলটি ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গিয়ে জমা পড়ে নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে।

তাসকিনের দুর্দান্ত প্রথম ওভারের পর এবার বাংলাদেশ দলের ফিল্ডারদের দুরন্ত ফিল্ডিংয়ের মুখোমুখি হয় নেদারল্যান্ডস। পরপর দুই ব্যাটারকে রানআউট করে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দিলো ফিল্ডাররা।

চতুর্থ ওভারে বল করতে আসেন সাকিব আল হাসান। ওভারের দ্বিতীয় বলে ১ রান নেন ম্যাক্স ও’দাউদ। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে ক্রিজের অর্ধেক গিয়ে ফিরে আসতে গেলে আফিফের থ্রো আর সাকিবের ক্ষিপ্র গতির ফিল্ডিংয়ে রানআউট হয়ে যান তিনি।

এক বল বিরতি দিয়ে আবারও রানআউট। এবার রানআউট হলেন টম কুপার। বলটি বাউন্ডারি হয়ে যেতো। এক ফিল্ডারের গায়ে বল লাগার কারণে গতি পরিবর্তন হয়ে যান। নাজমুল হোসেন শান্ত দৌড়ে গিয়ে বাউন্ডারি বাঁচান এবং এরপর থ্রো করেন উইকেটরক্ষন সোহানের কাছে। তৃতীয় রান নিতে যাওয়া টম কুপার ততক্ষণে ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি। টিভি রিপ্লে দেখে রানআউট দিলেন আম্পায়ার।

এরপরই একটা ভালো জুটি গড়ার চেষ্টা করে নেদারল্যান্ডস। ৪৪ রান তুলে ফেলেন স্কট এডওয়ার্ডস এবং কলিন অ্যকারম্যান। এই জুটিকে ভেঙে দেন সাকিব আল হাসান। ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে পঞ্চম উইকেট পড়ে নেদারল্যান্ডসের। সাকিবের বলে স্কট এডওয়ার্ডস থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন হাসান মাহমুদের হাতে। এডওয়ার্ডস ২৪ বলে ১৬ রান করে যান।

এরপর ১৩তম ওভারের ৪র্থ বলে টিম প্রিঙ্গলকে বোল্ড করেন হাসান মাহমুদ। ৬ বলে ১ রান করে আউট হন তিন। ওই ওভারেরই দ্বিতীয় বলে প্রিঙ্গলের ক্যাচ মিস করেন নাজমুল।

এর মধ্যে আরও একবার বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হযে যায়। ১০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর আবার খেলা শুরু হয়। খেলা শুরু হতে না হতেই হাসান মাহমুদের বলে আউট হয়ে যান লোগান ফন বিক। ১৯ বছর বয়সী শারিজ আহমেদ ৮ বলে ৯ রান করে আউট হন। এর মধ্যে অ্যাকারম্যান হাফ সেঞ্চুরি করে মারমুখি হয়ে ওঠেন। তাকে ফেরানোর মূল কাজটি করলেন তাসকিন আহমেদ।

শেষ মুহূর্তে ১৪ বলে ২৪ রান করে পল ফন মিকেরেন পরাজয়ের ব্যবধান কমান শুধু।

এদিন কৃপণ বোলিং করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। মাত্র ২০ রান দিলেও তিনি কোনো উইকেট নিতে পারেননি। তবে সবচেয়ে কৃপণ ছিলেন হাসান মাহমুদ। ৪ ওভারে তিনি দিয়েছেন কেবল ১৫ রান। সাকিব ছিলেন সবচেয়ে খরুচে। ৪ ওভারে তিনি দিয়েছেন ৩২ রান।

এআরআই

আর্কাইভ