প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২২, ০২:৪৩ এএম
করোনা মহামারির কারণে পরপর দুই বছর বিশ্বকাপ, কোনো দলের জন্য সম্ভাবনা, কোনো দলের জন্য চাপ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাবই বেশি। ২০ ওভারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৭টি। এর মধ্যে ৬টি জয়ই প্রাথমিক পর্বে। সেই ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর আর কখনোই মূল পর্বে জয়ের দেখা মেলেনি। তবে এবার অস্ট্রেলিয়ায় চাপকে উড়িয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে দলের জয় খরা কাটাতে চায় টাইগাররা।
আর সে লক্ষ্য নিয়েই নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ব্যর্থ মিশন শেষে বিশ্বকাপের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছে বাংলাদেশ দল। ত্রিদেশীয় সিরিজে ৪ ম্যাচের ৪টি হারলেও টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম শোনালেন আত্মবিশ্বাসের সুর। অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে এখানকার কন্ডিশন তার জানাশোনা। এছাড়া নিউজিল্যান্ডে থেকে খেলে আসায় সাকিব-সৌম্যরা কন্ডিশন নিয়েও ধারণা পেয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। শ্রীরাম বলেন, অনেক কিছুই শিখেছি। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় পা দেয়ার ঠিক একদিন আগে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে দুটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গায় দলে এসেছেন সৌম্য সরকার ও শরিফুল ইসলাম। শ্রীরামের দাবি, খেলোয়াড়দের ক্ষমতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে তার। প্রতিপক্ষ দেখে সাজানো হবে একাদশ। এখানে আসার আগে সব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিয়েই এসেছে বাংলাদেশ দল।
শ্রীরামের ভাষ্যমতে, `আমাদের ধারণা পরিষ্কার। আমরা জানি আমাদের সেরা দলটা কেমন। সেরা দল মানে একটা দল নয়, প্রতিপক্ষ দেখে সেরা দলেও পরিবর্তন আসে। কিন্তু মানসিকভাবে খুব পরিষ্কার ধারণা নিয়ে এখানে এসেছি। আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জেনেছি। কাকে কোন ভূমিকা দিতে হবে তা জানা আছে। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আমাদের কম্বিনেশন কেমন হবে তা জানি। আমার মনে হয় আমরা অনেক কিছুই শিখেছি।`
অস্ট্রেলিয়ার মাঠগুলো বড় হওয়ায় বোলারদের জন্য সুবিধা থাকবে জানিয়ে শ্রীরাম বলেন, `মাঠগুলো বড়, বোলারদের ভুল করার সুযোগ কম থাকবে। ব্রিসবেন মাঠের বাউন্ডারি চারকোনা, সিডনি অনেক বড় মাঠ, অ্যাডিলেডের সোজা বাউন্ডারি বড়। তাই আমাদের মাঠের সীমানার সঙ্গে ও কন্ডিশনের দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। তবে মাঠের সাইজ বোলারদের একটু হলেও স্বস্তি দেবে।`
২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে সফল হয়েছিল বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল লাল-সবুজের দলটি। এবার ভিন্ন ফরম্যাট হলেও সর্বোচ্চটা দিয়েই লড়তে চায় বাংলাদেশ। শ্রীরামের দাবি, নিজেদের দিনে যে কোনো প্রতিপক্ষকে হারানোর ক্ষমতা রাখে তার শিষ্যরা। শ্রীরাম আরও বলেন, `আমরা আমাদের সেরাটা দিতে চাই। সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়াই করতে চাই। আমরা চাইছি ছেলেদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাসটা আসুক যে নিজেদের দিনে আমরা যেকোনো দলকেই হারিয়ে দিতে পারি। প্রস্তুতিটাই আসল এখানে। আর নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে আমরা আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।`
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো ফলের প্রত্যাশা নিয়ে মাসখানেক আগে কোচিং প্যানেলের পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গকে সরিয়ে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার এই শ্রীধরন শ্রীরামকে দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চমক দেখাতে পারেননি এই ভারতীয় কোচ। তার অধীনে এশিয়া কাপে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ দল। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেরই প্রস্তুতি হিসেবে আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ আয়োজন করে, যেখানে বাংলাদেশ দল ২-০তে সিরিজ জয় লাভ করলেও প্রথম ম্যাচে বেশ কষ্টার্জিত জয়ই পেতে হয়েছে সোহানের দলকে।
অন্যদিকে, সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দল জয় পেলেও দাপুটে পারফরম্যান্স পরিলক্ষিত হয়নি টিম বাংলাদেশ থেকে। এমতাবস্থায়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেমন করবে বাংলাদেশ তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়েছে ভক্তদের মাঝে।
তার ওপর আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। যেখানে উইকেটের সহায়তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই দাপট দেখাবে পেসাররা। বাংলাদেশ দলকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে পেসারদের দিকেই অধিক মনোযোগ রাখতে হবে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ পেস লাইনকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফিজের সাদামাটা পারফরম্যান্স বাংলাদেশ দলের জন্য বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে, বিশ্ব আসরের আগে মোস্তাফিজের নিষ্প্রভ হয়ে যাওয়াটা পুরো দলের জন্যই বেশ চিন্তার কারণ। পেসারদের পারফরম্যান্সের উন্নতি না হলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে এই পেস বিভাগ। এছাড়া এবারের বিশ্বকাপে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদেরও। কঠিন কন্ডিশনে নিজেদের সামনে যে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে ব্যাটারদের জন্য সেটি ব্যাটাররাও বেশ ভালো করেই জানেন। পারফরম্যান্সের কারণে দলের অভিজ্ঞ ও সিনিয়র ক্রিকেটার রিয়াদ দলে সুযোগ না পাওয়ায় সাকিবের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। এছাড়া আফিফ, লিটন দাস, সোহান, মোসাদ্দেক সৈকতকেও ব্যাট হাতে দায়িত্বশীল এবং কার্যকরী ইনিংস খেলতে হবে।
আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল এশিয়ার দুই শক্তিশালী ভারত, পাকিস্তানের পাশাপাশি লড়বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও। গ্রুপ পর্ব পার হতে হলে ভারত, পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে হারাতে হবে। আর সেজন্য শুধু এককভাবে ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে ভালো করলেই হবে না, ক্রিকেটের তিন বিভাগেই নিজেদের সেরাটা দিতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে সেটি যদি সঠিকভাবে মাঠে প্রয়োগ করতে পারে তাহলে বিশ্বকাপে চমক দেখানোর সামর্থ্য রয়েছে বাংলাদেশ দলের। সেই সামর্থ্য দেখানোর কাজটুকু মাঠে কতটুকু করতে পারবে সাকিব-লিটন-আফিফরা সেটি সময়ই বলে দিবে।
যদিও মেলবোর্নে আইসিসি আয়োজিত `ক্যাপটেইন্স ডে লাইট` অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাকিব আল হাসান তার বিশ্বকাপ ভাবনায় আশার কথা বলেছেন। সাকিবের কাছে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কেমন প্রত্যাশা করছেন সমর্থকরা।
জবাবে সাকিব বলেন, আমাদের দলটা রোমাঞ্চকর। বেশিরভাগই নতুন। এটা তাদের জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা হবে। আমরা সবাই অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি খেলব। আর প্রস্তুতির ব্যাপারে বলতে গেলে, আমরা বেশ ভালোই প্রস্তুতি নিয়েছি। যদিও এশিয়া কাপ এবং ত্রিদেশীয় সিরিজে আমরা ভালো করিনি। তবে অস্ট্রেলিয়ায় ভালো করতে কী করতে হবে, সেটা আমরা এখন জানি।
প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেন, `আমি মনে করি আমরা একটি খুব এক্সাইটিং দল পেয়েছি, আমাদের বেশিরভাগই নতুন, তাই তাদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে। আমিসহ আমরা সবাই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি খেলছি, তাই এটি নতুন অভিজ্ঞতা।`
তবে যে যাই বলুক না কেন, ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে প্রতিটি বলই যেন নতুন এক অভিজ্ঞতা, নতুন এক রোমাঞ্চ। এই বুঝি বেল পড়ল, এই বুঝি সীমানা ছাড়ালো। কখনো হয়তো বোঝাই গেল না, কি থেকে কি হয়ে গেল। পলে পলে অনিশ্চতার অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ যেন ঘিরে থাকে এই খেলায়। আর সে জন্যই বলা হয়, ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা!
আমরা মাঠের বাহিরে থেকে যত কিছুই ভাবিনা কেন, আসল খেলা খেলতে হবে খেলোয়াড়দেরই। তারাই মাঠের নায়ক। এই নায়কেরা যেদিন জ্বলে উঠবেন সেদিন উৎসবের আলো জ্বলবে সারা দেশে। এবারের টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপে সেরকমই উৎসব করতে চায় ক্রিকেট পাগল বাংলাদেশিরা।
জেডআই/