প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২২, ১২:০৫ এএম
আজ বুধবার, ৫ অক্টোবর। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্মদিন। ১৯৮৩ সালের এই দিনে নড়াইল শহরের চিত্রা নদীর পাশে আলাদাৎপুর গ্রামে নানা বাড়িতে মা হামিদা মর্তুজার কোল আলো করে জন্ম নেন তিনি। জীবনের ৩৮ বসন্ত কাটিয়ে ৩৯তম বছরে পা দিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এ ক্রিকেটার। জন্মদিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুভেচ্ছায় ভাসছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি।
মাশরাফির জন্মদিনে ফেসবুকে নিজের ভেরিফয়েড পেজে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন কিংবদন্তি. আপনার জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইল।’
জাতীয় দলের তরুণ অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী হাসান মাশরাফিকে নিয়ে লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন মাশরাফি ভাই, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।’
মাঠের ক্রিকেটের মাশরাফির পুরোনো বন্ধু নাফিস ইকবাল শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন মাশরাফি বিন মুর্তজা। আপনার সঙ্গে কাটানো সময়গুলো বেশ উপভোগ্য। ভালো থালবেন।’
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান ও মাশরাফিকে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন চ্যাম্প। দিনটির জন্য অনেক শুভকামনা’
মর্তুজা বাংলাদেশের সফলতম পেস বোলারদের একজন। আক্রমণাত্মক, গতিময় বোলিং দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতেই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্টবোলার অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কেড়েছিলেন, যিনি কিনা তখন দলটির অস্থায়ী বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন। রবার্টসের পরামর্শে মাশরাফিকে বাংলাদেশ এ-দলে নেয়া হয়।
২০০১ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থেকে যায়। মাশরাফি অবশ্য অভিষেকেই তার জাত চিনিয়ে দেন ১০৬ রানে চারটি উইকেট নিয়ে। গ্র্যান্টফ্লাওয়ার ছিলেন তার প্রথম শিকার। মাশরাফির প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচও ছিল এটি। তিনি এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী ৩১তম খেলোয়াড় এবং ১৮৯৯ সালের পর তৃতীয়। একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয়। অভিষেক ম্যাচে তিনি আট ওভার দুই বলে ২৬ রান দিয়ে বাগিয়ে নেন দুটি উইকেট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ৬০ রানে চার উইকেট নেওয়ার পর আবার তিনি হাঁটুতে আঘাত পান।
২০০৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে একটি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তিনি ভালো বল করেন। ২০০৬ ক্রিকেট পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারি। তিনি এ সময় ৪৯টি উইকেট নিয়েছেন।
২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ে মর্তুজা ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ৩৮ রানে চার উইকেট দখল করেন। মাশরাফি একজন মারকুটে ব্যাটসম্যান। ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলায় তিনি পরপর চার বলে ছক্কা পেটান। সেই ওভার থেকে তিনি ২৬ রান সংগ্রহ করেন, যা কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের জন্য এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ১১ বার চোটের কারণে দলের বাইরে যেতে হয়েছে মাশরাফিকে। চোটই তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ২০১১ সালের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। ২০১৭ সালে ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা-থেকে অবসর নেন। মাশরাফি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার, যে অধিনায়ক থাকা অবস্থায় অবসর নেন।
২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে হোম সিরিজে তিনি অধিনায়কত্ব পান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২০ সালের ৬ মার্চ সফররত জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তৃতীয় ওডিআই ম্যাচের পর ওডিআই দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে যান। শেষ ওডিআইয়ে জয় নিয়ে অধিনায়কত্ব ছাড়লেও খেলা চালিয়ে যাবেন, এমনটা তিনি নিশ্চিত করেন ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে। সতীর্থদের ভালোবাসায় সিক্ত ৩৮ বছর বয়সি এই দলনেতা ৮৮টি ওয়ানডে খেলায় নেতৃত্ব দিয়ে ৫০টিতে জয়লাভ করেন।
জেডআই/