প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২, ০৮:২২ এএম
ক’দিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২। ম্যাচ অফিশিয়ালদের তালিকাও প্রকাশ করেছে আইসিসি। কিন্তু সেখানে নেই বাংলাদেশের কোনো আম্পায়ারের নাম। বাংলাদেশের আম্পায়ারদের এই করুন দশা আবার নতুন নয়। যেখানে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট অবকাঠামো বাংলাদেশের চেয়েও দুর্বল, সেখানে এইবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের একজন আম্পায়ারও আছেন।
২০১৮-১৯ মৌসুমে আইসিসির আন্তর্জাতিক প্যানেলভুক্ত বাংলাদেশের চার আম্পায়ার ছিলেন—শরফুদ্দৌলা ইবনে সৈকত, তানভীর আহমেদ, মাসুদুর রহমান মুকুল ও গাজী সোহেল। কিন্তু আইসিসি ঘোষিত বিশ্বকাপের ম্যাচ অফিশিয়ালের তালিকায় তাদের কারও জায়গা হয়নি । তবে এই চার আম্পায়ারই মূলত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আম্পায়ার। খেলোয়াড়দের মতো আম্পায়ারদেরও নিয়মিত পারফরম্যান্স মূল্যায়ন হয়। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে যেটি করে টিম ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচকরা।
আন্তর্জাতিক আম্পায়ারদের ক্ষেত্রে সেটি আইসিসি। একজন আম্পায়ারের সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়াই তার মূল্যায়নের একমাত্র মানদণ্ড নয়। দেখা হয় তার শৃঙ্খলা, ইংরেজিতে বলা ও লেখার দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, মাঠে খেলোয়াড়দের ওপর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। এসব মানদণ্ডে বাংলাদেশের আম্পায়াররা অনেক সময় পিছিয়ে যান বিশ্বের উন্নত দেশের আম্পায়ারদের সঙ্গে।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ কিংবা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে বাংলাদেশের আম্পায়ারদের অংশগ্রহণ থাকলেও ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট, অর্থাৎ ছেলেদের বিশ্বকাপে (৫০ কিংবা ২০ ওভারের) বাংলাদেশের কোনো আম্পায়ার কখনোই সুযোগ পাননি। অথচ ক্রিকেটে আম্পায়ারদেরও সুযোগ থাকে নিজের দেশকে বিশ্বের কাছে অন্যভাবে পরিচিত করার। বড় উদাহরণ হিসেবে আসবে ডেভিড শেফার্ড, স্টিভ বাকনার, বিলি বাউডেন, আলিম দারদের নাম।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের আম্পায়ারদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে এগিয়ে, সেই শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত আছেন ১৯ নম্বরে। যদি আম্পায়ারিংয়ে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং করা হয়, বাংলাদেশের আম্পায়ারদের অবস্থান কোথায়, সেটি নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে।
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আম্পায়ারিংয়ে ৯ দেশের যে ১৬ জন আম্পায়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাদের ১২ জন এসেছেন এলিট প্যানেল থেকে। বাকি চারজন আইসিসির ইমার্জিং প্যানেল থেকে। এই ইমার্জিং প্যানেলে সাধারণত ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের ৪৮ জন আম্পায়ার তালিকাভুক্ত থাকেন। আইসিসির ইমার্জিং প্যানেলের সংক্ষিপ্ত তালিকাটা হয়ে থাকে ১২ জনের।
এসব সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করা উচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বেতনভুক্ত আম্পায়ার আছেন ৩০ জন। এর মধ্যে চারজন আইসিসির প্যানেল আম্পায়ার—সৈকত, মাসুদুর রহমান মুকুল, তানভীর আহমেদ ও গাজী সোহেল। বেতনভুক্ত আম্পায়ার আছেন ৩০ জন। তবে নেই আর্থিক নিশ্চয়তা। ছয় ক্যাটাগরিতে বিসিবি ৩০ আম্পায়ারকে বেতনভুক্ত করেছে, তাদের মধ্যে আইসিসির চার প্যানেল আম্পায়ার সর্বোচ্চ ৫০-৬০ হাজার টাকা। বিসিবি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আম্পায়ারদের ম্যাচ ফি দেয় ৩৫ হাজার টাকা। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে দেয় ১০ হাজার টাকা। অবশ্য ভারতের একজন আম্পায়ার আইপিএলের ১৫টি ম্যাচ পরিচালনা করেই প্রায় ৬৫ লাখ টাকা আয় করতে পারেন। আম্পায়ারদের পারিশ্রমিক নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী অন্য দেশের সঙ্গে যদি তুলনা করা হয়, তাদের বেতনের অনেক পার্থক্য হবে। আমাদের জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় ঠিক আছে। তবু হয়তো সমস্যা থাকতে পারে। সেটা নিয়ে কাজ করা যাবে।’
`দেশে আম্পায়ারের অভাব নেই। তবে কোয়ালিটি আম্পায়ারের অভাব আছে। যারা ভালো আম্পায়ার, তাদের ওপর আসার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা। আম্পায়াররা এখানে উপযাচক, পুতুল হয়ে থাকেন` বললেন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক আম্পায়ার। তিনি বেশ ক্ষোভ নিয়েই যোগ করলেন, `ঘরোয়া ক্রিকেটের সংস্কৃতি যেটাই হোক, স্বচ্ছ আম্পায়ারিং না হলে সেটা ক্রিকেটের ক্ষতি, আম্পায়ারদেরও ক্ষতি। ভালো আম্পায়াররা পায় ১০ ম্যাচ, অযোগ্য আম্পায়াররা ৩০টা। ভালো আম্পায়াররা বেশি চাপে থাকেন। এ কারণে ভালো ছেলেরা আম্পায়ারিংয়ে আসতে চায় না।`
বিশ্বমঞ্চে দেশের আম্পায়ারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আইসিসিতে ক্রিকেট বোর্ডের তদবির-
সুপারিশের বিষয়টিও অনেক সময় সামনে আসে। যদিও বিসিবির প্রধান নির্বাহী মনে করেন, এটা পুরোপুরি ব্যক্তিগত দক্ষতার বিষয়। নিজের পারফরম্যান্সের ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। তবে আম্পায়ারদের মান বাড়াতে বিসিবি আরও উদ্যোগ নেবে বলে জানান নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরও কাজ করতে হবে। আম্পায়ারদের ওপরে তুলতে হলে তাদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করতে হবে।
এসএএস/এএল