• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

সাফ জয়ী আঁখিকে সংবর্ধনা দেবে শাহজাদপুর বাসী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২, ০৭:০৩ পিএম

সাফ জয়ী আঁখিকে সংবর্ধনা দেবে শাহজাদপুর বাসী

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

নেপালকে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে লাল সবুজ দল। সাফ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য আঁখি খাতুনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পাড়কোলা গ্রামে। তাঁত শ্রমিক আকতার হোসেনের কন্যা তিনি। বঙ্গকন্যাদের এমন অর্জনে গোটা দেশ আনন্দ-উল্লাসে ভাসছে। সারাদেশের সঙ্গে আনন্দিত সিরাজগঞ্জবাসীও।

দেশের ফুটবলের অনন্য এ জাগরণ দেখে সবার সঙ্গে শাহজাদপুরের আখিঁও বাহবা পাচ্ছেন। অথচ এই পথচলার পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ ও কষ্টের গল্প। এলাকার যারা অতীতে আখিঁকে টিপ্পনি কাটতেন, এমনকি নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করতেন, তারাই এখন তাকে বাহবা দিচ্ছেন, প্রশংসা করছেন। এমনটাই জানালেন ফুটবলে আখিঁর হাতেখড়ি দেয়া শিক্ষক পাড়কোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মো. মনসুর রহমান।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নারী ফুটবল খেলা প্রবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শিক্ষক মনসুর রহমান বলেন, আমি বর্তমানে শাহজাদপুর বাচামারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেও দেড় যুগ পাড়কোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলাম। প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় দরিদ্র তাঁত শ্রমিক আকতার হোসেনের কন্যা আখিঁ খাতুনকে নিয়ে নারী খেলোয়ারদের দল গঠন করি। প্রথমে উপজেলা, জেলা, রাজশাহী, অতঃপর ঢাকায়।

এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি আাঁখিকে। অনুর্ধ ১৫ জাতীয় দলেও খেলার সুযোগ পায় আখিঁ। নারী হয়ে ফুটবল খেলে বলে এক সময় গ্রামবাসী তাকে ভৎসনা করেছে। এজন্য আমাকেও গালমন্দ করতেন গ্রামবাসী, বিশেষ করে যাদের মধ্যে ছিল ধর্মীয় গোঁড়ামি।সেই তারাই এখন আঁখিকে বাহবা দিচ্ছেন, প্রশংসা করছেন। কারণ আঁখি এখন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড়। গত ডিসেম্বরে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাল সবুজের দল। আর সে কারণেই নিন্দুকদের কাছ থেকেও প্রশংসা পাচ্ছে আঁখিরা।

আখিঁর বাবা আকতার হোসেন বলেন, এলাকার প্রাইমারী স্কুলের মনসুর স্যার এবং ইব্রাহীম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের লাকী ম্যাডাম আখিঁকে প্রচন্ড সহযোগিতা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশপাশি ওই দু‍‍`জন শিক্ষকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আখিঁর জন্য আজ আমি গর্বিত ও সম্মানিত। প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। সে অর্থ দিয়ে আমি জমি কিনে চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছি। সারাজীবন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ। সাফ জয়ী এই মেয়েদের যত্ন করলে দেশের জন্য আরো ভালো কিছু করবে বলে মনে করেন আঁখির বাবা।

সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান হিলটন বলেন, আঁখি সিরাজগঞ্জের সন্তান। আমি মাঠে থেকে পুরো খেলা দেখেছি। রক্ষণভাগের পুরো অংশে আঁখির ব্যাকআপ অসাধারণ। মুহুর্তের ভিতরে ওভারলেকিং ছাড়া লং পাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে সবসময় চাপে রেখেছিল। তার এই অসামান্য অবদানে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা আঁখিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। সে বাংলাদেশ টিমের হয়ে আরো ভালো খেলুক।

জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, জাতীয় ক্রীড়া অধিদপ্তরের অধীনে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট আঁখির ফুটবলে হাতেখড়ি। এর পরে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পায়। এখন জাতীয় দলের হয়ে খেলছে। বর্তমানে আঁখির খেলার মান অসাধারণ। সাফের শিরোপা লড়াইয়ে দেশের হয়ে অবদান রাখায় আমরা আনন্দিত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে আগামীতে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে।

জেডআই/

ক্রীড়া জগৎ সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ