প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২, ০৫:৫৩ এএম
পাকিস্তানকে হারিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মত এশিয়া কাপের শিরোপা নিজেদের করলো শ্রীলঙ্কা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ১৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪৭ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস। ফলে ২৩ রানে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার দেয়া টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে রিজওয়ান ও ইফতেখার আহমেদ ছাড়া আর কেউই লঙ্কান বোলারদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। পাকিস্তানের ইনিংসে এ দুজনই দুই অঙ্কের দেখা পেয়েছেন। বাকিদের রান ছিল টেলিফোন ডিজিটের মতো। ৫, ০, ৬, ২, ০, ৮। লঙ্কান বোলারদের মধ্যে স্পিন অলরাউন্ডার হাসারাঙ্গা ৩টি ও মাধুশান ৪টি উইকেট লাভ করেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা স্লো শুরু করেছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানকে বেশ চেপে ধরেছিল শ্রীলঙ্কান বোলাররা। জয়ের জন্য দরকার ১৭১ রান। চ্যালেঞ্জিং এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বড় হোঁচট খেয়েছে পাকিস্তান। টানা দুই বলে তারা হারিয়ে বসেছে অধিনায়ক বাবর আজম (৫) আর ফাখর জামানকে (০)।
রান তাড়ায় বেশ দেখে শুনে শুরু করে পাকিস্তান। প্রথম ৩ ওভারে তোলে ২০ রান। কিন্তু তৃতীয় ওভারে এসেই বড় বিপদে পড়ে বাবর আজমের দল।
প্রমথ মধুশান নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে তুলে নেন বাবরকে। ফাইন লেগ বাউন্ডারি দিয়ে বল পাঠাতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মধুশঙ্কার দুর্দান্ত ক্যাচ হন পাকিস্তান অধিনায়ক। পরের বলটি উইকেটে টেনে বোল্ড হন ফাখর জামান। ২২ রানেই ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
শুরুর সেই ধাক্কায় পাওয়ার প্লেতে বড় সংগ্রহ পায়নি বাবরের দল। ২ উইকেটে তোলে ৩৭ রান। এমন কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইফতিখার আহমেদ। তৃতীয় উইকেটে এখন পর্যন্ত ৫৮ বলে ৭১ রান যোগ করেছেন তারা। পাকিস্তানের সংগ্রহ ১৩.২ ওভারে ৩ উইকেটে ৯৩। এরপর রিজওয়ান আর ইফতেখার দলের হার ধরলেও পুনারায় আঘাত হানেন প্রমথ মধুশান। নিজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে প্যাভিলিয়নে ফেরান ইফতেখার আহমেদকে। ফলে ১৩ ওভার ২ বলে ৯৩ রানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর মাঠে টিকতে পারেননি নাওয়াজ। খুব দ্রুতই ফিরে যান তিনি। নাওয়াজের পর ৬ মারতে গিয়ে আউট হন রিজওয়ানও। পরের বলেই বোল্ড হন আসিফ আলি। একই ওভারে আউট হন খুশদিল শাহ। ফলে ১৬ ওভার ৫ বলে ১১২ রানে ৭ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর লঙ্কান বোলারদের সামনে দাড়াতেই পারেননি পাকিস্তান ব্যাটাররা। এক-একে হারায় সবকটি উইকেট।
এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ১৭১ রানের টার্গেট দিয়েছ শ্রীলঙ্কা। শুরুতে পাকিস্তানি বোলারদের তোপে পড়ে ব্যাটিং ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা। ৫৮ রানে ৫ লঙ্কান টপ অর্ডার সাজঘরে। পাকিস্তানি বোলারদের তোপে বেশ বিপদেই পড়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে ভানুকা রাজাপাকসে আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার জুটিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল লঙ্কানরা। কিন্তু হারিস রউফের আঘাতে ভাঙ্গে ৫৮ রানের সেই জুটি। ১১৬ রানের মাথায় আউট হন হাসারাঙ্গা। ২১ বল খেলে ৩৬ রান করেন তিনি। তবে দলকে লড়াই করার মত সংগ্রহ এনে দেন ভানুকা রাজাপাকসে। দুই জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত খেলে গেছেন তিনি। রাজাপাকসের ৪৫ বলে ৭১ রানের ইনিংসে ভর করেই ৬ উইকেটে ১৭০ রানের পুঁজি পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপা লড়াইয়ে টস জিতেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। প্রথমে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় শ্রীলঙ্কা। প্রথম ওভারটি করেন নাসিম শাহ। ওভারের তৃতীয় বলেই কুশল মেন্ডিসের স্টাম্প উড়িয়ে দেন পাকিস্তানের ডানহাতি এই পেসার।
নাসিমের গতিময় বলটি যেন বুঝতেই পারেননি কুশল। ডিফেন্ড করার আগেই উড়ে যায় তার অফস্টাম্প। গোল্ডেন ডাকে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার। দলীয় ২ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর পাথুম নিশাঙ্কা আর ধনঞ্জয়া ডি সিলভা কিছুটা সময় দলকে স্বস্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ ওভারে বল হাতে নিয়েই ১৭ বলে তাদের ২১ রানের জুটি ভাঙেন হারিস রউফ। মিডঅফে ক্যাচ তুলে দেন নিশাঙ্কা (১১ বলে ৮)। বাবর আজম দৌড়ের মধ্যেই নেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ।
নতুন ব্যাটার দানুশকা গুনাথিলাকাকে (৪ বলে ১) সেটই হতে দেননি হারিস রউফ। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে প্রথম বলে ১৫১ কিলোমিটার গতির এক বলে লঙ্কান ব্যাটারের স্টাম্প উড়িয়ে দেন ডানহাতি এই পেসার।
পঞ্চম বলে আরও একটি উইকেট পড়তে পারতো। ভানুকা রাজাপাকসের প্যাডে বল লাগলে জোরাল আবেদন হয়েছিল। কিন্তু আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি। রিভিউ নেয় পাকিস্তান। বল লেগস্টাম্প পেলেও আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান রাজাপাকসে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কা তোলে ৩ উইকেটে ৪৩ রান।
সপ্তম ওভারে চমক জাগিয়ে ইফতিখার আহমেদের হাতে বল তুলে দেন বাবর আজম। পার্টটাইমার এই অফস্পিনার প্রথম ওভারেই উইকেট এনে দিয়েছেন দলকে। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা তার ফিরতি ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন ২১ বলে ২৮ রান করে।
পরের ওভারে উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন শাদাব খানও। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তিনি বোল্ড করেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে (৩ বলে ২)। ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে শ্রীলঙ্কা।
পাকিস্তানি বোলারদের তোপে বেশ বিপদেই পড়ে গিয়েছিল লঙ্কানরা। সেখান থেকে ভানুকা রাজাপাকসে আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার জুটিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা।
অবশেষে তাদের ৩৬ বলে ৫৮ রানের ঝোড়ো জুটিটি ভাঙেন হারিস রউফ। ইনিংসের ১৫তম ওভারে হারিসকে টানা দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন হাসারাঙ্গা। সেই ঝাল মেটাতেই যেন পরের বলেই তাকে সাজঘরের পথ দেখান পাকিস্তানি পেসার।
স্কয়ার ড্রাইভ খেলতে গিয়ে হারিসের গতিময় ডেলিভারিতে হালকা করে ব্যাট লাগে হাসারাঙ্গার, বল চলে যায় সরাসরি উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে। ২১ বলে ৫ চার আর ১ ছক্কায় হাসারাঙ্গার ইনিংসটি ছিল ৩৬ রানের।
সেখান থেকে চামিকা করুনারত্নেকে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েন রাজাপাকসে। বাঁহাতি এই ব্যাটার ফিরতে পারতেন ১৮তম ওভারে। ব্যক্তিগত ৪৭ রানে হারিস রউফের স্লোয়ারে বড় শট খেলতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দিয়েছিলেন রাজাপাকসে। কিন্তু লংঅফে সহজ সেই ক্যাচ ফেলে দেন শাদাব।
জীবন পেয়ে ৩৫ বলে ফিফটি তুলে নেন রাজাপাকসে। এরপর আরেকটি ক্যাচ তু্লে দিয়েছিলেন লঙ্কান ব্যাটার। এবারও শাদাব খানের ভুলে ছক্কা হয়ে যায়। ফলে বড় সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা।
এআরআই