প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২২, ০২:৪৩ এএম
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম
ম্যাচে ১৭ রানে পরাজয় বরণ করতে হলো বাংলাদেশ। শেষের দিকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেও
দলকে জেতাতে পারেননি অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। সোহানের ২৬ বলে ৪২ রানের ইনিংসের
সুবাধে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান করে টিম টাইগার্স।
জিম্বাবুয়ের ছুড়ে দেওয়া ২০৬ রানের বিশাল লক্ষ্য
তাড়ায় নেমে দলীয় ৫ রানেই বিদায় নেন বাংলাদেশের ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। জিম্বাবুয়ের
পেসার ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে তুলে মারতে চেয়েছিলেন মুনিম; কিন্তু বল তার ব্যাটের কানায় লেগে কিছুক্ষণ হাওয়ায় ভেসে জমা
হয় তানাকা চিভাঙ্গার মুঠোয়। ৮ বলের মোকাবিলায় মুনিম করেন মাত্র ৪ রান।
এরপর ইনিংসের হাল ধরেন লিটন দাস ও এনামুল হক। এক
প্রান্তে রানের গতি বাড়ান লিটন; অন্যপ্রান্ত ধরে
রাখেন এনামুল। দুজনের ব্যাটে ভর করে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৬০ রান তুলতে পারে
বাংলাদেশ। লিটন কিছু বাউন্ডার হাঁকিয়ে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
কিন্তু সপ্তম ওভারে স্কুপ খেলতে গিয়ে শর্ট ফাইন
লেগে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। তবে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন ফিল্ডার এনগারাভা। কিন্তু লিটন
ক্যাচ আউট ভেবে ক্রিজের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফিল্ডার বল বোলার শন উইলিয়ামসের কাছে
ফেরত পাঠালে তিনি স্ট্যাম্প ভেঙে দেন। ফলে ১৯ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন
লিটন।
লিটন ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বিজয়ও।
সিকান্দার রাজার চতুর্থ বলে স্লগ সুইপ করে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কার মারার পরের
বলেই আউট হয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। রাজার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড
উইকেটে থাকা মিল্টন শুম্বাকে ক্যাচ দিয়ে ২৬ রানে ফেরেন বিজয়।
বিজয়ের পর ভালো ভাবেই শুরু করেছিল আফিফ। কিন্তু
টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। লুক জংউইকের করা ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে উড়িয়ে ডিপ মিড
উইকেটের ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন আফিফ হোসেন। যদিও ব্যাটে বলে ঠিক মতো করতে
পারেননি তিনি। ফলে ওয়েলিংটন মাসাকাদজার সহজ ক্যাচ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। করেছেন ৭
বলে ১০ রান।
একপ্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশের রান বাড়াচ্ছিলেন
নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু চড়াও হতে গিয়ে জংউইয়ের বলে টপ এজ হয়ে আউট হয়েছেন
ব্যক্তিগত ৩৭ রানে। ফলে বাংলাদেশের পঞ্চম উইকেটের পতন হয়।
১৯তম ওভারে রানের চাপে বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে
দিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি এনগারাভার হাই ফুলটসে কাট করতে গিয়ে ডিপ
ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন শুম্বার হাতে। এর ফলে জয়ের আশাও অনেকাংশে নিভে যায়
বাংলাদেশের। পরে সোহান-নাসুমে ১৮৮ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
এর আগে হারারেতে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের
প্রথমটিতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান
সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। পুরো ইনিংসে ২৩টি চারের সঙ্গে পাঁচটি ছক্কা হাঁকান
জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা।
নতুন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ইনিংসের শুরুটা
করান তাসকিন আহমেদকে দিয়ে, প্রথম ওভারে তিনি দেন
৮ রান। এরপর দ্বিতীয় ওভার করতে এসে নাসুম ৪ রানের বেশি দেননি। পরের ওভারেই
বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান।
এই পেসারের ফুল লেন্থের বল তুলে মারতে গিয়ে
ঠিকভাবে ব্যাটে লাগাতে পারেননি চাকাভা। ১১ বলে ৮ রান করে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে
ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। এরপর ওয়েসলি মাদাভিরার সঙ্গে অধিনায়ক
ক্রেইগ আরবিনের জুটি জমে উঠতে দেননি মোসাদ্দেক হোসেন।
তার হঠাৎ নিচু হওয়া বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত
যান আরবিন। ২ চারে ১৮ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। কিন্তু এরপরই যেন ধীরে
ধীরে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা।
মাদাভিরার সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়েন শেন
উইলিয়ামস। এরপর বাংলাদেশকে ফের স্বস্তি এনে দেন মোস্তাফিজ। তার স্লোয়ার বুঝতে না
পেরে ব্যাটে লেগে বোল্ড হন উইলিয়ামস। কিন্তু এটাই যেন শাপেবর হয় জিম্বাবুয়ের
জন্য।
ক্রিজে আসেন সিকান্দার রাজা। মাদাভিরাকে নিয়ে
বাংলাদেশের বোলারদের চার-ছক্কার বৃষ্টিতে ভাসান তিনি। মাত্র ২২ বলে হাফ সেঞ্চুরি
করেন রাজা। মাদাভিরাও পুরো ইনিংস আগলে রাখার সঙ্গে রান তোলার গতি ঠিক রাখেন।
ইনিংসের শেষ ওভারে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ৯ চারে ৪৬ বলে ৬৭ রান করেন তিনি।
ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা সিকান্দার রাজা একরকম ছেলেখেলায় মাতেন বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে। ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ২৬ বলে ৬৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের পক্ষে ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন।
এআরআই