ক্রীড়া ডেস্ক
চলতি আইপিএলে গত ৩০ এপ্রিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকার করে আলোচনায় চলে আসেন বাঁহাতি লেগ স্পিনার কার্তিকেয়। অথচ, নিলামে কোনো দল তাকে নেয়নি। মুম্বাইয়ের আরশাদ খান চোটে পড়ায় বিকল্প হিসেবে তিনি সুযোগ পান। প্রথম সুযোগেই বাজিমাত। কুমার কার্তিকেয়র এই যাত্রাপথ সহজ ছিল না। ক্রিকেটের টানে মাত্র ১৫ বছর বয়সে কানপুর থেকে দিল্লিতে চলে আসেন। ৯ বছর ধরে বাড়িতে যাননি তিনি। যাতে তার স্বপ্নের জন্য পুলিশ কনস্টেবল বাবার আর্থিক সমস্যা না হয়। দিল্লির বন্ধু রাধেশ্যাম তাকে নিয়ে দিল্লির বেশ কিছু ক্রিকেট একাডেমিতে ঘুরেছেন। কিন্তু সেখানকার বিশাল অংকের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না কার্তিকেয়র। শুধু তাই নয়, ক্রিকেট শেখার শুরুতে এক বছর টাকার অভাবে তিনি দুপুরের খাবারও খেতে পারেননি।
কিন্তু দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকলে পথ একটা না একটা মিলে যায়। কার্তিকেয় খোঁজ পান সঞ্জয় ভরদ্বাজের ক্রিকেট একাডেমির। এক পয়সাও বেতন লাগবে না, তবে ট্রায়াল দিতে হবে। মাত্র একটা বল করে তিনি ভরদ্বাজের মন জয় করে নেন। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে শুরু হয় থাকা-খাওয়ার টেনশন। একাডেমি থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে গাজিয়াবাদের মসুরি নামক এক গ্রামে কার্তিকেয়র থাকার ব্যবস্থা হয়। সেখানে রাতে এক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন, আর সকালে যেতেন একাডেমিতে ক্রিকেট শিখতে।
৮০ কিলোমিটার রাস্তার অনেকটা হেঁটে যেতেন কার্তিকেয়। এতে তার ১০ রুপি বেচে যেত। সেটা দিয়ে বিস্কুট কিনে ক্ষুধা মেটাতেন। বছরখানেক এভাবে চলছিল। একদিন বিষয়টা নজরে পড়ে কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজের। তিনি পুরো বিষয় জেনে হতবাক হয়ে যান। সাথে সাথে একাডেমির বাবুর্চির সঙ্গে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। সেই বাবুর্চি যখন প্রথমদিন তাকে দুপুরের খাবার দেয়, কার্তিকেয় হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন! কারণ গত এক বছর তিনি দুপুরে কিছু খেতে পারেননি!
সঞ্জয় ভরদ্বাজ এরপর কার্তিকেয়কে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। স্কুলের হয়ে ডিডিসিএ লিগে ৪৫ উইকেট পেয়েছিলেন। তিনটি প্রতিযোগিতায় সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন। কিন্তু ডিডিসিএর ট্রায়ালে তিনি সেরা ২০০–তেও জায়গা পেলেন না! কোচের উৎসাহে লড়াই চালিয়ে যান কার্তিকেয়। ২০১৮ সালে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়ে যায়। এরপরও তিনি বাড়ি যাননি। কারণ কেউ তাকে চেনে না। এবার আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার পর কার্তিকেয়কে সবাই চিনতে পেরেছে। এবার তিনি বাড়ি যাবেন।
আরআই
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন