ক্রীড়া ডেস্ক
টি-টোয়েন্টি ২০২১ বিশ্বকাপে সবচেয়ে ফেভারিট দল ছিল পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে উড়ছিল পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বে একটি ম্যাচও না হারা বাবর আজমের দল সেমিফাইনালে এসেও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিচ্ছিল। তবে জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ১৯তম ওভারে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ ছাড়েন হাসান আলী। তাতেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় পাকিস্তানের বিশ্বকাপ। ওই হারের পর হাসান আলী হয়ে উঠেছিলেন ম্যাচ হারের অন্যতম কারণ। তাকে সমর্থকরা বানিয়ে দেন খলনায়ক।
সেমিফাইনালের সেই ম্যাচে পাকিস্তানের দেওয়া ১৭৭ রান তাড়া করে জয়ের জন্য শেষ ১২ বলে ২২ রান প্রয়োজন ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ম্যাথু ওয়েডের সঙ্গে ক্রিজে ছিলেন মার্কোস স্টয়নিস। প্রথম ২ বলে ২ রান দেওয়া শাহীন শাহ আফ্রিদি তৃতীয় বলে উইকেটের সুযোগ তৈরি করলেন। তার ফুলার লেন্থের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে স্লগ করলেন ওয়েড। বল গেল ডিপ মিড উইকেটে। একেবারেই লোপ্পা ক্যাচ। কিন্তু হাসান আলী বলটাই তালুবন্দী করতে পারলেন না। ওয়েড পেয়ে গেলেন ২ রান। ম্যাচটা সেখানেই হেরে বসল পাকিস্তান। পরের ৩ বলে ৩ ছক্কায় ওয়েড হয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক।
সেসব সময় পেরিয়ে গেছেন হাসান আলী। পাকিস্তান দলে দিয়েছেন। এখন খেলছেন ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে। সম্প্রতি ইনিংসে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
ইংল্যান্ডে বসেই হাসান আলী ফিরে যান সেই ক্যাচ ছাড়ার দুঃসহ স্মৃতিতে। এক সাক্ষাৎকারে হাসান আলী বলেছেন, ক্যাচ ছাড়ার পর কয়েক রাত ঘুমাতে পারেননি তিনি।
‘সেমিফাইনালের ওই ক্যাচ ছাড়া আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। ওই ঘটনার পর বেশ কয়েক রাত ঘুমোতে পারিনি। আমার নিজেকে বোঝাতে কষ্ট হচ্ছিল, এই ক্যাচ কীভাবে ছাড়ি। কেন না বিশ্বকাপের আগে ফিল্ডিং নিয়ে অনেক কাজ করেছিলাম। সেটা মেনে নেওয়া কষ্টকর ছিল।’
হাসান আলীর কাছে ক্যাচ ছাড়ার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছিল, সমর্থকদের কথা ভেবে। তারা তাকে খলনায়ক বানিয়ে দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়াটা ভাবতেই বেশি কষ্ট পাচ্ছিলেন বলে জানান।
‘ওই ঘটনার পর আমার দেশের মানুষ আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিল। আমার কষ্টটা এজন্যই বেশি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় পাকিস্তানের হয়ে খেলার যোগ্যতা হারিয়েছি। অথচ ক্যাচটা নিতে পারলে গল্পটা হতো অন্য রকম।’
হাসান আলী আরও বলেছেন, ‘একজন পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ায় যেকোনো পরিস্থিতি থেকে আমাকে বের হতেই হতো। তবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। অনুশীলনের সময় অন্তত পাঁচশ ক্যাচ ধরেছিলাম কিন্তু ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যে ক্যাচটা ছেড়েছি সে কষ্ট আমাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।’
তবে সতীর্থরা যেভাবে তার পাশে ছিলেন তাতে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পেয়েছিলেন ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। তার ভাষ্য, ‘আমার সব সতর্থীরা জানত আমি ম্যাচটা কতটা গুরুত্বর সঙ্গে নিয়েছিলাম। আমি সব সময় প্রস্তুতিতে শতভাগ উজার করে দেই যেন পাকিস্তানের হয়ে পারফর্ম করতে পারি। আমি ম্যাচের পর কাঁদছিলাম। শাহীনও কাঁদছিল। আমাদের দুজনের জন্য ওই সময়টা খুব আবেগপ্রবণ ছিল।’
‘শোয়েব ভাই (মালিক) আমার কাছে এসে বলেছিল, তুমি আমাদের অস্ত্র। তোমার হারলে চলবে না। পাশাপাশি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। প্রত্যেকে আমার দুঃখ বোঝার চেষ্টা করেছিল।
আরআই
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন