ক্রীড়া ডেস্ক
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) যেখানে নিলামে তারকা ক্রিকেটারদের কিনতে টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা। দল গড়তে কোটি টাকা খরচ করেন দলের মালিকেরা। আসলে খরচ বললে ভুল হবে। অর্থনীতির ভাষায় একে বিনিয়োগ বলাই ভালো। ভারতের বড় বড় ব্যবসায়ীরাই আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক। ক্রিকেটের চেয়ে ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতিই তাদের কাছে গুরুত্ব পায় বেশি। সর্বমোট ৯টি উপায়ে আইপিএলে লাভবান হন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা।
১) মিডিয়া স্বত্ত্ব: সম্প্রচারকারী টিভি চ্যানেল ও অনলাইন স্ট্রিম হচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস। শুরুতে এই অর্থ যায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কোষাগারে। পরে নির্দিষ্ট হারে নিজেদের ভাগের অর্থ বুঝে পায় প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। এটা অবশ্য নির্ভর করে কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি কয়টি ম্যাচ খেলেছে তার উপর। অর্থ্যাৎ প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়া দলগুলোর চেয়ে প্লে-অফ এবং ফাইনালে খেলা দলগুলো বেশি লাভবান হয়। মিডিয়া বা টিভি স্বত্ত্ব থেকে ৬০-৭০ শতাংশ লাভ করে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।
২) ব্র্যান্ড স্পন্সরশীপ: দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়ের খাত হচ্ছে ব্র্যান্ড স্পন্সরশিপ। প্রতিটি দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। জার্সি এবং টিম কিটে সেসব কোম্পানি লোগো প্রদর্শনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন করা হয়ে থাকে। এছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজির তারকা ক্রিকেটাররা কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপণের মডেল হন। এই ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ থেকে প্রায় ২০-৩০ শতাংশ লাভ করে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।
৩) টিকিট বিক্রি: হোমে ম্যাচের টিকিটের মূল্য মূলত ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরাই নির্ধারণ করেন। টিকিট বিক্রির প্রায় ৮০ শতাংশ পায় তারা। আর বাকি ২০ শতশাং পায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং স্পনসর প্রতিষ্ঠানগুলো। আইপিএল কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য থাকে স্টেডিয়ামের আসন যাতে ফাঁকা না থাকে। এজন্য টিকিটের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্রিকেট বোর্ডের বেধে দেওয়া নিয়ম নামতে বাধ্য থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। মোট লাভের ১০ শতাংশ আসে এই খাত থেকে।
৪) প্রাইজ মানি: ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল চেন্নাই প্রাইজ মানি পেয়েছে মোট ২০ কোটি রুপি। এর অর্ধেক পেয়েছে ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফরা। বাকি অর্ধেক গেছে ফ্র্যাঞ্চাইজ মালিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রাইজ মানি পেয়ে থাকে। ফলে মোট লাভের বড় একটি অংশ আসে এই খাত থেকে।
৫) মার্চেন্ডাইজ বিক্রি: ইউরোপীয় ফুটবল ক্লাবগুলোর বড় আয়ের উৎস হচ্ছে মার্চেন্ডাইজ বিক্রি। মার্চেন্ডাইজ হিসেবে মূল জার্সির রেপ্লিকা, টুপি, ঘড়িসহ আরো অনেক কিছু বিক্রি করা হয়। একই পন্থা অনুসরণ করে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলো। তাদের মোট লাভের মাত্র ৫ শতাংশ আসে এই উৎস থাকে।
৬) ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি: ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর একটি চুক্তি হয়। মিডিয়া সত্ত্বসহ আইপিএলের অফিসিয়াল স্পন্সরশিপ ও পার্টনারশিপ থেকে প্রাপ্ত হয় অর্থ পায় ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা। এটি আবার নির্ভর করে লিগ টেবিলে দলগুলোর অবস্থানের উপর।
৭) স্টল ভাড়া ও ফ্যান ফেস্ট: দর্শকদের কাছে খাবার ও পানীয় বিক্রির জন্য স্টেডিয়ামের ভেতর স্টল বসে। এই স্টল গুলো তৃতীয় কোন পক্ষের কাছে ভাড়া দেয় ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। এছাড়া স্টেডিয়ামে জায়গা না পাওয়া দর্শকদের জন্য বড় স্কিনে খেলার দেখার ব্যবস্থা করে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিয়মে টিকিট কিনে বড় পর্দায় খেলা দেখতে পারে দর্শকরা। এটা বলা হয় ফ্যান ফেস্ট বা দর্শকদের জন্য উৎসব।
8) প্লেয়ার ট্রেডিং: আইপিএলের নিলামের আগে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের মতো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ট্রান্সফার উইন্ডো খোলা হয়। এই সময়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নিজেদের মধ্যে ক্রিকেটার অদল-বদল করতে পারে। এজন্য নিজেদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ পেয়ে থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা।
৯) নিজেদের কোম্পানির প্রচারণা: আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকরা বড় ব্যবসায়ী। তাদের নিজেদের অনেক ছোট-বড় কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে। আর আইপিএল প্রচারণা চালানোর বড় প্ল্যাটফর্ম। ফলে ফ্র্যাঞ্চাইজি কেনার মাধ্যমে অনেকটা বিনে পয়সায় নিজেদের কোম্পানির প্রচারণা চালাতে পারে তারা।
সবশেষ কথা, ভারতের এক শক্তিশালী গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, গত মৌসুমে আইপিএলের প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি কম করে হলেও ৭৫ কোটি রুপি লাভ করেছে। আবার কোন কোন ফ্র্যাঞ্চাইজির লাভের পরিমাণ ১০০ থেকে ১২৫ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে। সুতরাং আইপিএলে ক্রিকেটের চেয়ে টাকার খেলা হয় বেশি।
আরআই
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন