
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২, ০৯:৫৫ পিএম
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ
সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা এক নামেই চিনবেন বঙ্গবন্ধু জাতীয়
স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে খেলেছেন লিওনেল মেসি ও জিনেদিন জিদানের মতো বিশ্বখ্যাত
তারকা ফুটবলাররা। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটের মিনি বিশ্বকাপ, এশিয়া
কাপ হকি, বক্সার মুহম্মদ আলীর প্রদর্শনী ম্যাচসহ বিভিন্ন
ইভেন্টে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে এই মাঠে। কিন্তু ১৯৫৪ সালে তৈরি
এই স্টেডিয়ামটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় শ্রীহীন হয়ে পড়েছিল। অবশেষে প্রায় শত
কোটি টাকা ব্যয়ে ভেন্যুটির সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।
স্টেডিয়ামটি সংস্কারের জন্য অনেক আগেই ৯৮ কোটি ৩৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বিশাল অঙ্কের এই অর্থ ব্যয়ে এবার বদলে যাবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। ২০২৩ সালে নতুন রূপে পাওয়া যাবে ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামটিকে। সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। তবে ৬ মাস সময় বৃদ্ধি হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিশাল এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে স্টেয়িামের মাঠ উন্নয়ন, গ্যালারিতে শেড নির্মাণ, গ্যালারিতে চেয়ার স্থাপন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম আধুনিকায়ন, ফ্লাডলাইট স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, জেনারেটর স্থাপন, এলইডি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো, নতুন অ্যাথলেটিক ট্র্যাক স্থাপন, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড স্থাপন, মিডিয়া সেন্টার তৈরি, টিকিট কাউন্টার, ডোপ টেস্ট রুম তৈরি, চিকিৎসা কক্ষ, ভিআইপি বক্স নির্মাণ, প্রেসিডেন্ট বক্স, টয়লেট উন্নয়ন, চিকিৎসা সরঞ্জাম, সাব-স্টেশন সরঞ্জাম, এসি ও সৌর প্যানেল সরবরাহ।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী জাতীয় এই স্টেডিয়ামটি। স্বাধীনতার আগে নির্মিত হয়, ১৯৫৪ সালে। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এই স্টেডিয়ামটিকে ভিন্নরূপে দেখে বিশ্ববাসী। তবে ওটাই শেষ। এরপর অযত্ন আর অবহেলায় দিনকে দিন শুধু মলিনই হয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাটি।
মূলত ফুটবলের জন্য ব্যবহৃত হলেও এখানে আয়োজিত হয় অ্যাথলেটিক্স, আরচারি, সাইক্লিংসহ আরও বেশকিছু খেলা। এ ছাড়া বিশেষ দিবসে বিভিন্ন আয়োজনে হয়ে থাকে এই স্টেডিয়ামটিতে। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে স্থাপনাটির অনেক জায়গা এখন রুগ্ন অবস্থা।
নির্মাণের পর বহুবার সংস্কার হয়েছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। তবে প্রতিবারই সংস্কার হয়েছে কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট সামনে রেখে। ২০১১ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছিল এই স্টেডিয়ামটির।
নির্দিষ্ট কোনো টুর্নামেন্ট উপলক্ষে এবার স্টেডিয়াম সংস্কার করছে না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এখানে ফুটবল ও অ্যাথলেটিক খেলা ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই তৈরি দেশের খেলাধুলার বলয়। গুরুত্ব বিবেচনা করেই সরকার এবার বড় ধরনের সংস্কার করছে জাতির জনকের নামের এই স্টেডিয়ামটি। তবে স্টেডিয়ামের বিদ্যমান কাঠামো ঠিক রেখেই চলছে সংস্কারকাজ।
২০১৭ সালে যখন স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) তৈরি করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, তখন বাজেট ছিল ৮০ কোটি টাকার মতো। ওই ডিপিপি তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সংস্কার শেষ করার লক্ষ্যে। কিন্তু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্টেডিয়াম সংস্কার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। যাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ কোটি টাকার কিছু বেশি।
এই প্রকল্প সম্পন্ন হবে তিন অর্থ বছরে। ২০১৯-২০, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ - এই তিন বছরে ভাগ করা হয়েছে কাজ। সবচেয়ে বেশি টাকার কাজ হবে দ্বিতীয় অর্থ বছরে। পরিমাণ ৫৭ কোটি টাকার মতো। প্রথম বছরে ২৬ ও শেষ বছরে ১৫ কোটি টাকার মতো। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বছরভিত্তিক যে ব্যয় ধরা হয়েছে তাতে পরিবর্তন আসতে পারে কাজের সুবিধার্থে।
গ্যালারি ও ভিআইপিতে বসানো হবে উন্নতমানের নতুন চেয়ার। এর মধ্যে ভিআইপি গ্যালারিতে বসানো হবে ফোল্ডিং চেয়ার। বদলে ফেলা হবে স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট। তবে ফ্লাডলাইটের টাওয়ার অপরিবর্তিত থাকবে। শুধু বদলে ফেলা হবে বাতি। প্রথমে এলইডি বাতি লাগানোর পরিকল্পনা ছিল। নতুন পরিকল্পনায় স্থাপন করা হবে জি-থ্রি ভারসনের বাল্ব। এর মাধ্যমে আলো ও সৌন্দর্য দুটিই বাড়বে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা জানিয়েছেন, ‘প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। শেষ হওয়ার কথা এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। তবে ৬ মাস সময় বৃদ্ধি হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এখন যে প্রকল্প আছে সেখানে স্টেডিয়ামের পুরো গ্যালারিতে শেড দেয়ার পরিকল্পনা নেই। এখন আমরা পরিকল্পনা করছি পূর্ণাঙ্গ শেড করার। সেটা হলে আমাদের সময় বাড়বে। কারণ, বাকি শেডের জন্য নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করতে হবে।’
জেডআই/