
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২২, ১১:১০ পিএম
সত্তর-আশির দশকে বাংলাদেশের ফুটবলের রমরমা
অবস্থা ছিল। আবাহনী-মোহামেডানের ম্যাচ
দেখতে উপচে পড়ত স্টেডিয়ামের গ্যালারি। উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছাত যে, হাতাহাতিতে
জড়িয়ে পড়ত দুই দলের সমর্থকরা। কাজী সালাউদ্দিন, সালাম মুর্শিদি,
মো. আসলাম, কায়সার হামিদদের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে
প্রবেশ করতে না পেরে বাহিরে দল বেধে অবস্থান করতেন। কিন্তু এখন আর সেই জৌলুস নেই।
নব্বই দশক পেরুতেই বিবর্ণ বাংলাদেশের ফুটবল।
ফিফা র্যাংকিংয়ে প্রায় তলানিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশের ফুটবল। অথচ গত এক যুগ ধরে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সর্বোচ্চ পদে আসিন হয়েছেন আশির দশকের উজ্জ্বল তারকা কাজী সালাউদ্দিন। খেলোয়াড় হিসাবে দুর্দান্ত হলেও সংগঠক হিসাবে মোটেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারছেন না তিনি।
যদিও বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেই ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপ খেলার স্বপ দেখিয়ে ছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। কিন্তু বিশ্বকাপে খেলা তো দূরের কথা দক্ষিণ এশিয়া সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারে না বাংলাদেশের ফুটবলাররা।
কালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। কিন্তু ২০২১ সালে ফুটবলে কী পেলো বাংলাদেশ। আমরা যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখ বুলাই তাহলে দেখা যাবে জাতীয় দল এবং যুব দলের কোনো সাফল্যই নেই। তবে বছরের শেষ পর্যায়ে দেশকে একটি আন্তর্জাতিক ট্রফি উপহার দিয়েছে নারী ফুটবলাররা। ছেলেরা শুধু হতাশাই করেছে দেশবাসীকে।
একটি ট্রফির জন্য কতই না চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ট্রফি ধরা দেয়নি। নিয়মিত কোচ জেমি ডে’কে বিদায় করে দুইজন অন্তর্বর্তীকালীন কোচ দিয়ে দুটি টুর্নামেন্টে খেলিয়েছে জাতীয় দলকে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দায়িত্ব দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজনকে এবং শ্রীলঙ্কাকায় অনুষ্ঠিত চার জাতি টুর্নামেন্টে দায়িত্ব দিয়েছিল আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমসকে। তারা দু’জনেই ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশকে একটি ট্রফি এনে দিতে।
তাই একরাশ হতাশা নিয়েই শেষ হতে চলেছিল ফুটবলের আরও একটি বছর। কিন্তু বছরের শেষ প্রান্তে দেশকে একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা উপহার দিয়েছেন মারিয়া-তহুরারা। শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ২২ ডিসেম্বর বুধবার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ৭৯ মিনিটে আনাই মগিনির গোলে শিরোপা জয় করে বাংলাদেশের মেয়েরা।
অবশ্য জয় দিয়েই ২০২১ সালটা শুরু করেছিল জামাল ভূইয়ারা। গেল বছরের ২৩ থেকে ২৯ মার্চ, নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন জাতি টুর্নামেন্ট। কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এরপর শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিপক্ষে দু’টি জয় পায় লাল সবুজ দল। এখানে জয়ের গল্প শেষ হয় বাংলাদেশের ফুটবলের।
২০২১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। সবগুলো ম্যাচই হয়েছে বিদেশের মাটিতে। বিদেশের মাটিতে ৫ টুর্নামেন্টে ১৬ ম্যাচে ৫ ড্র, ৮ হারের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৩টি। ওই ৩ জয় কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিপক্ষে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের হার ১৮.৭৫।
ফুটবল উন্নয়ন বলতে বিদায়ী বছর বাফুফে বহুল প্রতিক্ষীত জিম চালু করতে পেরেছে। পেরেছে একটা একাডেমি চালু করতে। বাফুফের ভবনের সামনের মাঠে জিমন্যাসিয়াম ও কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাফুফের এলিট একাডেমি চালু হয় এই বছরই।
তবে একটি দেশের ফুটবল এগিয়ে যাওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা রাখে ঘরোয়া ফুটবল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল সঠিক পথে এগোচ্ছে না। শক্তিশালী অবকাঠামো নেই। এখানে ক্লাবগুলো নিয়ম শৃঙ্খলা মানতে চায় না। রয়েছে পাতানো খেলার অভিযোগও। কর্তৃপক্ষ দায়সারা তদন্ত করে নামকাওয়াস্তে শাস্তি দেয়। যে কারণে বছরের পর বছর ধরে এই অপরাধ করে যাচ্ছে কিছু ক্লাব।
তবে ফুটবলের অধঃপতনে এককভাবে কাজী সালাউদ্দিনকে দোষারোপ করা যায় না। কারণ মাঠের খেলা তো খেলোয়াড়দেরই খেলতে হবে। মাঝে মাঝে বাফুফে বস বলেই ফেলেন আমি তো আর মাঠে নেমে খেলে দিতে পারব না। খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা তো কম দেয়া হয় না। ক্লাবে খেলে একেকজন ফুটবলার প্রতি মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ লাখ করে টাকা আয় করেন। কিন্তু দেশের জার্সি গায়ে জড়িয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। যে কারণে বছরের পর বছর পিছিয়ে পড়েছে দেশের ফুটবল।
বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নের পথে অন্তরায় কি? কেন এগোচ্ছে না এদেশের ফুটবল। সীমাহীন সাংগঠনিক ব্যর্থতা, তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় উঠে না আসায় পাইপলাইনে শূন্যতা, মানহীন খেলোয়াড় এবং ঘরোয়া ফুটবল লিগে বিদেশি খেলোয়াড়ের আধিক্য বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে সব থেকে বড় বাধা।
তাহলে কি হারানো গৌরব ফিরে পাবে না বাংলাদেশের ফুটবল? কবে ফিরবে দেশের আপামর মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই খেলার সুদিন। এই ভাবনায় বিদায় নিলো আরও একটি বছর। নতুন বছরে এগুবে দেশের ফুটবল?
জেডআই/ডা