• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

বছর জুড়েই আলোচনায় ‘ব্যাড বয়’ নাসির

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২১, ১২:২৬ এএম

বছর জুড়েই আলোচনায় ‘ব্যাড বয়’ নাসির

জাফিউল ইসলাম বাবু

বিপুল সম্ভাবনা নিয়েই ক্রিকেটের বাইশ গজে পা রেখেছিলেন নাসির হোসেন। নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়ে ক্রমেই অলরাউন্ডার হয়ে উঠছিলেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিনিশার হিসেবে প্রমাণ করে জাতীয় দলে অপরিহার্য খেলোয়াড়ের তালিকায় নাম তুলে ছিলেন। তবে একাধিক প্রেম ও নারী সংক্রান্ত নানা বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে এখন দল থেকে এক প্রকার নির্বাসনে রংপুরের এই ক্রিকেটার।

ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইগার স্কোয়াডের ফিনিশার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে, নাম তুলেছিলেন অটো চয়েজের খাতায়। ৫০ ওভারের ম্যাচে ৬৫ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি আর ছয় হাফ সেঞ্চুরি মিলিয়ে রান করেছেন ১২৮১। সমান সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরি মিলিয়ে ১৯ টেস্টে করেছেন ১০৪৪ রান। কিন্তু সম্ভাবনাময় এই ক্রিকেটার নানা বিতর্কে জড়িয়ে অকালে হারিয়ে যেতে বসেছেন।


২০১৮ সালে ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচটাই যেন নাসিরের অঘোষিত শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর  নাসিরের সঙ্গী বিভিন্ন সময়ে খেলার মাঠে অখোলায়াড়সুলভ আচরণের শাস্তি, বন্ধ হয়ে যেতে থাকে জাতীয় দলের দরজা।

সেখানেই থেমে ছিল না নাসির হোসেনের বিতর্কিত কমর্কাণ্ড। জড়িয়ে পড়েন নারী কেলেঙ্কারিতে। ২০১৮ সাল, হুট করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুবাহ নামের এক নারী নিজেকে নাসিরের প্রেমিকা দাবি করে প্রকাশ্যেই বলতে থাকেন নাসিরের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও অন্তরঙ্গতার কথা। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে গণমাধ্যমে উঠে আসে তার নারী কেলেঙ্কারির খবর।

এরপর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে নাসির হোসেনকে শুনানিতে ডেকেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই সময় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত অনেক সমস্যা আছে, সেখানে বিসিবির পক্ষে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। কেউ যদি কাউকে ডিভোর্স দেয় বা কেউ যদি একাধিক বিয়ে করে, সেখানেও আমাদের কিছু করার নেই।


জাতীয় দলের হয়ে বাইশ গজে ইনিংস খেলতে না পারলেও চলতি বছরে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রাজধানীর একটি হোটেলে ঘটা করে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন নাসির হোসেন। এরপর স্ত্রী তামিমা তাম্মির সঙ্গে তার আকদ ও গায়ে হলুদের ভিডিও আপলোড করেন নাসির। বিতর্কের মাঝেই বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এই ক্রিকেটার। এরপর ভাইরাল হয় তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভিডিওচিত্রও।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকটা নীরবেই প্রিয়তমার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের গায়ে হলুদসহ অন্য অনুষ্ঠানগুলোতে বসে অতিথিদের মেলা। সেসব অনুষ্ঠানে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন নাসির ও তামিমা।

তবে সেখানেও বিতর্ককে সঙ্গী করে দেশব্যাপী হাস্যরসের খোরাকে পরিণত হন নাসির হোসেন। বিয়ের পরে জানা যায়, নসিরের নবপরিণীতা তামিমা তাম্মির আগে একটি বিয়ে হয়েছিল, আছে ৮ বছরের একটি মেয়ে, তামিমার প্রথম স্বামী রাকিব হাসান দাবি করেন তার তালাক না দেয়া স্ত্রীকেই বিয়ে করেছেন নাসির।

ডিভোর্স না দিয়ে আবারও বিয়ে করায় রাজধানী উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন প্রথম স্বামী রাকিব হাসান। অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া’, ‘ব্যভিচারমানহানির অভিযোগে এই মামলা করেন তিনি।


মামলার বিবরণে বলা হয়, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকাবস্থায় নাসির বিয়ে করেছেন তামিমাকে, যা ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নাসির নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। তামিমা ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার আট বছর বয়সী শিশুকন্যা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপে রাকিবের চরম মানহানি হয়েছে, যা তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) রাকিব অভিযোগপত্র দিলে ক্রিকেটার নাসির হোসেন, তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছিলেন আদালত। পিবিআই’র রিপোর্টে অবৈধ প্রক্রিয়ায় নাসির-তামিমা বিয়ে করেছেন বলে জানানো হয়।

পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মি। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে তাদের ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।

তামিমা সুলতানার দাবি, শরিয়ত ও আইন মোতাবেক ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি ডিভোর্সের আবেদন করেন। এরপর ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল সেই তালাকটি কার্যকর হয়।


এরপর সংবাদ সম্মেলন করেন নাসির ও তার স্ত্রী তামিমা। সংবাদ সম্মেলনে তামিমা বলেন, ‘সাবেক স্বামী রাকিবকে তালাক দিয়েই নাসিরকে বিয়ে করেছি। ২০১৭ সালে তাকে তালাক দিই। রাকিবের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল এবং আমাদের একটি সন্তান আছে। এছাড়া, রাকিব যেসব কথা বলছেন তার সবই মিথ্যা।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার বা নাসিরের কোনো ফেসবুক আইডি বর্তমানে সচল নেই। নাসিরের একটি অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ আছে। কোনো আপডেট দিতে হলে আমরা সেই পেজ থেকে দেবো।’

এ সময় নাসির হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর দিকে কেউ আঙুল তুললে মেনে নেব না। কারণ এত দিন ও শুধু তামিমা ছিল। আজ থেকে তামিমা হোসেন। আমি চাইব না কেউ কোনোভাবে ওর বিরুদ্ধে কিছু বলুক। যারাই যেখান থেকে কিছু বলবে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে নাসিরের বিয়ের পর আবারও আলোচনায় আসেন সাবেক প্রেমিকা হুমায়রা সুবাহ। তিনি নিজের ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ৭ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘তার (নাসির) সঙ্গে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে ২০১৮ সালে। এখন ২০২১ সাল। ৭ দিনে মানুষ মইরা ভূত হয়ে যায়, আর আপনারা ৩ বছর এক জিনিস মনে রাখছেন! এর মধ্যে আমি মিডিয়ায় আসলাম, সিনেমা করলাম, গান গাইলাম- এসব তো কেউ দেখেন না। এসব নিয়ে কথা বলেন না। এমনও তো হতে পারে আমি নতুন বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ভালো আছি ভাই। কী জন্য আপনারা শুধু নাসির নাসির করেন? নাসির বিয়ে করতেছে ভালো কথা। আমি জানি ও বিয়ে করবে, তো? করতেই পারে।  দুদিন পর আমিও করব।’


সুবাহ বলেন, ‘ও (নাসির) বিয়ে করছে ও মজায় আছে। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে আমিও মজায় আছি। আপনাদের (সাধারণ মানুষ) তিন-চারটা বউ থাকতে পারে, গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে আর আমরা মডেলদের দুই-চারটা বয়ফ্রেন্ড থাকলে দোষ কি? নিজের চরকায় তেল দেন। নাসিরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল, সেইটা ২০১৮ সালেই লাইভের মাধ্যমে শেষ করে দিছি।  আমিও বিয়ে করব। সবাইকে দাওয়াত দিতে পারব না, কিন্তু ছবি পোস্ট করব। তখন কি আমার বিয়ের ছবি আপনারা নাসিরের ওয়ালে পোস্ট করবেন? এত খোঁচান কেন?

বছরের শেষ দিকে এসে নাসির-তামিম দম্পতি সম্পর্কে নতুন খবর ছড়িয়ে পড়ে। আর তা হলো ক্রিকেটার নাসির হোসেন বাবা হতে চলেছেন। তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ২০ ডিসেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন আদালতে হাজিরা দিতে এসে তামিমা নিজেই এই খবর দেন। সেদিন এ সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়।


তবে এতেও স্বস্তি মেলেনি নাসির-তামিমা দম্পতির। বিচারাধীন মামলাটির রায় হওয়ার পর নাসির যদি তামিমার স্বামী হিসেবে বৈধতা না পান তাহলে তামিমার সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়েই প্রশ্ন উঠবে বলে জানান সাবেক স্বামী রাকিবের আইনজীবী ইসরাত হাসান।

তিনি জানান, আদালতে তামিমা বলেছেন, ‘তিনি ছয় মাসের গর্ভবতী। কিন্তু যেখানে স্বামীর বৈধতার বিষয়টিই এখনও মীমাংসা হয়নি সেখানে তামিমার গর্ভের সন্তান নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হবে। যদি রাকিব এই মামলায় জেতেন তাহলে এই সন্তানের ভরণপোষণের বিষয় রয়েছে। অন্যদিকে, নাসির স্বামী হিসেবে বৈধতা না পেলে তামিমার সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়েও উঠবে প্রশ্ন।

জেডআই/এম. জামান

ক্রীড়া জগৎ সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ