
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১, ১০:০৮ পিএম
লম্বা সময় ধরে ব্যাপক
প্রস্তুতি নিয়ে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছে বাংলাদেশ দল। প্রস্তুতির
শেষ পর্যায়ে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলে হেসেখেলে
জিতেছে টাইগাররা। যদিও কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি হেরেছে
স্বাগতিকেরাই। তবুও সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়েই বিশ্বকাপের দেশ ওমান ও সংযুক্ত আরব
আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছেন মাহমুদউল্লাহরা।
ওমানে পৌঁছে দু’টি আন-অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে জিতলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে হারের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ দল। অনেকেই ধারণা করেছিল পুরো শক্তি দল না খেলায় এই ফল এসেছে। যা হোক, কোয়ালিফায়িং পর্বের আগেই দলের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন আইপিএল খেলা মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান। তাতে দলের শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে অনায়াসে মূল পর্বে উঠে যাবে লাল-সবুজ দল।
কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে মোটেও শুভ সূচনা করতে পারেনি বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে যাত্রা শুরু করেন মাহমুদউল্লাহরা। তারপর চার দিক থেকে সমালোচনার তীর ধেয়ে আসতে থাকে টাইগারদের দিকে। দর্শক-সমর্থক থেকে শুরু করে খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও সমালোচনাকারীর দলে যোগ দেন। দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের খেলার ধরন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। সমালোচনা করেন ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও।
কোয়ালিফায়িং পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ওমানের বিপক্ষে জিতে সমালোচনা কিছুটা হলেও থামিয়ে দেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা। তখনও মূল পর্ব নিশ্চিত হয়নি লাল-সবুজ দলের। কোয়ালিফায়িং পর্বের শেষ ম্যাচ জিতলেই হবে না, থাকবে আরও কিছু সমীকরণ। তবে পাপুয়া নিউ গিনিকে ৮৪ রানে হারিয়ে সব শঙ্কা উড়িয়ে সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সমালোচনাকারীর মুখও বন্ধ করে দেয় টাইগাররা। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি পাপনকে উদ্দেশ করে কিছু কথা বলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তিনি বলেন, আমরাও মানুষ, আমাদের পরিবার আছে। তাই একটু হিসাব করেই সমালোচনা করা উচিত। জবাবে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, আমরাও মানুষ, বিসিবিতে যারা চাকরি করে তারাও মানুষ।
এমন বাকযুদ্ধের মধ্যে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে ১৭১ রান তুলেও লিটন দাসের ক্যাচ মিস আর অধিনায়কের ভুল সিদ্ধান্তে শ্রীলঙ্কার কাছে হারে বাংলাদেশ। ধারণা করা হয়েছিল পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াবে টাইগাররা। যেহেতু ঘরের মাঠে তাদের কাছে নাকানি-চুবানি খেয়েছে কিউইরা। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। ব্যাটিং ব্যর্থতায় নিউজিল্যান্ডের সামনে মাত্র ১২৪ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় বাংলাদেশ। হেরে যায় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে তাতে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ধূসর হয় টাইগারদের। তাতে সুযোগ পেয়ে আবার সরব হন সমালোচনাকারীরা। তারা এবার প্রশ্ন তোলেন অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়েই। ম্যাচে নিজেকে তো মেলে ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ; উল্টো তার কারণে রানআউট হয়েছেন তরুণ আফিফ হোসেন। আউট না হলে হয়তো আরও কিছু রান পেত বাংলাদেশ দল।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত দেখা গিয়েছে মাহমুদউল্লাহকে। কারণ আগের ম্যাচে তার বোলার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি বিশ্বকাপের পর অধিনায়ক পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেন বিসিবি সভাপতি। আবার অনেকে বলছেন, তার কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে। সব মিলিয়ে খানিকটা চাপে ছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। এবং শেষ পর্যন্ত হেরেছে দল। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার পেছনে বোর্ড আর খেলোয়াড় দ্বন্দ্ব প্রভাব অন্যতম হতে পারে বলে মনে করেন অনেকেই।
এমন দ্বন্দ্বের কারণেই হয়তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণার কয়েক দিন আগে নিজেকে সরিয়ে নেন তামিম ইকবাল। দেশসেরা এই ওপেনার দলে না থাকায় ওপেনিং জুটি নিয়ে কঠিন সমস্যায় পড়ে টিম ম্যানেজমেন্ট। সৌম্য সরকারের সঙ্গে লিটন দাসকে দিয়ে প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। তা নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি। পরের ম্যাচে লিটনের সঙ্গে মোহাম্মদ নাঈমকে জুটি করে সাফল্য পায় দল। তবে সে ম্যাচেও ব্যর্থ হন লিটন। তামিম দলে থাকলে হয়তো ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। প্রথম ম্যাচে হারার পর এ নিয়েও সমালোচনা করেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে তামিম দেশসেরা ওপেনার। কিন্তু তিনি কার ওপর অভিমান করে খেললেন না। তিনি তো দেশেই আছেন। অন্য কোথাও তো যাবেন না। কারও সঙ্গে তার ঝামেলা হতেই পারে; কিন্তু দেশের কথা তো তাকে ভাবতে হবে আগে।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার আরেকটি কারণ হতে পারে ঘরের মাঠে টার্নিং উইকেট বানিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া। প্রথমে অস্ট্রেলিয়া এবং পরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন উইকেটে খেলে জিতেছেন মাহমুদউল্লাহরা। তাতে সাময়িক লাভ হলেও ক্ষতি যে হয়েছে, সেটা এখন টের পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ড সিরিজ; স্লো-টার্নিং উইকেট বানিয়ে জয় নিশ্চিত করতেই মরিয়া ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু সর্বশেষ ৮ ম্যাচের মধ্যে ৭ ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেলেও সেখানে ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা ছিল সামান্যই। স্লো উইকেটে ম্যাচ জিততে গিয়ে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যেটা ওমান-আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারে হারে টের পাচ্ছে বাংলাদেশ। এখানে তো টার্নিং উইকেট নেই, খেলা হচ্ছে স্পোর্টিং উইকেটে। ফলে স্লো উইকেটে খেলতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া সাকিব-মুশফিকরা খেই হারিয়ে ফেলছেন।
জেডআই/এম. জামান