প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১, ১২:২১ পিএম
মুম্বাইয়ের কোনো স্টেশনে গেলে হয়তো দেখা হতে পারে তার সঙ্গে। কালো কোট গায়ে চাপিয়ে যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করেন তিনি। বুকের কাছে কালো কোটের ওপর অলিম্পিকের পাঁচটি রিং জ্বলজ্বল করে। তিনি মুম্বাই স্টেশনের টিকিট কালেক্টর। তবে তার আরও বড় পরিচয় রয়েছে। যে পরিচয়ের জেরেই রেলের এই চাকরিটি পেয়েছেন। নাম সুশীলা চানু। রিও অলিম্পিকে মহিলা হকিতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।
যদিও এখনও খেলার
সঙ্গে জড়িত সুশীলা। টোকিও অলিম্পিকেও মহিলা হকি দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
সম্প্রতি মুম্বাই স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করার সময় তার কিছু ছবি কেন্দ্রীয়
আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু টুইট করেন। সেই টুইটে ছিল সুশীলার প্রতি তার শ্রদ্ধা।
খুবই কম বয়সে হকিতে সাফল্য পেয়েছেন সুশীলা। যে অর্থনৈতিক পরিবেশ থেকে তিনি উঠে এসেছিলেন এবং যে দ্রুততার সঙ্গে হকিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছিলেন, তা প্রশংসনীয়ও বটে। ১৯৯২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মণিপুরের ইম্ফলে জন্ম তার। পরিবারের অবস্থা সচ্ছল ছিল না। মা সংসার সামলাতেন এবং বাবা গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করতেন।
ঠাকুরদা ছিলেন
একজন পোলো খেলোয়াড়। তাই খেলোয়াড়ের রক্ত তার শরীরে জন্ম থেকেই বইছিল। খেলা
ভালোবাসতেন। কিন্তু খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছা জন্মায় বাবার সঙ্গে স্টেডিয়ামে একটি ফুটবল
ম্যাচ দেখার সময়। ১৯৯৯ সালে মণিপুরে অনুষ্ঠিত হওয়া ওই জাতীয় ফুটবল ম্যাচ দেখতে
গিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ১১ বছর বয়সে হকি স্টিক হাতে তুলে নিয়েছিলেন সুশীলা। কাকার
অনুপ্রেরণাতেই তিনি ২০০২ সালে মণিপুরের এক নামজাদা হকি একাডেমিতে ভর্তি
হয়েছিলেন। কিছুদিন পরেই ডাক আসে জাতীয় স্তরে খেলার জন্য। জুনিয়র ন্যাশনাল হকি
চ্যাম্পিয়নশিপে তার খেলা দেখে মুগ্ধ হয় জাতীয় নির্বাচক কমিটি।
২০০৮ সালে কুয়ালালামপুরে মহিলা হকি জুনিয়র এশিয়া কাপের জন্য খেলেন তিনি। এটি ছিল তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তাতে ভারত ব্রোঞ্জ জিতেছিল। কিন্তু এর পরের বছরই চোটের কারণে দল থেকে সাময়িকভাবে তাকে বাদ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রদেশের হকি অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতক হয়ে তিনি ভারতীয় মধ্য রেলে মুম্বাই স্টেশনে টিকিট কালেক্টর হয়ে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১০ সাল থেকে মুম্বাই রয়েছেন তিনি। আরও এক হকি খেলোয়াড়ের সঙ্গে রেলের একটি ঘরে থাকেন তিনি।
২০১৬-র রিও
অলিম্পিকে ভারতীয় জাতীয় দলের অধিনায়ক ঘোষিত হয়েছিলেন সুশীলা। কিন্তু
অলিম্পিকের মাসখানেক আগেই হাঁটুতে ভয়ঙ্কর চোট পান। অস্ত্রোপচার করে সেই চোট
সেরে উঠতে সময় লেগেছিল। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েই ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন
তিনি। তার অধিনায়কত্বে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর মহিলা হকি দল অলিম্পিকে খেলার সুযোগ
পায়। সুশীলা স্বপ্ন দেখেছিলেন, অন্তত একবার দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক
স্তরে খেলবেন। সব মিলিয়ে মোট ১৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
এস/ডাকুয়া