প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ০২:৫৫ পিএম
নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় অবস্থিত খান সাহেব ওসমান
আলী স্টেডিয়াম। আইসিসি অনুমোদিত টেস্ট প্লেয়িং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু এটি। ২৫ হাজার
দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে খেলেছে
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারতসহ বেশ
কয়েকটি দেশ। কিন্তু এই
মুহূর্তে সেখানে গেলে মনে হতে
পারে এটি কোনো খাল
বা ঝিলপাড়।
বৃষ্টি
আর কলকারখানার বর্জ্যে একাকার আন্তর্জাতিক এ ক্রিকেট ভেন্যুর
আশপাশের এলাকা। মাঠের চারপাশ এবং স্টেডিয়ামে প্রবেশপথ
দেখে এটিকে পরিত্যক্ত ডোবা বা খাল
মনে হতে পারে। স্টেডিয়ামের
বাইরের পুরো এলাকা ডুবে
আছে কলকারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত পানিতে, সেখানে জন্মেছে কচুরিপানা। সংস্কারের অভাবে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদাপ্রাপ্ত এ স্টেডিয়ামের। এমন
অবস্থা থাকলে হয়তো অচিরেই পরিত্যক্ত
ঘোষণা করা হতে পারে
স্টেডিয়ামটি।
ক্রীড়াসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ বনাম কেনিয়ার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের এ স্টেডিয়ামটি যাত্রা শুরু করে। একই বছরের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম ভারতের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে শেষ হয় একদিনের ম্যাচের ইতিহাস।
২০০৬
সালের ৯-১৩ এপ্রিল
বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার
ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় স্টেডিয়ামটির
টেস্টের ইতিহাস। এরপর ২০১৫ সালের
১০-১৪ জুন বাংলাদেশ
বনাম ভারতের টেস্ট ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে শেষ হয় এই
স্টেডিয়ামের টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ
কখনও এ মাঠে গড়ায়নি।
বর্তমানে মাঠটিতে দু-একটি ক্লাবের
খেলা ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের
খেলা অনুষ্ঠিত হলেও মাঠের চারদিকে
পানির কারণে সেটাও বন্ধ।
স্টেডিয়াম
এলাকার বাসিন্দা অনিক মাহমুদ বলেন,
‘এই স্টেডিয়ামটি যেখানে নির্মিত হয়েছে সেখানে একসময় জলাভূমি ছিল। নির্মাণের সময়
আশপাশে বসতবাড়ি বেশি না থাকলেও
এখন বসতবাড়ির পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন
শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ফলে অন্যান্য জায়গা
থেকে মাঠটি এখন নিচু হয়ে
গেছে। যে কারণে সবসময়
মাঠটিতে পানি জমে থাকে।
কর্তৃপক্ষও পানি সরানোর ব্যাপারে
কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।’
তিনি
আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মর্যাদাপ্রাপ্ত এ মাঠটি নারায়ণগঞ্জবাসীর
জন্য গর্বের বিষয় ছিল। কিন্তু
সেই মর্যাদার বিষয়টি হাতছাড়া হতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের
নজরদারির অভাবে। আমাদের দাবি, দ্রুত ময়লা-আবর্জনা অপসারণ
ও পানি নিষ্কাশন করে
আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য উপযুক্ত করা
হোক।’
নারায়ণগঞ্জ
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভির আহমেদ টিটু বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ
জেলা ক্রীড়া সংস্থার এখানে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এটা দুঃখজনক ব্যাপার। একটা মাঠ এভাবে
পড়ে আছে অনেক দিন।
এটার বাস্তব চিত্র হচ্ছে স্টেডিয়ামটি পড়েছে ডিএনডির ভেতরে। বর্তমানে ডিএনডির অনেকগুলো এলাকা পানির নিচে। ডিএনডি এলাকার চিত্রেরই একটা অংশ এই
স্টেডিয়াম। ডিএনডির কাজগুলো সম্পন্ন হলে তখন হয়তো
চিরস্থায়ী সমাধানে আসা যাবে।’
তিনি
আরও বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং জাতীয় ক্রীড়া
পরিষদ যৌথভাবে বুয়েটের মাধ্যমে তারা এটা সার্ভে
করিয়েছে, কীভাবে করলে ভালো থাকবে।
বুয়েট অলরেডি তাদের সার্ভে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এখন
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দায়িত্ব। তারা যেকোনো সময়
কাজ শুরু করবে আবার
খেলা শুরু করার জন্য।
আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং নারায়ণগঞ্জবাসী হিসেবে
দাবি জানাই, বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী যে কার্যক্রম করতে
হবে সেটা যেন দ্রুত
শুরু করা হয়।’
খান
সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের প্রশাসক
হিসেবে দায়িত্বে থাকা রুহুল আমিন
বলেন, ‘আমাকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে রাখা হলেও সংস্কারের
বিষয়ে আমি কিছু বলতে
পারব না। আমাকে কোনো
বাজেট দেওয়া হয় না। সংস্কারের
ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদের উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন। আমার
দায়িত্ব হচ্ছে এখানে যারা কাজ করে
তাদের কোনো সমস্যা হয়
কিনা বা বাংলাদেশ ক্রিকেট
বোর্ডের বাইরে অন্য কেউ খেলে
কিনা, সে ব্যাপারে দেখাশোনা
করা।’
জেডআই/ডাকুয়া