• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

সৌদি আরবে ফেরত যাচ্ছে হজের চার হাজারের বেশি কোটা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ০৬:৪৬ পিএম

সৌদি আরবে ফেরত যাচ্ছে হজের চার হাজারের বেশি কোটা

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চলতি মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে প্রাক-নিবন্ধন করেও অনেকে হজে যেতে পারছে না। এ অবস্থায় কাক্সিক্ষত হজযাত্রী না পাওয়ায় চুক্তি অনুযায়ী হজের কোটা ফেরত পাঠাচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ৯ দফা নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি করেও ছয় হাজারের বেশি কোটা ফাঁকা রয়েছে। এর মধ্যে চার হাজারের বেশি কোটা ফেরত যাচ্ছে সৌদি আরবে।

এবার হজে যেতে আগ্রহী প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন প্রায় আড়াই লাখ মুসলমান। কিন্তু প্যাকেজের দাম বাড়ার কারণে এরা সবাই চূড়ান্ত নিবন্ধন করেননি। দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে হজযাত্রীর সাড়া না পেয়ে ২৫ এপ্রিল নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে আগামী ৯ মে এর মধ্যে নতুন করে চুক্তি সংশোধন করে ফাঁকা থাকা কোটা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মো. মতিউল ইসলাম সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, হজের নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী কোটা পূরণ হয়নি, তাই এ কোটা ফেরত দেওয়ার জন্য আগের চুক্তির সংশোধন করতে নতুন করে চুক্তি করতে হবে। বাংলাদেশের কোটা পূরণে আরও ৬ হাজারের বেশি বাকি রয়েছে। এর মধ্য থেকে চার হাজারের একটু বেশি কোটা সৌদি সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া হবে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। ফলে দেশে নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব জিনিসের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়া এবার হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া কোটা পূরণ না হওয়ার অন্যতম একটা কারণ।

তিনি বলেন, সৌদি আরবে হজের খরচ গতবারের চেয়ে বেশি বাড়েনি। সৌদি মুদ্রা রিয়ালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ও দেশে টাকার মান কমে যাওয়ায় এই অর্থে খরচ বেড়েছে। তবে বাংলাদেশে এবার হাজি বহনের বিমান ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে না রেখে অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিমান ভাড়া বৃদ্ধির কারণে মূলত প্যাকেজের খরচ বেড়ে গেছে। প্যাকেজের উচ্চমূল্যের কারণে অনেকে প্রাক-নিবন্ধন করলেও চূড়ান্ত নিবন্ধন করেননি।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দুই মাসের বেশি ধরে হজ নিবন্ধনের কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম হজ নিবন্ধন শুরু হয়। এরপর নয় দফা সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ না হওয়ায় গত ২৫ এপ্রিল উন্মুক্ত নিবন্ধন বন্ধ করা হয়।

হজসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক হজযাত্রী কয়েক বছর আগে প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন। তখন হজের প্যাকেজ মূল্য ছিল সাড়ে তিন লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার মধ্যে। বর্তমানে সেই প্যাকেজ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর হজের খরচ বেড়েছে জনপ্রতি অন্তত দেড় লাখ টাকা। ফলে হজে যাওয়ার খরচ অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।

এছাড়া অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে অনেকেরই আয় কমে গেছে। বিশেষ করে মধ্যম আয়ের মানুষ প্যাকেজ ও অন্যান্য চাহিদা অনুযায়ী অনেকের প্যাকেজের মোটা অঙ্কের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এদিকে শেষ কয়েক দফায় নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি করার আগে প্রাক-নিবন্ধন উন্মুক্ত করে দিয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে প্রাক-নিবন্ধন করে হজে যাওয়ার সুযোগ ঘোষণা করেছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতেও হজযাত্রীদের প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি।

সূত্র জানায়, এই মৌসুমে ডলার, রিয়াল ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে মাত্রাতিরিক্ত হজ প্যাকেজের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। তবে হজে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বিমান ভাড়ায়। গত বছর বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এবার এটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বিমান ভাড়া বেড়েছে ৫৮ হাজার টাকা। বৃদ্ধির হার ৪১ শতাংশ। যদিও হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর সুপারিশ করেছিল ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এতে কোনো সুফল মেলেনি। এবার হজে যেতে আগ্রহী প্রাক-নিবন্ধন করেছিল প্রায় আড়াই লাখ মুসলমান। কিন্তু চূড়ান্ত নিবন্ধনে এসে আশানুরূপ হজযাত্রী পাওয়া যায়নি।

সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জনকে হজে পাঠানোর প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু হজের খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে সাড়া মেলেনি হজযাত্রী নিবন্ধনে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ১ লাখ ২০ হাজার ৪৯১ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। তার মধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধন করেছে ১০ হাজার ৭৪ জন। বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৪১৭ জন। এর মধ্যে প্রতি ৪৫ জন হজযাত্রীর সঙ্গে ১ জন গাইড হিসাবে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসাবে সরকারি ও বেসরকারি গাইডের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৭৮ জন। এতে কোটা পূরণে আরও ৪ হাজার ২৯ জন হজযাত্রীর আসন ফাঁকা রয়েছে। কিন্তু নয় দফা সময় বাড়িয়েও সাড়া না মেলায় হজের নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে নিবন্ধিত হজযাত্রী এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৬৯ জন হজে যাচ্ছেন। তবে ফাঁকা কোটা সৌদি সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে কুরবানি ও ব্যক্তিগত খরচ। পরবর্তীকালে সৌদি অংশের খরচ কমানো হলে সরকারি-বেসরকারি উভয় প্যাকেজে ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানো হয়।

চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের ২১ মে থেকে ফ্লাইট শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন ও ফ্লাইটনাস হজযাত্রী পরিবহণ করবে। হজযাত্রীদের সুবিধার জন্য ইতোমধ্যে ‘ই-হজ বিডি মোবাইল অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে। হজ ফ্লাইট নিরবচ্ছিন্ন রাখতে রাজধানীর আশকোনায় হজ অফিসে হজ কন্ট্রোল রুম, হেল্প ডেস্ক চালু করতে নির্দেশনাসহ নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ