• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

‘জাকাত’ কখন কার ওপর ফরজ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম

‘জাকাত’ কখন কার ওপর ফরজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ইসলাম ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির ওপর স্থাপিত। এগুলোর মধ্যে ‘জাকাত’ অন্যতম ভিত্তি। আল্লাহ তায়ালা কাউকে সম্পদশালী করেছেন। আবার কাউকে দরিদ্র করে সৃষ্টি করেছেন। আর ধনীদের সম্পদে দরিদ্রের অধিকার হিসেবে প্রদান করেছেন জাকাতের বিধান।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পবিত্র কোরআনের ৮২ জায়গায় জাকাতের কথা বলা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যারা ইমান আনে, সৎ কাজ করে, নামাজ আদায় করে এবং জাকাত প্রদান করে তাদের রবের নিকট রয়েছে এর প্রতিদান। তাদের কোনো ভয় নেই এবং চিন্তিতও হবে না। সুরা বাকারা : ২৭৭

এ সর্ম্পকে আল্লাহ তা’লা ইরশাদ করেন- ‘এবং তোমরা আল্লাাহ তা’লার সন্তুষ্টির জন্য জাকাত আদায় করো। অত:পর তিনি তা দ্বীগুণ করে দেবেন। (সুরা: আর-রুম,আয়াত: ৩৯)

জাকাত আদায়ের ব্যাপারে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাক জাকাত দেয়া ফরজ করেছেন যেন তোমাদের অবশিষ্ট সম্পদকে নির্দোষ বা নির্বিঘ্ন করে দিতে পারেন’। (আবু দাউদ শরীফ)।

জাকাত হচ্ছে ধনীর সম্পদ থেকে আল্লাহপ্রদত্ত নিয়মে নির্দিষ্ট অংশ উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট প্রদান করা। এটি আর্থিক ইবাদত। নামাজ, রোজার মতোই এ ইবাদত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। দাতার অবশিষ্ট সম্পদকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখে জাকাত।

জাকাত কাকে বলে: জাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছনতা। জাকাত যেহেতু অর্থসম্পদকে পুঁজিবাদের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে, মানুষের মন-মস্তিস্ককে গর্ব-অহংকার, লোভ-লালসা ও কৃপণতার মলিনতা থেকে পরিচ্ছন্নতা রাখে। নিজের উপার্জিত সম্পদে সমাজের অবহেলিত শ্রেণির দাবি-দাওয়া পূরণে উৎসাহ যোগায়, এজন্য ইসলামের এই তৃতীয় স্তম্ভে নামকরণ হয় জাকাত।

যে তা আদায় না করবে সে ফাসিক এবং ক্বাতল হওয়ার যোগ্য। আর যে আদায় করতে বিলম্ব করবে সে গুনাহগার তার সাক্ষি গ্রহণযোগ্য নয়। (আলমগীরি: তরিকুল ইসলাম বাংলা ২য় খণ্ড, পৃ. ২৬৫)

জাকাতের হিসাব যে মাস থেকে: যাকাত আরবি (চন্দ্র মাসের) হিসাবানুযায়ী আদায় করতে হবে। বছরের যে কোন মাসে জাকাত আদায় করলে হয়। তবে আদায় করার সময় নিয়ত করা শর্ত।

জাকাতের হিসাব নিম্নরূপ: একলক্ষ টাকায় আড়াই হাজার টাকা। পঞ্চাশ হাজার টাকায় বার’শ পঞ্চাশ টাকা। দশ হাজার টাকায় আড়াইশ টাকা। এক হাজার টাকায় পঁচিশ টাকা। নয়শত টাকায় বাইশ টাকা পঞ্চাশ পয়সা। আটশত টাকায় বিশ টাকা। সাতশত টাকায় সতের টাকা পঞ্চাশ পয়সা।

বি.দ্র: উপরোক্ত জাকাতের হিসাবানুযায়ী আপনার নিকট যত লক্ষ টাকা, যত হাজার টাকা, যত শত টাকা বা যত টাকা-পয়সা থাকবে আপনি এর যাকাত বের করতে হিমশিম খেতে হবে না।

ব্যবসায়ী মালের জাকাতের মাসআলা: ব্যবসার মাল যদি নেসাব পরিমাণ হয় অর্থ্যাৎ সাড়ে সাত তোলা সোনা ও বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা অথবা সমপরিমাণ নগদ অর্থ হয় তবে সে মালের ওপর যাকাত ফরজ। শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে জাকাত আদায় করতে হবে।

জাকাত সংক্রান্ত মাসআলা: সোনা হোক বা রূপা, সব ধরনের ব্যবসায়ী মালে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে বিক্রয় মূল্যই গ্রহণযোগ্য ক্রয় মূল্য নয়। যেমন কারো নিকট যাকাতের যা মাল বর্তমানে আছে তার ক্রয় মূল্য ১ লক্ষ টাকা। কিন্তু বিক্রয় মূল্য ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। উক্ত মালের ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার ওপরই যাকাত ওয়াজিব।

জাকাত প্রদানের স্থান সমূহ: মিসকিনকে জাকাত প্রদান করতে হবে। মিসকিন ফকির বলতে সেসব মুসলিম নর-নারী বোঝায় যাদের নিকট জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি যেমন: অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা নেই অথবা আছে তবে তা প্রয়োজন মেটাবার নয়।

ঋণগ্রস্ত মানুষ যার নিকট ঋণ পরিশোধ করার উপায় নেই। সেসব নিস্বঃ নওমুসলিম, যাদের মন জয় করা মুসলমানদের দরকার। অথবা সেসব হাজীগণ যাদের টাকা-পয়সা ও পাথেয় শেষ হওয়ার কারণে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করতে অপারগ।

 

এমজে/

আর্কাইভ