প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৩, ০৬:৪২ পিএম
ফিতরা একটা আবশ্যিক দান। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রোজাদাররা অভাবীদের এটি দিয়ে থাকেন। ফিতরা আদায় করার উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের নামাজ বের হওয়ার পূর্বক্ষণে। অর্থাৎ ফিতরা দিয়ে নামাজ পড়তে যাওয়া।
ইসলামি শরিয়াহ মতে, সামর্থ্য অনুযায়ী আটা, খেজুর, গম, কিশমিশ, পনির ও যবের যে কোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজারমূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা যায়।
তবে এসব পণ্য গবিরদের তেমন কোনো উপকারে আসে না। তাই এসব পণ্যের সমমূল্য টাকা দিলে উপকৃত হবে অসহায় মানুষ। আর তাতে গরিব-অসহায় মানুষের নগদ অর্থের প্রয়োজনীয়তাও কেটে যাবে।
সাহাবি ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব।’ (বুখারি, হাদিস: ১৫১২)
কিন্তু যাকে তাকে ফিতরা দেয়া যাবে না। কাকে ফিতরা দেয়া যাবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যারা জাকাত পাওয়ার অধিকার রাখে, তারাই ফিতরার হকদার। এক্ষেত্রে নিজ পরিবার-পরিজনের মধ্য গরিব-অসহায়রাই ফিতরার প্রথম হকদার। আর একজনকে ন্যূনতম পূর্ণ একটি ফিতরা দেয়া উত্তম। প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কয়েকজনের ফিতরাও একজনকে দেয়া যেতে পারে।
সুরা তাওবার ৬০ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘জাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য, এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’
এ আয়াতে জাকাতের ৮টি খাতের বিবরণ তুলে ধরেছেন আল্লাহ তআলা। আর সেই লোকেরাই ফিতরা গ্রহণ করতে পারবেন। চলুন জেনে নেয়া যাক সেগুলো-
ফকির
প্রয়োজন পূরণ হতে পারে এমন সম্পদ বা উপযোগী হালাল উপার্জন না থাকা ব্যক্তিদের ফকির বলা যায়। তারা জীবন ধারণের জন্য অপরের ওপর নির্ভরশীল।
মিসকিন
কোনো ব্যক্তির কাছে থাকা সম্পদ দিয়ে তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট না হলে তাকে মিসকিন বলা যায়।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
ঋণের ভারে জর্জরিত, যার ঋণ পরিশোধের কোনো অবস্থান নেই- এমন ব্যক্তিকে জাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা যাবে।
জাকাত ওঠানোয় নিয়োজিত ব্যক্তি
জাকাত আদায়কারী, সংরক্ষণকারী, পাহারাদার, লেখক, হিসাবরক্ষক এবং তার বণ্টনকারী সবাইকে জাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে। তবে তাকে মুসলিম হতে হবে; পূর্ণ বয়স্ক ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন হতে হবে, জাকাতের বিধান সম্পর্কে ইলম থাকতে হবে।
দাসমুক্তি
যে ক্রীতদাস তার মুক্তিলাভের জন্য অর্থ দেয়ার বিনিময়ে চুক্তিবন্ধ হয়েছে কিংবা কোনো মুসলিম যুদ্ধবন্দিও এ খাতের আওতায় পড়বে। ইবনুল আরাবির মতে, মুসলিম দাসকে যখন মুক্ত করতে জাকাতের খাত থেকে দেয়া যাবে, ঠিক তেমনি মুসলিম বন্দিকে কাফিরদের দাসত্ব শৃঙ্খলা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত করার কাজেও জাকাতের অর্থ ব্যয় করা অধিক উত্তম।
চিত্ত আকর্ষণ করার প্রয়োজনে
যাদের মন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করা প্রয়োজন কিংবা ইসলামের ওপর তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য লোকদের জাকাতের খাত থেকে দেয়া যাবে। ইমাম যুহরির মতে, যে ইহুদি বা খ্রিস্টান ইসলাম কবুল করবেন, সে-ই এর মধ্যে গণ্য, সে যদি ধনী হয় তবুও।
মুসাফিরদের জন্য
নিজ আবাসস্থলে সম্পদ আছে, এমন ব্যক্তি যদি সফরে গিয়ে বিপদগ্রস্ত ও নিঃস্ব হয়, তবে তাকে জাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা যাবে।