• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কোরআনের দৃষ্টিতে অভিশপ্ত ব্যাক্তি যারা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩, ১১:৫২ পিএম

কোরআনের দৃষ্টিতে অভিশপ্ত ব্যাক্তি যারা

ছবিঃ সংগৃহীত

ফিচার ডেস্ক

পবিত্র কোরআনে যেসব মন্দ বিষয় সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল, ‘আসবাবে লানত’ তথা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার নানা কারণ। যুগে যুগে যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়েছিল কোরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় তাদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। 

কোরাআনে অভিশপ্ত বলা হয়েছে এমন কিছু মানুষের বর্ণনা তুলে ধরা হলো-

 

আল্লাহর হুকুম অমান্যকারী

পৃথিবীর সবাই আল্লাহ তায়ালার বান্দা। আল্লাহ সবার রব, সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। তাঁর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি যেসব আদেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা আবশ্যক।

তাঁর কোনো আদেশ না বুঝে না এলেও শুধু এ মনে করে তা মানতে হবে যে, তিনি সর্বজ্ঞ, আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ; তাই তাঁর আদেশ আমাদের জন্য নিশ্চয়ই কল্যাণকর।তাঁর যে কোনো আদেশের সামনে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে। কোনো প্রকার অহংকার প্রদর্শন করা যাবে না।

কখনও কোনো আদেশ অমান্য হয়ে গেলে তা থেকে ফিরে আসতে হবে, তওবা করতে হবে। ভুলের উপর অবিচল থাকা যাবে না। 

কষ্টের কিছু কথা ভালোবাসার, প্রেমের কষ্টের স্ট্যাটাস - eSujon

এমন হলে আল্লাহর অভিশপ্ত বান্দার অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। কারণ ইবলিস অভিশপ্ত হয়েছিল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হজরত আদম আ.-কে সিজদা করার আদেশ লঙ্ঘন করার কারণে। সে অহংকার বশত আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল। এসব কারণে সে অভিশপ্ত হয়েছিল। 

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা কর। তখন তারা সিজদা করল, কিন্তু ইবলীস করল না। সে বলল, আমি কি তাকে সিজদা করব, যাকে আপনি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? সে বলতে লাগল, বলুন তো, এই কি সেই সৃষ্টি, যাকে আপনি আমার উপর মর্যাদা দান করেছেন! আপনি  যদি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দেন, তবে আমি তার বংশধরদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ছাড়া বাকি সকলের চোয়ালে লাগাম পরিয়ে দেব।

আল্লাহ বললেন, যাও, তাদের মধ্যে যে কেউ তোমার অনুগামী হবে, জাহান্নামই হবে তোমাদের সকলের শাস্তি- পরিপূর্ণ শাস্তি। তাদের মধ্যে যার উপর তোমার ক্ষমতা চলে নিজ আহ্বানের দ্বারা বিভ্রান্ত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদের উপর চড়াও হও, তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হয়ে যাও এবং তাদেরকে যত পার প্রতিশ্রুতি দাও। বস্তুত শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়  তা ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। নিশ্চয়ই আমার যারা বান্দা, তাদের উপর তোমার কোনো ক্ষমতা চলবে না। তোমার রক্ষকরূপে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। -(সূরা ইসরা, আয়াত, ৬৫)

জেনেবুঝে কুফরির উপর অবিচল থাকা

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর এসব লোক বলে, আমাদের অন্তর আচ্ছাদনের ভেতর। কখনও নয়; বরং তাদের কুফরির কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। এ কারণে তারা অল্পই ঈমান আনে।

যখন তাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে এমন কিতাব (অর্থাৎ কুরআন) এলো, যা তাদের কাছে (পূর্ব থেকে) যা আছে তার (অর্থাৎ তাওরাতের ) সমর্থন করে  (তখন তাদের আচরণ লক্ষ্য করে দেখ), যদিও পূর্বে এরা কাফিরদের (অর্থাৎ পৌত্তলিকদের) বিরুদ্ধে (এ কিতাবের মাধ্যমে) আল্লাহর কাছে বিজয় প্রার্থনা করত, যখন সেই জিনিস আসল, যাকে তারা চিনতে পেরেছিল, তখন তাকে অস্বীকার করে বসল। সুতরাং এমন কাফেরদের প্রতি আল্লাহর লানত। -(সূরা বাকারা, আয়াত, ৮৯)

সত্য গোপনা করা

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই যারা আমার নাযিলকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি ও হেদায়াত গোপন করে, যদিও আমি কিতাবে তা মানুষের জন্য সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি, তাদের  প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন এবং অন্যান্য লানতকারীও লানত বর্ষণ করে। -(সূরা বাকারা, আয়াত, ১৫৯)

আল্লাহর দ্বীন নিয়ে হাসিঠাট্টা ও উপহাস করা

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

ইহুদীদের মধ্যে (কিছু লোক এমন আছে) যারা (তাওরাতের) শব্দাবলিকে তার প্রকৃত স্থান থেকে সরিয়ে দেয় এবং নিজেদের জিহ্বা বাঁকিয়ে ও দ্বীনকে নিন্দা করে বলে, ‘সামি‘না এবং ‘আসায়না’ এবং ‘ইসমা‘ গায়রা মুসমাইন’ এবং ‘রাইনা’ অথচ তারা যদি বলত ‘সামি‘না ওয়া আতা‘না এবং ওয়াসমা‘ ওয়ানযুরনা’ তবে সেটাই তাদের পক্ষে উত্তম ও সঠিক পন্থা হত। বস্তুত তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি লানত করেছেন। সুতরাং অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া তারা ঈমান আনবে না। -(সূরা নিসা, আয়াত, ৪৬)

আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা

আল্লাহ তায়ালা বলেন- অতঃপর তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণেই তো আমি তাদেরকে আমার রহমত থেকে বিতাড়িত করি ও তাদের অন্তর কঠিন করে দেই। তারা কথাসমূহকে তার আপন স্থান থেকে সরিয়ে দেয় এবং তাদেরকে যে বিষয়ে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তার একটি বড় অংশ ভুলে যায়। (আগামীতে) তুমি তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলেরই কোনো না কোনো বিশ্বাসঘাতকতার শ্বাস  কথা জানতে থাকবে। সুতরাং (এখন) তাদেরকে ক্ষমা কর ও তাদেরকে পাশ কাটিয়ে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইহসানকারীদের ভালবাসেন। -(সূরা মায়িদা, আয়াত, ১৩)

ছেলেদের কষ্টের কান্না ছবি পিক ডাউনলোড ২০২৩ - BanglaFeeds.info

আল্লাহ তাআলার শানে বেয়াদবি

পবিত্র কোরআন বর্ণিত হয়েছে, ‘ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত বাঁধা। হাত বাঁধা তো তাদেরই। তারা যে কথা বলেছে সে কারণে তাদের উপর লানত বর্ষিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর উভয় হাত প্রসারিত। তিনি যেভাবে চান ব্যয় করেন। ...অথচ আল্লাহ অশান্তি বিস্তারকারীদেরকে পছন্দ করেন না। -(সূরা মায়িদা, আয়াত, ৬৪)

পরকালে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকে অস্বীকারকারী 

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

যারা আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়াকে অস্বীকার করেছে, নিশ্চয়ই তারা অতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশেষে কিয়ামত যখন অকস্মাৎ তাদের সামনে এসে পড়বে তখন তারা বলবে, হায় আফসোস! আমরা এ (কেয়ামত) সম্পর্কে বড় অবহেলা করেছি এবং তারা (তখন) তাদের পিঠে নিজেদের পাপের বোঝা বহন করবে। সাবধান! তারা যা বহন করবে তা অতি নিকৃষ্ট। -(সূরা আনআম: ৩১)

যারা শয়তানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে

মানুষকে পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী করার প্রতিজ্ঞা নিয়েছে অভিশপ্ত শয়তান। তাই শয়তানকে যারা বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে কোরআনে-

আর সে (আল্লাহকে) বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্ধারিত এক অংশকে নিয়ে নেব। এবং আমি তাদেরকে সরল পথ থেকে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুত করব, তাদেরকে (অনেক) আশা-ভরসা দেব এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান চিরে ফেলবে এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায়। - (সূরা নিসা : ১১৮-১১৯)

 

সাজেদ/

আর্কাইভ