• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

নবীজি সা. মুসলিমদের আদর্শ বলেছেন যাদের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩, ০৭:২৬ পিএম

নবীজি সা. মুসলিমদের আদর্শ বলেছেন যাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিশ্ব ইজতেমায় আগত তাবলিগের সাথীদের অন্যতম আকর্ষণ থাকে মুরব্বি আলেম ভারতের মাওলানা আহমদ লাটের বয়ান। তিনি আগতদের বলেছেন, মুসলমানদের আদর্শ হলো সাহাবায়ে কেরাম। তাদের বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারাই সঠিক পথে থাকবে যারা আমার এবং আমার সাহাবিদের অনুসরণ করবে।

তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, তোমরা আমার এবং সুপথপ্রাপ্ত আমার খলিফাদের সুন্নতের অনুসরণ করবে। অর্থাৎ, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সাহাবিদের অনুসরণ-অনুকরণে জীবনযাপন করা। তাদের চিন্তাচেতনা অন্তরে লালন করা। তারা দ্বীন-ইসলামের জন্য যেভাবে কাজ করেছেন সেভাবে কাজ করা ও সে কাজকে নিজের কাজ মনে করা।

তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা মুসলমাদের জন্য সাহাবিদেরকে অনুকরণীয় বানিয়েছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার পরে কেয়ামত পর্যন্ত যারা দুনিয়ার বুকে আসবে, তাদের সবার জন্য আমার এবং আমার সাহাবীদের আদর্শ রেখে গেলাম। তোমরা যদি এই দুই আদর্শকে সামনে রেখে চলো তাহলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। অন্যথায় তোমাদের ধ্বংস অনিবার্য। মাওলানা আহমদ লাট বলেন, প্রিয় ভাইয়েরা, একারণেই আমাদের আদর্শ হলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিরা। এর বাইরে আমাদের কোনো আদর্শ বা অনুসরণীয় কেউ নেই।

ইজতেমার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) মাগরিবের পরে বয়ানের মেম্বার থেকে আগতদের উদ্দেশ্যে  এসব বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, প্রিয় ভাইয়েরা, কেউ কোনো কিছু তৈরি করলে তার প্রতি মোহাব্বত ও ভালোসা থাকে। ঠিক তেমনি আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের প্রতি তার সীমাহীন মোহাব্বত ও ভালোবাসা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে ছেড়ে দেননি।

বরং সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই আল্লাহ তায়ালা মানুষকে জীবন, সম্পদ, যোগ্যতা দিয়েছেন এবং খেয়াল রেখেছেন, মানুষের ধনসম্পদ, যোগ্যতা, সক্ষমতা যেন তার বিপদের কারণ না হয়। একারণেই মানুষ সৃষ্টির সূচনা থেকেই সঠিক পথের দিশা দেওয়ার জন্য নবী-রাসুলদের ধারাবাহিকতা শুরু করেছেন। সাথে সাথে তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল,সহিফা এবং সর্বশেষ পবিত্র কোরআন কারীমের মত বিভিন্ন আসমানী কিতাব দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান শেখার জন্য আসমানী কিতাব এবং কার্যত অনুসরণে জন্য নবী-রাসুলদের পাঠিয়েছেন। এ কারণেই কোরআনের শুরুতেই ঈমান, আমল এবং আখেরাতের কথা রয়েছে। মানুষ যেন দুনিয়ার পাশাপাশি আখেরাতেও সুখসাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে এটাই এর মূল উদ্দেশ্য।

বয়ানে তিনি বলেন, ঈমান কী? ঈমান হলো– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। এই কথা অন্তরে বদ্ধমূল করে নেওয়া। আমলকে যথাযথ করা। আখেরাতকে বানানো। তাহলে  দুনিয়া এবং  আখেরাতের জীবন সুন্দর হবে।  আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এই কাজগুলো করলে তুমি পথপ্রাপ্রপ্ত হবে এবং সফলতা লাভ করবে। কারণ, যারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়, তারা দুনিয়ার জীবনে সুখশান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে। তারা আখেরাতেও সফল হবে। দুনিয়ার জীবন যেন অশান্তির না হয় এবং আখেরাতের জীবন যেন ধ্বংসের না হয়, এই জন্য পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এই তিন জিনিসের প্রতি ডেকেছেন।

তিনি বলেন, অন্তরে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ভয় রাখতে হবে। কারো কাছে আশা-আকাঙ্ক্ষা করতে হলে তা হবে আল্লাহ তায়ালার কাছে।

তিনি বলেন, জীবন এবং ধনসম্পদ আমাদের নয়। আল্লাহ তায়ালা এগুলো আমাদের কাছে আমানত হিসেবে রেখেছেন। এই আমানতের সঠিক ব্যবহারে দুনিয়া এবং আখেরাতে জীবন সঠিক হবে। আর এই আমানতে খেয়ানত করলে জীবনের আসল উদ্দেশ্য ঠিক থাকবে না। তখন দুনিয়া এবং আখেরাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ও লাঞ্চিত হবো।

আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়ায় পাঠানোর পূর্বে ছয়শো বছর পর্যন্ত কোনো নবী আসেননি। অথচ, নবী-রাসুলগণই মানুষকে ভালোমন্দ শেখাতেন। আল্লাহর পরিচয় এবং আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম চেনাতেন। এই দীর্ঘ সময় নবী-রাসুল না আসার কারণে পৃথিবীর মানুষ অন্ধকারে জীবনযাপন করছিল। তখন তাদের এতটুকু অনুভূতি ছিলো না যে, এক টুকরো পাথর আমার সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রাখে না। বিপদাপদ থেকে রক্ষা করতে পারে না। ইতিহাসবিদরা ওই যুগ সম্পর্কে লিখেছেন, ওই যুগ এতই ভয়াবহ ও মূর্খতাপূর্ণ ছিল যে, তা বর্ণনা করার ভাষা আমাদের জানা নেই।

দীর্ঘ দিন এভাবে অতিবাহিত হওয়ার পরে আল্লাহ তায়ালা দয়া ও অনুগ্রহ করে নবীদের সর্দার হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়াবাসীর জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছেন এবং নবীজির নিজের মুখে ঘোষণা করিয়েছেন– হে দুনিয়ার লোকেরা, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি। ধনী-গরীব, সাদা-কালো, আরবি-আজমি, পূর্বের বা পশ্চিমের সব গোত্রের সব শ্রেণির মানুষের জন্য আমি নবী হিসাবে প্রেরিত হয়েছি। কেয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত মানুষের প্রতি পয়গাম দিয়ে আল্লাহ তায়ালা আমাকে পাঠিয়েছেন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পয়গাম নিয়ে সাফা পর্বতে আরবের কোরাইশের সব গোত্রের লোকদেরকে ডাকলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পর্বতপ্রান্তরে সমবেত লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলেন– আমার বিষয়ে তোমাদের অভিমত কী? তখন লোকেরা বললো, আপনি মিথ্যা কথা বলবেন এই বিষয়ে আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আপনি চূড়ান্ত পর্যায়ের সত্যবাদী। আপনি আমানতদার। আপনার কাছে আমানত রেখে আমরা নিশ্চিন্ত হই। আপনি বিশ্বস্ত ও সৎ মানুষ।

উপস্থিত লোকদের অভিমত শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যদি আমাকে এতই বিশ্বাস করো তাহলে আমি তোমাদেরকে সংবাদ দিচ্ছি এই পাহাড়ের পেছনে অনেক বড় একটি শত্রুদল রয়েছে। তোমরা ভোর হওয়ার আগেই যদি এই জায়গা থেকে চলে না যাও তাহলে তারা তোমাদের ওপরে আক্রমণ করবে। আমি এমন সংবাদ দিলে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? উপস্থিত সবাই একবাক্যে জবাব দিল, অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করব। কারণ আপনি কখনো মিথ্যা কথা বলেন না।

তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমরা সবাই পড়ো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, তাহলে তোমরা সফল হয়ে যাবে। আমি তোমাদেরকে বলছি, আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র উপাস্য। তার কোনো শরিক নেই। তার মত বা তার সমতূল্য কেউ নেই। এই কথা স্বীকার করলে তোমরা সফল হয়ে যাবে।

দীর্ঘ ছয়শো বছর পর্যন্ত তারা গোমরাহ ছিল। বিভিন্ন মূর্তি ও বস্তুর পূজা করতো। এগুলোকে বিশ্বাস করতো। তারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব কথা শুনে বলতে লাগলো এরকম মিথ্যা কথা ইতোপূর্বে আর কখনো শুনিনি।

তবুও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাল ছাড়েননি। তাদের পেছনে মেহনত করেছে। বিভিন্ন গোত্র এবং বিভিন্ন শহরে গিয়ে ধনী-গরিব, সাদা-কালো, অশিক্ষিত-শিক্ষিত, যুবক-বৃদ্ধ যাকে পেয়েছেন তার কাছেই দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন। মানুষকে বুঝিয়েছেন, তোমরা এক আল্লাহকে উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করো। তাহলেই সফল হবে। দুনিয়া এবং আখেরাত সুখময় হবে।  নয়তো ধ্বংস ও লাঞ্চনা তোমাদেরকে আঘাত করবে।

প্রিয় ভাইয়েরা, আমরা যখন কাউকে দাওয়াত দিব তখন নিজেকে প্রস্তুত করেই দাওয়াত দিব। যাকে দাওয়াত দিচ্ছি সে আমার কথা নাও মানতে পারে। এ কারণে নিরাশ হওয়া যাবে না। কুরাইশের কাফেররা যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা মানলো না, তখন কিন্তু তিনি নিরাশ হননি। তাদের পেছনে আরো মেহনত করেছেন। বারবার দাওয়াত দিয়েছেন।

আমরাও মানুষের পেছনে অব্যাহত মেহনত করে যাবো। আর, আল্লাহ তায়ালা আমাকে যেই জীবন এবং সম্পদ দিয়েছেন তা সঠিকভাবে ব্যবহার করবো। জীবনের সব ক্ষেত্রে দ্বীন মানবো। চাই সেটা ঘরে, সমাজে, দেশে বা নিজের কর্মস্থলে যেখানেই হোক। সবখানে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে চলতে বলেছেন সেভাবেই চলবো তাহলে জীবন সুখময় হয়ে যাবে।

আর্কাইভ