• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

২০৬ কিমি সাইকেল চালিয়ে মসজিদ দেখতে গেলেন আবুল হোসেন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩, ০২:৫৬ পিএম

২০৬ কিমি সাইকেল চালিয়ে মসজিদ দেখতে গেলেন আবুল হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মাগুরা থেকে সাইকেল চালিয়ে ২০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে অবস্থিত আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদে ছুটে এসেছেন আবুল হোসেন (৮০) নামে এক বৃদ্ধ। নিজ চোখে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ দেখতে এবং সেখানে জুমার নামাজ আদায় করতে এসেছেন তিনি।

গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) আসরের নামাজের আগে তিনি উপজেলার আল-আমান বাহেলা খাতুন মসজিদে এসে পৌঁছালে উপস্থিত ইমাম, মুয়াজ্জিন ও স্থানীয় মুসল্লিরা তাকে স্বাগত জানান।

জানা যায়, মাগুরা সদর উপজেলার আঠারখাদা ইউনিয়নের আবুল হোসেন শেখ গত দুই সপ্তাহ আগে নান্দনিক কারুকার্য সম্পন্ন ও দৃষ্টিনন্দন আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখে সিদ্ধান্ত নেন এই মসজিদে তিনি জুমার নামাজ আদায় করবেন এবং নিজ চোখে এক নজর দেখবেন। সেই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে সোমবার (২ জানুয়ারি) নিজ গ্রামের মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ আদায় করে মাগুরা থেকে সাইকেল চালিয়ে বেলকুচিতে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদে এসে পৌঁছান। ব্যক্তি জীবনে আবুল হোসেন ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ের জনক। তিনি পেশায় একজন কৃষক।

আবুল হোসেন শেখ বলেন, আমি ফেসবুকে এই মসজিদের ভিডিও দেখি। দেখার পর থেকে মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় ও স্ব-চোখে দেখার ইচ্ছা হয়। এই ইচ্ছা পূরণের জন্য গত সোমবার ফজরের নামাজ পড়ে সাইকেল নিয়ে বের হই। আল্লাহ তায়ালা সহি-সালামতে বুধবার আসরের সময় পৌঁছে দিয়েছেন। এখন সুস্থ আছি। এখানে আসার পর সবাই আমাকে অনেক সমাদর করছেন।

তিনি বলেন, দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী দ্বারা নির্মিত আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ ভবনটি যে কেউ প্রথম দেখলেই অনুভূতি হবে এ যেন সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার এক অপূর্ব মেলবন্ধন। আল্লাহের রহমতে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করবো। এজন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। 

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেলকুচির মুকুন্দগাঁতী গ্রামের শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকার বেলকুচি পৌর ভবন সংলগ্ন দক্ষিণে আড়াই বিঘা জমির ওপর তার ছেলে আল-আমান ও মা বাহেলা খাতুনের নামে ‘আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ’ কমপ্লেক্স নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে নয়নাভিরাম এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় চার বছর। শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫ শ্রমিক কাজ করেছেন।

রহমত গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার এ মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। মানবিক এ শিল্পপতি গত বছরের আগস্ট মাসে ইন্তেকাল করেছেন। এরপর তার পরিবারের চেষ্টায় মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়।

মসজিদের খাদেম আব্দুল মান্নান বলেন, এ মসজিদে ছাই রঙের বিশালাকৃতির মনোরম একটি গম্বুজ রয়েছে। এছাড়া মেঝেতে সাদা রঙের ঝকঝকে টাইলস এবং পিলারগুলো মার্বেল পাথর জড়ানো। তৃতীয় তলায় গম্বুজের সঙ্গে লাগানো ছাড়াও অন্যান্য স্থানে চায়না থেকে আনা বেশ কয়েকটি আলো ঝলমল ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে। দুই পাশে নির্মাণাধীন ১১ তলা সমতুল্য (১১০ ফুট) উচ্চতার মিনার থেকে আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে। এই মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। শবে বরাতের রাতে জেলার বহু অঞ্চলের মানুষ এখানে নামাজ ও নফল ইবাদতসহ মসজিদটি পরিদর্শনে আসেন।

আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা গোলাম কিবরিয়া বলেন, আবুল হোসেন ৮০ বছর বয়সে যেভাবে সাইকেল চালিয়ে সুদূর মাগুরা থেকে এখানে নামাজ পড়তে এসেছেন আমি মনে করি এটা সম্ভব হয়েছে তার ঈমানি শক্ত থাকার কারণে। ঈমানি শক্তি না থাকলে এই বয়সে এতোপথ শুধু সাইকেল চালিয়ে আসা সম্ভব হতো না। আমি আবুল হোসেনসহ সকলের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। আল্লাহ যেন সকল মুসলমানের ঈমানি শক্তি বাড়িয়ে দেন।

এ ব্যাপারে বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা জানান, প্রথম দেখাতেই যে কারও দৃষ্টি কাড়ে এ মসজিদটি। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এই মসজিদের নির্মাণশৈলী বেশ আকর্ষণীয়। ব্যস্ত সড়কে যাতায়াতকারী যে কেউ প্রথম দেখাতেই থমকে দাঁড়ান।

তিনি বলেন, বৃদ্ধ বয়সে মাগুরা জেলা থেকে সাইকেল চালিয়ে বেলকুচিতে এসেছেন এটা এক অন্যরকম বিষয়। তাকে পৌরসভার পক্ষ থেকে সম্মানি দেওয়া হয়েছে। মসজিদের পাশে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা তার ইচ্ছা শক্তিকে সম্মান জানাই। তার সহি-সালামতে বাড়িতে পৌঁছার জন্য দোয়া করি। সেই সঙ্গে আল্লাহ যেন দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের নির্মাতাকে জান্নাতবাসী করেন সেই দোয়া করি। 

আর্কাইভ