প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম
বিভিন্ন মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে টানা ১৭ বছর কারাগারের চার দেয়ালের ঘেরাটোপে ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর, সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সোজা চলে গেলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর প্রাঙ্গণে।
সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর। হাত তুলে নেতাকর্মীদের অভিবাদনের সাড়া দেন।
জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা জানানোর পর বনানীতে মা-বাবার কবর জিয়ারত করে অসুস্থ বাবর রওনা হন গুলশানের বাসার দিকে।
বৃহস্পতিবার তার মুক্তি ঘিরে কেরাণীগঞ্জ কারাগারের সামনে আগে থেকেই জড়ো হয়েছিলেন পরিবারের সদস্যসহ হাজারো নেতাকর্মী। বেলা পৌনে ২টায় কারাগার থেকে বের হলে নেতাকর্মীদের নিয়েই তার গাড়িবহর চলে যায় শেরে বাংলা নগরে। এতে তার সময় লেগে যায় তিন ঘণ্টা।
কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের অত্যন্ত প্রিয় সহকর্মী যিনি ১৭ বছরের বেশি সময় কারাগারের অন্ধকুঠিরে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং যিনি উচ্চ আদালতের রায়ে নিরাপরাধ প্রমাণিত হয়ে মুক্ত হয়েছেন। আমাদের সেই প্রিয় সহকর্মী লুৎফুজ্জামান বাবরকে নিয়ে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছি।
“বাবর যখন কারাগারে যান, তখন টগবগে যুবক ছিলেন। তাকে মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কারাগারে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ৬ বছর তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এই নিপীড়ন, এই অনিশ্চিত জীবন…দুইটি মামমলায় মৃত্যুদণ্ড, একটি মামলায় যাবজ্জীবন…এই দুশ্চিন্তা, মিথ্যা অভিযোগের কারণে যে ক্ষোভ বেদনা এটা তাকে বৃদ্ধ করে ফেলেছে।”
নজরুল ইসলাম বলেন, “লুৎফুজ্জামান বাবর বিএনপির নিবেদিত নেতা। তিনি খুব অসুস্থ। এই অবস্থাতেও তার ঘরে পরিবারের কাছে না গিয়ে তিনি এসেছিলেন তার নেতা, আমাদের নেতা শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করতে।”
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে লুৎফুজ্জামান বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জরুরি অবস্থার সেই দুই বছর এবং পরে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে কয়েকটি মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়, একটিতে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আপিল শুনানি শেষে একে একে এসব মামলায় খালাস পান বাবর।
গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির এক মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আসামি বাবরসহ সব আসামিকে গত ১ ডিসেম্বর খালাস দেয় হাই কোর্ট।
১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাতেও বাবরের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। আর অস্ত্র আইনের পৃথক মামলায় হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
গত ১৮ ডিসেম্বর ও ১৪ জানুয়ারি আপিলের রায়ে হাই কোর্ট দুই মামলাতেই বাবরকে খালাস দিলে তার মুক্তির পথ খোলে।
বাবর নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ সময়ে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।