প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ প্রতিবন্ধীদের ভাতা লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। এ সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের নিয়ে আগামী দিনে বিএনপির পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
প্রতিবন্ধীদের ভাতা লুটের অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, আপনারা অনেকেই জানেন, ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবন্ধীদের ভাতা প্রদান শুরু করলেও আওয়ামী লীগ সেই ভাতাকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে, নিজেদের নেতা-কর্মীদের মাঝে লুটে নিয়েছে। অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে, তা ন্যায্যভাবে পুনর্র্নিধারণ করতে চাই। নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে, আমরা সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করবো, যাতে একজন প্রতিবন্ধীও সামাজিক সুবিধা থেকে বাদ না পড়ে।
প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে তাদের জন্য স্বতন্ত্র একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবনের মানোন্নয়নে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যার ভিত্তি হবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। আমরা একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেবো, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম সমন্বয় করবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি, জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলে নির্বাচিত বিএনপি সরকার নিশ্চিত করবে যে, দেশের অন্যান্য সকল নাগরিকের মতো আপনাদেরও নাগরিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা সঠিকভাবে এবং সমানভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা থাকবে। আপনাদের সুচিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ, চাকরির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ, এবং দেশের প্রতিটি স্থাপনা ও যাতায়াত ব্যবস্থাকে আপনাদের জন্যে এক্সিসেবল করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ‘সুবর্ণ নাগরিক কার্ড’ গতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, সুবর্ণ কার্ডকে গতিশীল করে আমরা এর আওতায় স্বাস্থ্য বীমা, শিক্ষা বৃত্তি, পরিবহন ডিসকাউন্টসহ অন্যান্য সামাজিক সুবিধা প্রদান করতে চাই। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা যাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন, আমরা তাদের জন্য বাস্তবসম্মত ভোকেশনাল ও টেকনিকাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করবো। বিশেষত আউটসোর্সিং, ডাটা প্রসেসিং, এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিন্তু মেধাবী তরুণদের জন্য সুনির্দিষ্ট কারিগরি ও কাঠামোগত সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি, ট্যাক্স ওয়েভার এবং ওয়ার্ক স্টেশন সৃষ্টির সুযোগ কার্যকরভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও, উদ্যমী ও সফল প্রতিবন্ধীদের জন্য সহজ শর্তে বিশেষ ঋণ সুবিধা প্রদান করে উদ্যোক্তা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো যাবে।
একইসঙ্গে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রশিক্ষণ,গণপরিবহন ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাকে তাদের জন্য উপযোগী করে তোলা, স্বাস্থ্য, প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার বিষয়সহ নানা ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির কথা জানান তারেক রহমান।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনাদের প্রতিবন্ধকতা আমাদের সবার প্রতিবন্ধকতা। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের পেছনে রেখে আমরা কখনো এগিয়ে যেতে পারি না, আর এগোতে চাইও না। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, সেটি হবে সবার জন্য ফেয়ার, সবার জন্য ইনক্লুসিভ, সবার জন্য বাসযোগ্য এবং সবার জন্য উপভোগ্য। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যার ভিত্তি হবে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, এবং উদারতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ। আপনাদের কল্যাণ এবং সাফল্য আমাদের অগ্রাধিকার।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. পারভেজ রেজা কাকনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা অন্তত দেড় শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন।