প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ১০:২৮ পিএম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐক্য ধরে রেখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে প্রতিহত করতে হবে। কারণ শেখ হাসিনা এখনও সক্রিয় রয়েছে, সে আবারও ফিরে এসে ক্ষমতা নিতে চায়। তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে-যাতে ফিরে আসতে না পারে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি (এআই) মানুষকে কোথায় নিয়ে যাবে? এর মাধ্যমে মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। ফ্যাসিস্টরা দেশের সব ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তাই আমাদের ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচারী সরকার ইতিহাস বিকৃতি করেছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে জাতির চিন্তা, বিবেক, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করেছে। এখনও একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে-আর তা হলো ৭১ কে পেছনে রাখা। ৭১ সালকে পিছিয়ে রাখা আরেকটি ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র। মূল ইতিহাস থেকে জাতিকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। সজাগ থাকতে হবে- এখন যেনো ইতিহাসকে আবার কেউ বিকৃত না করে।
স্যোশাল মিডিয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের আরও বেশি সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মেধাভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। কারণ স্যোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকার কারণেই ছাত্র জনতা মাত্র দুই মাসে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়। ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করে নতুন ব্যবস্থার দিকে যেতে যে কাজ, ধৈর্য্য ধরা দরকার সে বিষয়গুলো আমরা ভুলে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ করে দিবে। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হবে, দেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে।
শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমন দিবসকে অবহেলা করবেন না, ভুলে যাবেন না জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পাক হানাদার বাহিনী দেশীয় আলবদর বাহিনীর মাধ্যমে ধরে ধরে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারও আয়নাঘর বানিয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের খুন, গুম করেছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে পরমত সহিষ্ণুতা, গণতন্ত্রকে যতক্ষণ পর্যন্ত সংস্কৃতিতে পরিণত করতে না পারবো ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। অতীতে এমন ষড়যন্ত্র জনগণ মোকাবেলা করেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করেছে অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বল। কিন্তু এ সরকারকে সব দল সমর্থন দিয়েছে। তিনি বলেন, সংস্কার হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিন তারিখে সংস্কার শেষ হবে না। এটি চলমান প্রক্রিয়া। ভবিষ্যতে জনগণের সরকারই তা বাস্তবায়ন করবে। সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত হলে সরকারের জন্য খারাপ খবর বয়ে আনবে, জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংস্কার শুরু করেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ দেন। জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কোন ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না।
বুদ্ধিজীবী হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চূড়ান্ত বিজয়ের দু’দিন আগে পাকিস্তানী হানাদাররা যখন নিশ্চিত হলো-তাদের এদেশ ছাড়তে হবে, তখন আলবদর বাহিনীর মাধ্যমে এদেশের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ইঞ্জিনিয়ারদের হত্যা করে। তরুণ প্রজন্মকে জাতির এ ইতিহাস জানতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়। একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করে। দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে। তারা লোভী হয়ে উঠে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ৭১ এর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং ৫ আগস্টের আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড পরিচালনার মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পাই। এতো অল্প সময়ে এতো বেশি সংখ্যক মানুষকে তারা হত্যা করেছে। পাক হানাদার বাহিনীও পালিয়ে ছিল, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাও পালিয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের এক শ্রেণির পোষা বুদ্ধিজীবী তৈরি হয়েছে। প্রকৃত বুদ্ধিজীবী তৈরি হয়নি। ছাত্র জনতার দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তোমাদের পাশে ছিলাম, আছি। এখন তোমরা ক্লাশ রুমে ফিরে যাও। জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে নিজেদের তৈরি কর, বৃহত্তর জীবনে ফিরে আসো, তোমাদের শক্তি দেশের জন্য প্রয়োজন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দলের কর্মীকে ইতিহাস, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। আর সমাজে আমরা তোষামোদী বৃদ্ধিজীবী চাই না। নতুন চেতনার বা সংস্কৃতির বুদ্ধিজীবী চাই।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার মুক্তিযুদ্ধকে একটি রাজনৈতিক দলের অর্জন বানিয়ে ফেলেছিলো। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছিল সকল শ্রেণি পেশার মানুষের যুদ্ধ। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে গেছে। আমাদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক রাষ্ট্র বা সমাজ গঠন করতে হবে। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।