• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
তারেক রহমান

আমার নামের সঙ্গে দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক ব্যবহার করবেন না

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৮:৫৭ পিএম

আমার নামের সঙ্গে দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক ব্যবহার করবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ার‌ম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমি একজন সহকর্মী হিসেবে অনুরোধ রইলো ও আপনাদের নেতা হিসেবে আমার- দয়া করে আমার নামের সঙ্গে আজকের পর থেকে দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক ব্যবহার করবেন না।

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ অনুরোধ করেন।

এ সময় ষড়যন্ত্র এখনো থেমে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে- দেশের কোথাও একটা ষড়যন্ত্র চলছে। তাই জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে, থাকতে হবে। একই সঙ্গে দেশ ও জনগণকে নিয়ে আমাদের যে লক্ষ্য, সেই ৩১ দফার প্রত্যকটি কথা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদেরকে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তখন জনগণ জবাব চাইতে শুরু করবে। জনপ্রতিনিধিরা জানবে যে তাদেরকে জনগণের কাছে ফিরে যেতে হবে। সেটি ভোটের জন্য হোক কিংবা জবাবদিহিতার জন্য হোক।

‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এই কর্মশালা হয়। এতে ঢাকা বিভাগের প্রত্যেকটি মহানগর, জেলা, উপজেলা মুল দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা কর্মশালায় অংশ নেন। বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির নেতারা দিনব্যাপি প্রশিক্ষণ দেন। এ সময় রাষ্টকাঠামো সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রশিক্ষকরা। এর আগে সকালে কর্মশালা উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, অনেকেই অনেক সংস্কারের কথা বলছে। রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা আমাদেরকে (নেতাকর্মী) মাঠে নিয়ে যেতে হবে। শুধু ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। দফায় উল্লেখ থাকা বিষয়গুলো প্রান্তিক পর্যায়ে পৌচ্ছাতে হবে। বিএনপির মুল দলের নেতৃত্বে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন মিলে ভাগে ভাগে গ্রামে থেকে ইউনিয়নে ছোট ছোট উঠান বৈঠকের প্রস্তুতিও নিতে হবে।

তিনি বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, আমরা যদি দল ও নেতাকর্মীদেরকে ঐক্য বজায় রাখতে পারি, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী চলতে পারি তাহলে বিএনপি সরকার গঠন করবে। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে নেতাকর্মীদের নেতৃত্বের ওপর। অতীতে যেভাবে আমরা ১৯ দফার আলোকে দেশ পরিচালনা করেছি, এর সঙ্গে আরো কিছু ধারা যোগ করে ৩১ দফা দিয়েছে। যার মাধ্যমে ভবিষৎতে আমরা দেশে পরিচালনা করতে চাই। প্রথমে ছিলো ২৭ দফা, পরবর্তীতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যেসব দল আমাদের সঙ্গে শরিক ছিলেন তাদের মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফা গঠিত হয়েছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বাংলাদেশে যতগুলো দল আছে তাদের সম্মিলিত চিন্তার ফসলই হচ্ছে ৩১ দফা।

তিতুমীর কলেজের ছাত্রদলের একনেতা বক্তব্যের উদ্ধৃত করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, তাহলে যে সংস্কারই করি না কেন কোনটি কাজে লাগবে না। রাজনৈতিক মুক্তি হচ্ছে জনগণের কাছে জবাবদিহি। যার যা ইচ্ছা করে যাবে, সেটি হবে না। সরকারি দল, বিরোধী দল, এমপি, মন্ত্রী যেই হোক, জনগণের কাছে এর জবাব দিতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করতে হলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভোটের মাধ্যমেই জবাবদিহিতা তৈরি হবে। যার জন্য আমাদের হাজারো সহকর্মী গুম, খুন হয়েছে। আমরা যুদ্ধ করেছি ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কাজেই যে কোনো মূল্যে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে।

তিনি বলেন, একটি রাজনীতি রুগ্ন হলে অর্থনীতি রুগ্ন হয়। রাজনীতি ও অর্থনীতি রুগ্ন হলে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব ব্যবস্থাই রুগ্ন হবে। মানুষ কোনো সুফল পাবে না। কাজেই প্রথম কাজ হচ্ছে দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, জবাবদিহিতাকে প্রতিষ্ঠিত করা। স্বৈরাচারের সময়ে দেশে কোনো জবাবদিহিতা ছিলো না, যার কারণে মানুষ গুম-খুন হয়েছে, নিশি রাতে ভোট হয়েছে, ডামি নির্বাচন হয়েছে। জবাবদিহিতা ছিল না বলেই প্রশাসনে ও বিচার বিভাগে অবস্থা অবনতি হয়েছে, দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এসব কিছু আমাদেরকে ঠিক করতে হলে অবশ্যই জবাবদিহিতাকে আমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটি সম্ভব সঠিক ভোট প্রয়োগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বেশি জোর দিতে হবে। শিক্ষকদের ওপর জোর দিতে হবে। মৌলিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হবে। দুর্নীতি নির্মূল করতে হলে প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি জনগণের স্বার্থের দিতে আমাদেরকে নজর দিতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁচ্ছে দিতে হবে।

কর্মসংস্থানের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশে এক কোটির বেশি বেকার রয়েছেন। আমাদের ৩১ দফার উল্লেখ আছে, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে তাদেরকে এক বছর পর্যন্ত সহায়তা করবো, কিংবা ভাতা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো। আমাদের প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ প্রবাসে আছেন। এদের মধ্যে অনেকই কর্মংস্থান সর্ম্পকে অভিজ্ঞ নয়, তাদের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের গার্মেন্টস ও রেমিটেন্সের বাইরে নতুন সেক্টর তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি করার করার সুযোগ আছে। আমি চেষ্টা করি, হয়তো অত দ্রুত পারবো না। অনেকাংশে সমস্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। রাতারাতি সব হবে না। দেশ সবার, প্রত্যেকের অবস্থান থেকে একটু একটু এগিয়ে আসি। প্রত্যেকে যদি চেষ্টা করি তাহলে ভালো কিছু করতে সক্ষম হবো।

এরআগে প্রশ্ন উত্তর পর্বে তারেক রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দু’বারের বেশি হতে পারবেন না, তবে সংসদ সদস্যের মেয়াদ নির্ধারণের বিষয়টি জনগণের ওপর নির্ভরশীল। যদি জনগণ কাউকে বিশ্বাস করে ও ভালোবাসে, তাহলে তিনি বারবার সংসদ সদস্য হতে পারবেন। না হলে তা সম্ভব হবে না।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুলের সভাপতিত্বে কর্মশালা সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষন কমিটির সদস্যসচিব এবিএম মোশাররফ হোসেন। ৩১ দফা নিয়ে দিনব্যাপি প্রশিক্ষণ দেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটি আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, প্রশিক্ষন কমিটির সদস্য -বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, কেন্দ্রীয় নেতা রাশিদা বেগম হীরা, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন এবং আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।

আর্কাইভ