প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বর্তমান সরকার শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে এই দেশটাকে দখল করে ফেলেছে। এখন জনগণের কথার কোনো দাম নেই, এখন তাদের কথায় জনগণকে চলতে হচ্ছে।
জিএম কাদের বলেন, আজকাল নির্বাচনে লোকজন যায় না। তাদের বক্তব্য আমরা গেলেই কি আর না গেলেই কি। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা সিন্দাবাদের দৈত্য হয়ে মানুষের কাঁধে বসে আছে। সামনের দিকে রাজনীতি আরও কঠিন হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা মানুষের পাশে থাকব নাকি সুযোগ-সুবিধার পক্ষে থাকব। জনগণের পক্ষে থাকতে হলে ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা থাকতে হবে। যারা সুযোগ-সুবিধার লোভে পড়েছে, এটা স্বল্প সময়ের জন্য। সামনের দিকে হয়ত তাদের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। যারা সরকারের দালালি করেছে, তাদের কিন্তু লাথি দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, জাতি আজ চরম সংকটময় সময় পার করছে। দিন যতই যাচ্ছে সংকটের গভিরতা ততই বাড়ছে। আগে আমরা যেটাকে সংকট বলেছি, এখন মনে হচ্ছে সেটা কোনো সংকটই ছিল না। দেশের বেশিরভাগ মানুষ আয় দিয়ে সংসার চালাতে পারছে না। জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। টাকার অবমূল্যায়নে ডলারের দাম বেড়ে গেছে, মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে সরকার আমদানি সংকোচন করেছে। এতে অনেক কল-কারখানা বন্ধ হয়ে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ কাজ পাচ্ছে না, খেতে পাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় একটি শ্রেণি ইউরোপের স্টাইলে জীবন-যাপন করছে। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিশাল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে তারা।
তিনি বলেন, বিশ্ব সংস্থাগুলোর জরিপে দেশে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে। একটি শ্রেণি আধাপেট খেয়ে বেঁচে আছে। অনেকে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না। এই বৈষম্যের জন্য মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা। দেশের মানুষ চেয়েছিল নিজেদের একটি দেশ হবে। প্রজাতন্ত্র মানে প্রজারাই দেশের মালিক। আমাদের দেশ আমরাই চালাব। সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। বৈষম্যহীন ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গড়ার মাধ্যমে জনগণের দেশ জনগণই চালাব। জনগণই সরকার গঠন করবে, জনগণের ইচ্ছামতো দেশ চলবে। ভাইয়ে ভাইয়ে বৈষম্য থেকে আমরা মুক্তি পাব। স্বাধীনতার সেই অর্জন নেই, দেশের ওপর সাধারণ মানুষের মালিকানা ছিনতাই হয়ে গেছে। এখন জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, কথা বলতে গেলেই নানান ধরনের সমস্যা। জনগণের কথা শোনারও যেন দরকার নেই।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য বহুবার দেশের মানুষ জীবন দিয়েছেন। পাকিস্তানিদের শোষণ ও বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতেই আমরা একটি দেশ চেয়েছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে, আর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল হাজার বছর আগে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করা মানে, আমরা রাষ্ট্রীয় কোনো কাজে অংশ নিতে পারব না। আমাদের শোষণ ও বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে পাকিস্তানিরা। তার প্রতিবাদেই আমাদের মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। শহিদ মিনারে ব্যানার লাগানো উচিত ছিল বৈষম্য নিপাত যাক, বৈষম্য সৃষ্টিকারীরা নিপাত যাক। বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্তমান সময়ের মতো এত বৈষম্য আর হয়নি। যারা সরকারি দল করে তারা সব ধরনের নিয়ম-নীতির বাইরে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে তারা। একটা শক্তিশালী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক দল বলে মনে হয় না। বৈষম্য সৃষ্টির জন্য কোনো পুরস্কার থাকলে বাংলাদেশ নোবেল প্রাইজ পেত। চাকরি, ব্যবসা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই প্রথম প্রশ্ন আপনি সরকারি দলের সদস্য কি না। দ্বিতীয় প্রশ্ন আপনার পরিবারের কেউ সরকারি দলের বাইরে অন্য কোনো দল করে কি না। যে রাষ্ট্রের জন্য মানুষ জীবন দিল সেই রাষ্ট্র আজ চলে গেছে একটি গোষ্ঠীর হাতে। যারা আওয়ামী লীগের বাইরে তারা অবাঞ্ছিত। অবস্থা এমন যেন... থাকলে দাস হিসেবে থাকেন, না থাকলে যান। কথা বলার অধিকার নেই কারো।
এ সময় জিএম কাদের আরও বলেন, রাজনীতিতে গুণগত একটি পরিবর্তন এসেছে। একটি শ্রেণি কিছু সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। তারা ভাবছে, সরকার তো জেকে বসেছে, থাকবেই। তাদের সঙ্গে লাইন দিয়ে যেটুকু পাওয়া যায়। আবার সরকার যাদের নিচ্ছে না, তাদের বাধ্য হয়ে সরকারের বিপক্ষে থাকতে হচ্ছে। তারা না চাইলেও জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হচ্ছে। আমাদের কিছু জায়গা দিয়েছে এটাই হচ্ছে সর্বনাশ। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিকে দেশে আর রাজনীতি থাকবে না, বিরাজনীতিকরণ চলছে। জনগণকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক সামছুল হক সামছুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সুলতান আহমেদ সেলিম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা, মহানগর উত্তরের নেতা, মহানগর উত্তরের ২৬ থানার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।