প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩, ১০:১৫ এএম
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় (৬৩) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এজন্য দলের শীর্ষ পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপও করছিলেন। এরই মধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর তাকে মাহমুদুল হাসান নামে এক ব্যক্তি ফোন করে নিজেকে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) ডিডি বলে পরিচয় দেন। পরে দীপক কুমারের মনোনয়ন নিশ্চিত করে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নেন।
ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানের এপিএস সৌরভ কুমার সাহার নাম ব্যবহার করে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। চক্রটির খপ্পরে পড়েন বেশকিছু সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী প্রত্যাশীও। এ ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা করেছেন সৌরভ কুমার।
এভাবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে থাকা বিভিন্ন আসনের অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী প্রত্যাশীদের টার্গেট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। চক্রের সদস্যরা নিজেদের কখনো সচিব, এনএসআই কর্মকর্তা, প্রভাবশালী মন্ত্রীর এপিএস, কখনো নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যের ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচয় দেয়। টার্গেট করা ব্যক্তিদের আশ্বস্ত করতে এবং বিশ্বস্ততা অর্জনে নানা ফন্দিও আঁটে চক্রটি। প্রতারিতদের তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের একাধিক সংসদ-সদস্য, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে থাকা মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। যাদের কেউ মনোনয়ন ঘোষণার আগে, আবার কেউ মনোনয়ন না পেয়ে বুঝতে পেরেছেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে একাধিক চক্র সক্রিয় হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশী কেউ কেউ তাদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। আমাদের কাছে যেসব ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, আমরা তাদের আইনি সহায়তা দিয়েছি। বেশ কয়েকজন প্রতারককে গ্রেফতারও করেছি। তিনি বলেন, প্রতারণার শিকার হয়েও মানসম্মানের ভয়ে অনেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করছেন না।
প্রতারণার শিকার ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় ৯ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া টাকা এখনো ফেরত পাইনি। শুনেছি গোয়েন্দা পুলিশ প্রতারককে গ্রেফতার করেছে এবং বেশকিছু টাকা উদ্ধার করেছে। কোর্টের মাধ্যমে টাকা ফেরত পাব বলে ডিবি জানিয়েছে।
ডিবির-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, গ্রেফতার হারুন পেশাদার প্রতারক। আরও অনেকের সঙ্গে সে প্রতারণা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে এপিএস সৌরভ কুমার সাহা যুগান্তরকে বলেন, আব্দুর রহমান সাহেবের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সংরক্ষিত আসনের নারী মনোনয়নপ্রত্যাশীকে প্রলোভন দেখিয়ে টাকা-পয়সা লেনদেন করছিল চক্রটি। এ বিষয়টি অনেক প্রার্থী আমাদের জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি মামলা করেছি। তিনি বলেন, আব্দুর রহমান সাহেব সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের মেম্বর নন। তবে তিনি স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন ও পৌরসভার চেয়ারম্যান) মনোনয়ন বোর্ডের মেম্বার।
ভুক্তভোগীদের একজন ৩১০ নম্বর সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য আনজুম সুলতানা শিমা। তিনি যুগান্তরকে জানান, তাকে ফোন করে মনোনয়ন পাইয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এজন্য খরচ দাবি করে। তবে তিনি কোনো টাকা দেননি বলে দাবি করেন।
পল্টন থানার মামলাটি তদন্ত করে একজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। গ্রেফতার ওই ব্যক্তির নাম আবু হুরায়রা ওরফে খালিদ হাসান। ডিবি জানিয়েছে, সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন নিশ্চিতের কথা বলে এক নারীর কাছে প্রথমে ১৫ কোটি পরে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে খালিদ। ওই নারীর কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছিল সে।