• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আন্দোলন জোরদার করতে নতুন কৌশলে বিরোধী দলগুলো

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩, ০৫:৫৩ পিএম

আন্দোলন জোরদার করতে নতুন কৌশলে বিরোধী দলগুলো

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলন এবার ভিন্নমাত্রায় নিতে চায় বিএনপি। আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে দুই ধাপে কর্মসূচি সফলের পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। নির্বাচনি তফশিল ঘিরে নেওয়া হয়েছে এ কৌশল। কিংস পার্টিতে বিএনপি নেতাকর্মী টানার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে দলটির নেতাকর্মীদের। তাই এখন রাজপথের আন্দোলনে মনোযোগ তাদের। আন্দোলন সফল করতে মাঠে শক্তি আছে-এমন দলকে এখন কাছে টানার চেষ্টা করছে বিএনপি।

এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা ভাবছে। এ নিয়ে দুদলের আলোচনাও চলছে। সব কিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই একসঙ্গে মাঠে নামতে পারে। এছাড়া নির্বাচন বর্জন করা ইসলামি ও বামসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা যোগাযোগ শুরু করেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দল ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে ইতোমধ্যে রাজি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটও সামনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চায়। কিন্তু গণতন্ত্র মঞ্চের দুটি শরিক দল জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তবে তারা এও বলেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যদি প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে।

এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ১২টি ইসলামি দলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও সরকারের পদত্যাগ ইস্যুতে মাঠে জোরালো কর্মসূচি চান। এর বাইরে ১১টি বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের জানিয়েছেন, তারা পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করবেন। এসব দল একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছে।

নীতিনির্ধারকরা আরও জানান, সামনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, সেই পরিস্থিতিই ভোট বর্জন করা সব দলকে এক মঞ্চে আনতে পারে। পাশাপাশি পেশাজীবীদেরও আন্দোলনে চায় বিএনপি হাইকমান্ড। এ নিয়ে শিক্ষক, চিকিৎসকসহ নানা পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে কথাও হচ্ছে।

এছাড়া রোববার থেকে জেলার নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক শুরু করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সব সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে ধারাবাহিক এ বৈঠক দু-একদিনের মধ্যেই শেষ হবে। সেখানে আন্দোলন সফলে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন হাইকমান্ড।

বহু বছর বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল জামায়াতে ইসলামী। ২০ দলীয় জোট ভাঙার পর জামায়াত এককভাবে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে কয়েকটি ইস্যুতে এ দুদলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। তবে বেশ কিছুদিন ধরে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত।

দলটির একাধিক নেতা জানান, পনেরো বছর ধরে বিএনপির বহু নেতাকর্মী হত্যা-গুম, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন। কিন্তু জামায়াতের নেতাকর্মীরাও কম নির্যাতিত নয়। হত্যা-গুম, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের শিকার অনেক নেতাকর্মী। এখন চূড়ান্ত আন্দোলন চলছে। পেছনে না তাকিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দুদলই ইতিবাচক। সামনে এর প্রতিফলন দেখা যাবে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘দুদলের আরও কাছাকাছি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। যখন হয়ে যাবে তখন তো বাস্তবে দেখা যাবে।’

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের কর্মসূচি রয়েছে। এতে গুম, খুন, গায়েবি মামলায় গ্রেফতার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার নেতাকর্মী ও নাগরিকদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে সরকারের নিপীড়ন, মানবাধিকার লংঘনের চিত্র তুলে ধরতে চায় তারা। ওইদিনের কর্মসূচি বিএনপি ও জামায়াত একসঙ্গে করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।

তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপির নেতারা জানান, আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে দুই ধাপের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। প্রথম ধাপের আন্দোলন গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে। যা চলবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তফশিল অনুযায়ী ১৭ ডিসেম্বর হলো আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর মধ্যে হরতাল ও অবরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে নানা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। ১৮ ডিসেম্বর শুরু হয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলন।

এ ধাপের আন্দোলন হবে ‘ডু অর ডাই’ মিশন নিয়ে। এজন্য দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে মাঠে নামানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। ভোটের সাত থেকে ১০ দিন আগে শুরু হবে চূড়ান্ত আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি। বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা মনে করছেন, নৌকার প্রার্থী, স্বতন্ত্র ও মনোনয়নবঞ্চিতদের ক্ষোভ থেকে ভোটে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাপ বাড়বে। এমনকি বিদেশি নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। ওই সময়ে একযোগে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো মাঠে নামার সম্ভাবনা রয়েছে।

নেতারা মনে করছেন, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর সারা দেশে যে ধরপাকড় শুরু হয়েছে, সেই ধাক্কা বিএনপি অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। বাড়িঘরে তল্লাশি ও মামলা-হামলার ভীতি তেমন প্রভাব ফেলছে না; সাহস নিয়ে নেতাকর্মীরা বেরিয়ে আসছেন, রাজপথে উপস্থিতি বাড়ছে। যেসব জেলায় এতদিন কোনো কর্মসূচি পালন হয়নি, সেখানেও অল্পবিস্তর মিছিল-পিকেটিং হচ্ছে। তাই সামনের আন্দোলন ভিন্ন মাত্রা পাবে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীকে মাঠে নামানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন দলের হাইকমান্ড।

আন্দোলনে মাঠে থাকার জন্য দলের উচ্চপর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দাবি আদায়ের ফয়সালা রাজপথেই করতে হবে; গ্রেফতার হলে রাজপথ থেকেই হতে হবে। এছাড়া এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব বিভাগে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি জেলা, মহানগর, থানা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নির্দেশনা দেবে। যেসব সাংগঠনিক ইউনিট ঢিলেঢালা অবস্থায় থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে অনেক ইউনিট কমিটির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন।

খুলনা বিভাগ সমন্বয়ের দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সহসভাপতি বলেন, এই বিভাগে নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। পুলিশের ধরপাকড় ও আওয়ামী লীগের হামলায় তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তাদের সবাইকে এলাকায় ফিরতে বলা হয়েছে। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদ বলেন, ‘ঢাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অবস্থানের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে নেতাকর্মী মাঠে নামছেন। প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন। এরপরও আন্দোলন সফল করতে তারা মাঠে নামছেন। আগামীতে এই আন্দোলন আরও তীব্র হবে।’

জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘আর পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মী মিথ্যা ও গায়েবি মামলার আসামি। এই নেতাকর্মীরা যদি মাঠে নামে, তাহলে সরকার একদিনও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ