• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‘একতরফা নির্বাচনী ট্রেনের এক্সিডেন্ট অনিবার্য’ : রিজভী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৩, ০৩:১৬ এএম

‘একতরফা নির্বাচনী ট্রেনের এক্সিডেন্ট অনিবার্য’ : রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশ-বিদেশের সবাই শেখ হাসিনার আসন্ন অভিনব ভোট ডাকাতির ফর্মূলা আগেভাগেই জেনে গেছে। সহযোগী নির্বাচন কমিশন রকিব ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জনকে বিজয়ী করে রেকর্ড গড়েছেন। হুদা কমিশন ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ব্যালটে সিল দিয়ে ভোট ডাকাতির অভূতপূর্ব রেকর্ড তৈরি করেছে বিশ্বে। এবার ফ্যাসিবাদের দোসর কাজী হাবিবুল আওয়াল সরকারের ‘চুজ অ্যান্ড পিক’ করা হবে ভোটের রাতে ফল ঘোষণার মাধ্যমে।

তবে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা যেসব কুইন্স পার্টি-তৃণভোজী পার্টি-ডামি পার্টি-খুদ-কুঁড়ো পার্টি এবং বিভিন্ন দল থেকে অচ্ছুত লোকজন হায়ার করে লোকজন নিয়ে এসে সমেত ডাকাতির নির্বাচনী ট্রেনে চড়েছেন সেই ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে দেবে না মুক্তিকামী জনতা। সুমতি হলে তার আগেই সরকারের ফ্যাসিবাদ মডেলের নির্বাচনী মডেল থামিয়ে জনগণের দাবি মেনে নিন। অন্যথায় এক্সিডেন্ট অথবা পতন অনিবার্য।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক শক্তি এবং দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রত্যাশিত একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো আরেকটি ভোট ডাকাতির উৎসবের পথ বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশে যে তথাকথিত নির্বাচনের পাঁয়তারা চলছে তা ভোটারদের নয়, জনগণের জন্য নয়, এটা হতে চলেছে সরকারের আরেকটি কদর্য রাজ্যাভিষেকের উৎসব।

শুক্রবার ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তাদের নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করছে’। কিন্তু তাদের ট্রেনের সব যাত্রী তো নৌকা আর আওয়ামী লীগের গণবিচ্ছিন্ন লোকজন। নগদ টাকায় ক্রয় করা কতিপয় উচ্ছিস্টভোগী বেইমান গণশত্রুকে ছলেবলে কৌশলে ভাগিয়ে নিয়ে সঙ্গে ট্রেনে তুলেছে। ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ভোটের খোয়াবে যারা এলাকায় গেলে ভোটবঞ্চিত মানুষের গণধোলাইয়ের শিকার হতে পারে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ ইউরোপ-আমেরিকা নিশ্চিত হয়েছে যে, আরেকটি তামাশার পাতানো নির্বাচনরঙ্গ মঞ্চস্থ করতে চলেছে এই সরকার। এ কারণে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে এই ভুয়া নির্বাচনে তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। অন্য সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

রিজভী বলেন, গোটা বিশ্ব যখন বাংলাদেশের ভোটাধিকার বঞ্চিত, গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে সরব তখন গত ১৫ বছর ধরে বিনা ভোটে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা দখল করে থাকা আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে রাশিয়া, চীন ও ভারত। রাশিয়া-চীনে তো গণতন্ত্র নেই। আমাদের কাছের প্রতিবেশী ভারত, যে রাষ্ট্রটি গণতান্ত্রিক এবং গণতন্ত্রের ঐতিহ্য আছে। সেই ভারত সরকার সরাসরি কীভাবে একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়? তারা মুখে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে আছে বললেও তারা ১৮ কোটি জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যা অতীব দুঃখজনক। এই ভারতের সমর্থন শক্তিতে আওয়ামী লীগ দেশটাকে গিলে ফেলেছে। ১৫টা বছর ধরে কেউ ভোট দিতে পারছে না- লক্ষ মানুষ কারাবন্দি- কোটি কোটি মানুষ ঘরে থাকতে পারে না- প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন ডলার লুটে নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, খ্যাতিমান দ্য ডিপ্লোমেটের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্যের মর্যাদা তুলে ধরেছিলেন, এমনকি নিজের দেশকে ‘গণতন্ত্রের জননী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু ভারতের পূর্বের প্রতিবেশি বাংলাদেশে মোদি সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনকে সমর্থন করছে। ভারত বাংলাদেশে নিজের পছন্দ নিয়ে খেলেছে এবং কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে তার ফেভারিট হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের দৃঢ় সমর্থন দলটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে এবং মানবাধিকার কর্মীদের (দায়মুক্তিসহ কঠোর) আইনের অধীনে জেলে নিতে উৎসাহিত করেছে। যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে সেগুলোকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, অগণতান্ত্রিক কার্যকারিতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ভারতীয় সমর্থন বিস্ময়কর এবং বেমানান।

তিনি আরও বলেন, ভারতের সরকার বাংলাদেশের জনগণকে তার প্রতিপক্ষ করেছে কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ভারতের জনগণকে বন্ধুসুলভ বলে মনে করে। কর্তৃত্ববাদী দেশ রাশিয়া এই সরকারকে সমর্থন করতে পারে। কারণ রাশিয়াতে কোনো গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও নেই। কিন্তু ভারতের সরকার বাংলাদেশের সরকারকে সমর্থন করাটা গভীর রহস্যজনক এবং সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি ভারতের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আপনি বাংলাদেশে জনগণের বন্ধু হতে পারবেন না।

রিজভী বলেন, সরকার বিএনপিকে ভাঙার এবং বিএনপি জোট থেকে কিছু দলকে লোভ দেখিয়ে প্রহসনের নির্বাচনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিছু নিকৃষ্ট লোভী ছাড়া কেউ সরকারের এই হীন কর্মের সঙ্গী হয়নি। সরকার ভূইফোঁড় দলগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টায় প্রমাণ হয়েছে তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে। এই একতরফা নির্বাচন তাদের বাঁচাতে পারবে না, তাদের নির্বাসনে পাঠাবে। যারা লোভে পড়ে সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা রাজনীতির আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হবেন। সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে তাদের বেইমান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া দেশে বিদেশে কোথাও জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক হিসেবে বিবেচিত হবে না।

তিনি বলেন, বিএনপিকে জাতীয় নির্বাচনকে দূরে রাখতে বিএনপির নেতাকর্মীদের পেছনে সুকৌশলে পুলিশের ইউনিফর্ম পরিয়ে চিহ্নিত মাফিয়া চক্রকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার গত একযুগে সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখেরও বেশি মামলা দিয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব ভুয়া মামলায় ৫০ লাখের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অনাচার বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগী সঙ্গী রাজাকার বাহিনীর চরিত্রে গড়ে ওঠা আওয়ামী হানাদার বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নে সারা দেশে বিএনপির দুই কোটির বেশি নেতাকর্মী দিনের পর দিন ঘরছাড়া।

রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনের চেয়েও বিচার বিভাগের অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর। মিথ্যা কিংবা গায়েবি মামলা দিয়ে পুলিশ যেভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফাঁসাচ্ছে একইভাবে কতিপয় বিচারকও বিরোধী দলকে ফাঁসাতে আদালতকে ব্যবহার করছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে এখন শুধু গায়েবি মামলাই নয়, গায়েবি বিচারও চলছে। বিএনপি নেতাকর্মী যারা কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন তাদেরও কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এর মানে, গায়েবি মামলার যেমন কোনো তদন্ত হচ্ছে না অপরদিকে আদালতে মামলার কোনো শুনানিও হচ্ছে না।

সারা দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের মোট গ্রেপ্তার ৩১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ১২টি, মোট আসামি ১৩১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট আহত ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মৃত্যু ২ জন। গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার ৬ হাজার ৩৯০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ২১৮টি, মোট আসামি ২৫২০০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট আহত ৮৫৭ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মোট মৃত্যু ৬ জন।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ